মহাখালীর করোনা হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে
রোগীর চাপ বেড়েছে রাজধানীর মহাখালীর ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে। এখন সেখানে ১২৪ জন রোগী আইসিইউ ও জরুরি বিভাগে ভর্তি আছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৭৫ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩ জন। মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব কথা জানিয়েছে। আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সাংবাদিকদের এসব কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তবে উদ্বোধনের চার দিন পরও হাসপাতালটিতে জনবলের সংকট আছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, রোগীর চাপ অনেক বেশি আছে। ১২৪ রোগী আইসিইউ ও ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। আজ আরেকটি জরুরি ওয়ার্ড বাড়ানো হয়েছে। এটি দুপুর থেকে চালু হবে।
ব্রিগেডিয়ার নাসির উদ্দিন বলেন, আইসিইউয়ের ক্যাপাসিটি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো দিয়ে পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা একটা বিরাট চাপের বিষয়। ঢাকার বাইরে থেকেও রোগীর চাপ আছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে ৩০০ রোগী চিকিৎসার জন্য এসেছেন। সকাল আটটা পর্যন্ত ৪৯ জন ভর্তি ছিলেন। অবস্থা সংকটাপন্ন বলে আইসিইউতে ৭৫ জন ভর্তি আছেন। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।
হাসপাতালটির পরিচালক বলেছেন, যাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালে আছেন, তাঁরা চলে এলে দুই-তিন দিনের মধ্যে পুরো হাসপাতাল ভরে যাবে। এরপর যাঁরা অসুস্থ হবেন, তাঁদের নেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। ৬০ বছরের বেশি ব্যক্তিরা মারা যাচ্ছেন। দুজনের বয়স অবশ্য ৫০–এর নিচে।
গত রোববার হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার এই হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চারজন মারা যান। এর আগে রবি ও সোমবার নয়জন মারা গেছেন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩ জন।
হাসপাতালে জনবলে সংকট আছে জানিয়ে এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, পর্যাপ্ত জনবল দরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে। জনবল সংকটের জন্য কিছুটা অসুবিধা আছে। ৫০ শয্যায় আইসিইউ চালাব এমন ধরেই জনবল ছিল এ হাসপাতালের। অথচ দ্বিতীয় দিনে ৭৫ জনে আইসিইউ ভরে গেছে। তিনি বলেন, হাসপাতাল পরিচালনার জন্য পাঁচ শ চিকিৎসক, ৭০০ নার্স ও ৭০০ স্টাফ জনবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া হয়েছে। এক হাজার করোনা রোগী সামাল দিতে অনেক জনবল লাগবে। ১৫ দিন পর বর্তমান জনবল আইসোলেশনে যাবে। তখন আরও জনবল লাগবে। জনবল না পেলে সমস্যা অবশ্যই হবে। আজকে আরও কিছু জনবল যুক্ত হচ্ছে।
এক হাজার শয্যা পুরোপুরি চালু নয় উল্লেখ করে নাসির উদ্দিন বলেন, ২৯ এপ্রিলের মধ্যে বাকি কাজ হয়ে যাবে। অক্সিজেন সিলিন্ডার, কনসেনট্রেটর সুবিধাওয়ালা রুমগুলো পড়ে আছে। আইসিইউ থেকে একটু ভালো হলে রোগীদের ওখানে পাঠানো হবে।
করোনা চিকিৎসায় বিশেষায়িত বৃহত্তম এ হাসপাতালটির কার্যক্রম বেসামরিক ও সামরিক কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তবে হাসপাতালটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশের যেকোনো অঞ্চলের করোনা আক্রান্ত বা করোনা উপসর্গ রয়েছে এমন রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
আইসিইউ সুবিধাসহ ২১২টি শয্যা আছে। এর মধ্যে ১১২টি আইসিইউ এবং ১০০টি এইচডিইউ (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট)। বিশেষ সুবিধাসহ ২৫০টি শয্যা আছে। এই শয্যাগুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন দেওয়ার এবং হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার সুবিধা আছে। এখানে ডেডিকেটেড ৪৮৮টি শয্যা আছে। এই শয্যাগুলোতে সিলিন্ডার ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকছে। আর ডায়ালাইসিস সুবিধাসহ ৪টি শয্যা আছে।
মহাখালীর যে ভবনে এই হাসপাতালটি স্থাপন করা হয়েছে, সেটি তৈরি করা হয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাঁচাবাজার তৈরির জন্য। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করলে ছয়তলা ভবনটিতে হাসপাতাল করা হয়।
হাসপাতালে দেখা হয় ৬৫ বছর বয়সী আঞ্জুবান আরার সঙ্গে। তাঁর বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরাতে। বেলা একটার দিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। মহাখালীর হাসপাতালে তিন দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর আগে মিটফোর্ড হাসপাতালে দুই দিন ছিলেন। আজ বাড়ি ফিরছেন। আঞ্জুবান বলছিলেন, এ হাসপাতালের চিকিৎসা সন্তোষজনক।