মহেশখালীতে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ
কক্সবাজারের উত্তর-পশ্চিমে চকরিয়া উপজেলা পেরিয়ে মহেশখালী দ্বীপ। দ্বীপের তিন দিকে বঙ্গোপসাগর, একদিকে কোহেলিয়া নদী। নদীর ওপর বদরখালী সেতু। সেতুটি দ্বীপকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বেঁধেছে।
মহেশখালীর গা-লাগোয়া অনুদ্বীপ মাতারবাড়ীতে সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মহেশখালী-মাতারবাড়ীর পুরো চেহারা পাল্টে যাচ্ছে—এসব কথা শুনে গত ডিসেম্বর ও মে মাসে দ্বীপের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলাম। সেতু পেরিয়ে অল্প দূরে চালিয়াতলী বাজার। আমার হাতে কাগজ-কলম, সঙ্গীর হাতে ক্যামেরা। চায়ের দোকানে বসতেই মাঝবয়সী একজন দৌড়ে এসে প্রশ্ন করলেন, ‘আপনারা কি সাংবাদিক?’
‘হ্যাঁ’ ঝোঁকে মাথা নাড়তেই ভদ্রলোক পাশে বসে পড়লেন। হাত নাড়িয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে ক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে আঞ্চলিক ভাষায় গড়গড়িয়ে বলে চললেন, ‘আমরা এই দ্বীপের আদি বাসিন্দা, জাতে নাথ সম্প্রদায়ের। আমাদের দ্বীপে আমরা থাকতে পারছি না। বড় বড় রাস্তা হচ্ছে, পাহাড় কেটে সমান করা হচ্ছে। বন কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। আমাদের বাড়িঘর সব চলে যাচ্ছে।’
উত্তেজিত মানুষটির নাম সুভাষ নাথ। হাজারখানেক বছর আগে পূর্ব ভারতে নাথ সাধনধারা ও সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একজন বৌদ্ধ আচার্য। মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরের বয়স কয়েক শ বছর। আদি বাসিন্দার দাবিটি সুতরাং জোরালো।
সুভাষের পায়ে পায়ে এলেন নুরুল ইসলাম, আকরাম হোসেনসহ আরও কয়েকজন। তাঁদের কথায় একই ক্ষোভ। এসব মানুষের জীবিকা পান, লবণ, বাগদা চিংড়ি, ভেটকি মাছ বা কাঁকড়া চাষ। কিন্তু এখন দ্বীপজুড়ে চলছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। চাষের জমি, বাসের জমি—দুই-ই সরকার অধিগ্রহণ করছে।
সুভাষ থাকেন মহেশখালীর উত্তর নলবিলা গ্রামের বড়ুয়াপাড়ায়। রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য তাঁর এবং আত্মীয়-পরিজনের ২৪টি ভিটা সরকার অধিগ্রহণ করবে। একটি বেসরকারি সংস্থা পরিবারগুলোর তালিকা করেছে, বলেছে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। দ্বীপেরই একপাশে তাঁদের পুনর্বাসিত করা হবে। এঁরা কিন্তু ভিটা ছাড়তে চান না।
মহেশখালী উপজেলার বড় অংশটিই এই দ্বীপ। দ্বীপজুড়ে বড় রাস্তার দুই পাশে চোখে পড়ে বাগদা, ভেটকি ও কাঁকড়ার ঘের, পানের বরজ আর লবণখেত। বাংলাদেশ লবণ প্রস্তুতকারক সমিতির হিসাব অনুযায়ী, দেশে বছরে লবণের চাহিদা ১৭ লাখ টন। এর প্রায় অর্ধেক আসে মহেশখালী থেকে। বাদবাকি লবণও আসে কক্সবাজার থেকেই।
বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা অঞ্চলটিতে মহেশখালী চ্যানেল, বাঁকখালী, মাতামুহুরি আর কোহেলিয়া নদীর পানি লবণাক্ত। তা দিয়ে বছরে ছয় মাস চলে লবণ উৎপাদন আর বাকি ছয় মাস হয় মাছ-কাঁকড়ার চাষ। মহেশখালীর মিষ্টি পান বিখ্যাত। বেশির ভাগই বিদেশে যায়। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থার (বিসিক) হিসাবে, বছরে রপ্তানি হয় প্রায় আড়াই শ কোটি টাকার পান।
কিন্তু যেতে যেতে দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। দ্বীপের উত্তরবিলা পাহাড়ের সারি একসময় ঢাকা ছিল ঘন বনে। সে এলাকা এখন ট্রাক আর আজদাহা সব খননযন্ত্রে সরগরম। পাহাড় কেটে রাস্তা হচ্ছে, ভবন উঠছে। অজগরের মতো গ্যাসের পাইপ স্তূপ হয়ে আছে। দেশের একমাত্র এই পাহাড়ি দ্বীপবনে হচ্ছেটা কী?
উন্নয়নের মহাযজ্ঞ
দ্বীপে জমি আছে ৮৬ হাজার একর। গত নভেম্বরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সাড়ে ১৯ হাজার একর জমি অধিগ্রহণের হিসাব দিয়েছিল। এর অর্ধেকের বেশি বেজার জন্য। আর অর্ধেকের কিছু কম জমি নিচ্ছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত চারটি সংস্থা। গত জুনের প্রথম সপ্তাহে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেজার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে বেজার অধিগৃহীত জমিই প্রায় তিন গুণ বেড়ে ২৭ হাজার একর হয়েছে। এসব জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সরকারের বিদ্যুৎবিষয়ক মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৪১ সাল নাগাদ সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে মহেশখালীতে—কয়লাভিত্তিক ১২টি, বায়ুভিত্তিক ১টি ও সৌরশক্তির ২টি। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) একটি স্থল টার্মিনাল হবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি এখানেই তৈরি করছে দেশের সবচেয়ে বড় তেলের ডিপো। পেট্রোবাংলার একটি প্রতিষ্ঠান (জিটিসিএল) নির্মাণ করছে মহেশখালী ও আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন লাইন।
দ্বীপটির এক-দশমাংশের কিছু বেশি এলাকাজুড়ে বেজা পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করছে। তিনটির জন্য জমি অধিগ্রহণ চলছে। মূলত ভারী শিল্পকারখানা হবে। এসব কারখানার কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের থাকার জন্য হবে আবাসিক এলাকা।
প্রকল্পগুলোতে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, কুয়েত ও থাইল্যান্ড থেকে বিনিয়োগ আসছে। জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার আওতায় বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি) উদ্যোগের আওতায় ইতিমধ্যে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে বড় দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়েছে। একটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ২০২৪ সালে সেটা চালু করার পরিকল্পনা আছে।
কিন্তু এত কিছু মহেশখালীতেই হচ্ছে কেন? বেজার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনাময় আগামীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকার একটি এটি। সেখানে উপকূলের খুব কাছে সাগর ১৮ মিটার পর্যন্ত গভীর। তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরে এই গভীরতা ১০ মিটারের নিচে, মোংলায় ৭ থেকে ৮ মিটার। সে দুটি বন্দরে বড় জাহাজগুলো সরাসরি ভিড়তে পারে না।
পবন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, নির্মীয়মাণ মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যন্ত্রপাতি ও কয়লা আমদানি সহজ হবে। ভারী শিল্পে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিও সহজ হবে। আর শিল্পকারখানায় কর্মসংস্থান হলে মানুষ বন কাটবে না, পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বড় অবকাঠামো তৈরি করতে গেলে পরিবেশের কিছুটা ক্ষতি হবে। তবে উন্নয়নও জরুরি। প্রতিটি প্রকল্পকে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) করে কাজে নামতে হবে। পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে তথ্য অধিকার আইনে বিপিসির প্রকল্পটির ইআইএর কপি চেয়েছিল। মন্ত্রণালয় বেলার চাহিদামতো অন্যান্য কাগজপত্র ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের কপি দিয়েছে। কিন্তু সম্ভাব্য অপব্যবহারের ঝুঁকির কথা বলে ইআইএ প্রতিবেদনের কপি দেয়নি।
শুধু মহেশখালী নয়, কাছাকাছির মধ্যে কুতুবদিয়া ও সোনাদিয়া দ্বীপেও ব্যাপক আকারে শিল্প বা পর্যটনের তোড়জোড় চলছে। পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, মহেশখালী একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপবন, যেখানে মিঠা-লোনা দুই রকম পানির জগৎই আছে। এই উপকূলীয় এলাকা প্রাণবৈচিত্র্যের অনন্য আধার। এখানে এত শিল্পের ভিড় না করলে ভালো হতো।
মহেশখালী দ্বীপে সব কটি প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রাথমিকভাবে ধরা হয়েছে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা। অন্যান্য দ্বীপ মিলিয়ে এ অঞ্চলে বিনিয়োগ আরও অনেক বেশি হবে। গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে উন্নয়নের জন্য বড় প্রকল্প দরকার। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় মানুষের অধিকারকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না। প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি ঘটছে। স্থান নির্বাচনও ঝুঁকিমুক্ত হচ্ছে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টার মতে, সরকার ভাবে, আগে প্রকল্পটি শেষ হোক। তারপর পরিবেশ-প্রকৃতি, স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকাসহ অন্যান্য অধিকার ও জীববৈচিত্র্যের বিষয়টি দেখা যাবে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে বড় প্রকল্পের শুরু থেকেই এসব বিবেচনায় রাখা হয়। নাহলে দিন শেষে অবস্থানের ঝুঁকি ছাড়াও প্রকল্প নিয়ে অন্যান্য ঝামেলা হয়, খরচ বাড়ে। আর পরিবেশের বারোটা বাজে। মহেশখালী অঞ্চলে একসঙ্গে অনেক বড় প্রকল্প হচ্ছে। এসব ঝুঁকিও তাই অনেক বেশি।
পাহাড় কাটা
নলবিলা বাজার পেরিয়ে দুই-আড়াই কিলোমিটার গেলে ডান দিকে বিশাল সড়ক। সেখানে একের পর এক ট্রাক ঢুকছে। স্থানীয় লোকজন বলেন, দিনে এক শর বেশি ট্রাক যায়। ভেতর দিকে ইস্টার্ন রিফাইনারির তেলের ডিপো এবং সাগর থেকে সরাসরি তেল আনার পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে।
সড়কটি তৈরি হয়েছে পাশের পাহাড় কেটে, তার মাটি দিয়ে। স্থানীয় একজন রীতিমতো টেনে নিয়ে গিয়ে বললেন, ‘পাহাড় কাটা কী দেখছেন, সামনে আসেন।’ মূল সড়কের বাঁয়ে সরু পাহাড়ি পথে ২০০ মিটার এগোতেই চোখে পড়ল প্রায় অর্ধেক কেটে নেওয়া বড় পাহাড়ের সারি। ৮-১০টি দৈত্যাকৃতির খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে বাকি অংশ কাটা চলছে।
পথপ্রদর্শক বাসিন্দাটি বলেন, এটাই তেলের ডিপোর জায়গা। আধকাটা পাহাড়টির চারপাশ এখনো ঘন বনে আবৃত। পাহাড় কাটার কাজ তদারকি করছেন চীনা ঠিকাদারেরা। কাগজপত্রে দেখা যায়, আইনে প্রদত্ত জরুরি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছাড় পাওয়ার সুবাদে সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে পাহাড় কাটছে সরকারি সংস্থাগুলোই।
পাহাড়ের এক পাশে কয়েকটি ঘর টিকে আছে। টিনের দেয়ালে অধিগ্রহণের লাল নিশান গাড়া। বাসিন্দারা বললেন, তাঁদের দ্রুত ঘর ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগদলীয় চেয়ারম্যান ও তাঁর অনুসারীরা চাপ দিচ্ছেন। একজন বাসিন্দা বলেন, তাঁর সোমত্ত মেয়েকে রাতে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ প্রতিবেদক চেয়ারম্যানকে কয়েক দিন ফোন করেছেন। তিনি ধরেননি।
তেলের ডিপোটি হচ্ছে ১৯১ একর জমিতে। পুরোটাই সংরক্ষিত বন। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বন বিভাগ প্রথমে গাছ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিপূরণ ধরেছিল ২৭৭ কোটি টাকা। পরে বিশেষজ্ঞ কমিটি এটাকে ৪৭ কোটি টাকাতে নামায়।
কিন্তু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ প্রথমে চার কোটির কিছু বেশি, শেষে এক কোটির কিছু বেশি টাকা ক্ষতিপূরণ ধরে। সেটাই তারা দিচ্ছে, তিন কিস্তিতে। বিপিসির চেয়ারম্যান মো. শামসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বন বিভাগের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল, যত গাছ কাটা পড়বে তার পাঁচ গুণ লাগানো হবে। বিপিসি যেহেতু সেটা করবে, তাই ক্ষতিপূরণের টাকা কমেছে।
উচ্ছেদের চাপ
দ্বীপের এক প্রান্তে লেগে থাকা মাতারবাড়ীর দিকে যেতে দুই পাশে লবণ চাষের জমি আর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণ করা জমি। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন গেছে লবণখেতের ওপর দিয়ে। জোয়ার ঠেকানোর জন্য অধিগ্রহণ করা জমির সীমানায় বাঁধের মতো দেওয়া। ফলে সংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে।
পাশেই কোহেলিয়া নদী। নির্মাণকাজসহ অন্যান্য কাজের নানা রকম কঠিন বর্জ্য এই নদীতে ফেলা হচ্ছে। জমি উঁচু করার পর উদ্বৃত্ত মাটি আর বালু নদীতে যাচ্ছে। নদী নাব্যতা হারাচ্ছে।
নির্মীয়মাণ মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘেঁষে ছোট্ট একটি নতুন বাজার। চা খেতে খেতে কথা হলো স্থানীয় তিন যুবকের সঙ্গে। তাঁদের সবার লবণখেত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে। মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ৩০ শতাংশ ঘুষ দিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছিলেন। সে টাকায় কাতারে গিয়ে ধোঁকা খেয়ে ফিরে এসেছেন। চায়ের দোকানদার আবিদ হোসেন বললেন, মানুষ আস্তে আস্তে এলাকা ছাড়ছেন। অনেকে সীতাকুণ্ডে জাহাজভাঙা শিল্পের শ্রমিক হচ্ছেন।
ক্ষতিপূরণ পেতে জেলা প্রশাসনের ভূমি অফিসের লোকজনকে ঘুষ দিতে হয়েছে, এ অভিযোগ সবখানেই শোনা গেল। এর আগে এই দায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার শাস্তি হয়েছে, কিন্তু এটা বন্ধ হয়নি। আরেক অভিযোগ, প্রতি পরিবার থেকে একজনকে চাকরি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সবখানে তা হচ্ছে না।
এর আগে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। তখন সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে প্রায় ২০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। বিচার চলছে। জেলা প্রশাসক জামিনে আছেন।
ফিরতি পথে শেষ কথা
চকরিয়া ফিরতে চালিয়াতলী বাজার পেরোতে গিয়ে থামতে হলো। সেই চায়ের দোকানে সুভাষ নাথসহ আরও কয়েকজন অপেক্ষা করছিলেন। একজন বললেন: ‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই দ্বীপে বসতির পত্তন করেছে।’ আর সুভাষ বললেন, ‘আদিনাথ মন্দিরে প্রতিবছর লাখো মানুষ আসে প্রার্থনা করতে। এই সবকিছু কি উন্নয়নের কাজে চলে যাবে? আমাদের ধর্ম, জীবন-জীবিকা টিকিয়ে রাখা কি উন্নয়ন না?’
ইতিমধ্যে মোবাইল ফোন হাতে, মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে কয়েকজন যুবক এই প্রতিবেদকের মাইক্রোবাস প্রায় ঘিরে ধরলেন। নাথ সম্প্রদায়ের একজন নিচু গলায় বললেন, ‘যান, যান, তাড়াতাড়ি যান! ঠিকাদারদের লোকজন ঝামেলা করতে পারে।’