‘বেলি’র কোলজুড়ে দুই শাবক
রাজধানীর মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় মা বাঘ ‘বেলি’ জন্ম দিয়েছে দুটি শাবক। গত ৫ এপ্রিল এই দুই শাবকের জন্ম হয়। জাতীয় চিড়িয়াখানার শীর্ষ দুই কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নাম না প্রকাশ করার শর্তে তাঁরা বলেন, গত ৫ এপ্রিল মা বাঘ বেলি এই দুটি বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। এ নিয়ে বেলি তৃতীয়বারের মতো বাচ্চা দিল।
বাচ্চা দুটির মধ্যে একটির গায়ের রং লালচে বা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো।
আরেকটি বাচ্চার গায়ের রং একটু সাদা। জানা গেছে, এখনো বাঘের এই দুই শাবকের নাম রাখা হয়নি। বাচ্চা দুটির লিঙ্গ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাচ্চা দুটি দুধও খাচ্ছে, সঙ্গে অল্প অল্প মাংসও খাচ্ছে। দেড় সপ্তাহ হলো শাবক দুটিকে ছোট ছোট টুকরা করে অল্প পরিমাণে মাংস দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, খাঁচার ভেতরে ছোট একটি ঘরে মাসহ বাঘের দুটি শাবক রাখা হয়েছে। পুরুষ বাঘটিকে পাশের আলাদা খাঁচায় রাখা হয়েছে। দর্শনার্থীরা যেন এগুলোকে বিরক্ত করতে না পারে, সে জন্য আলাদাভাবে নেট দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, খাবার দেওয়ার সময় ছোট ঘরটি খুলে দেওয়া হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে খাঁচার ভেতরের ফাঁকা জায়গায় শাবক দুটি খুনসুটি শুরু করে।
নতুন জন্ম নেওয়া বাচ্চা দুটি ছাড়া জাতীয় চিড়িয়াখানায় আটটি বাঘ রয়েছে।
আছে শঙ্কাও
গত বছরও বেলির কোলজুড়ে এসেছিল দুটি শাবক। তবে জন্মের পাঁচ মাস পর এই শাবক দুটি মাছিবাহিত ট্রাইপেনোসোমা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় চিড়িয়াখানায় ২০১৬ সালের পর বাঘের কোনো বাচ্চা বাঁচেনি।
জানা যায়, ২০১৬ সালে জাতীয় চিড়িয়াখানায় টোকিও ও মৈত্রী নামে বাঘের দুটি শাবক জন্ম নেয়। মৈত্রী জন্মের প্রায় ছয় মাস পর এবং টোকিও প্রায় ১০ মাস পর মারা যায়। আবার এই চিড়িয়াখানায় ২০২১ সালের ২৬ মে টগর–বেলি দম্পতির ঘরে দুর্জয় ও অবন্তিকা নামে দুটি বাঘশাবক জন্ম নেয়। জন্মের ছয় মাস পর ওই বছরেরই নভেম্বরে সেই দুটি বাচ্চাও মারা যায়।
এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার সাবেক পরিচালক মো. আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৬ ও ২০২১ সালে বাঘের চারটি বাচ্চাই ট্রাইপেনোসোমা রোগে মারা যায়। এই রোগ মাছির কামড়ে ছড়ায়।
আবদুল লতিফ বলেন, ‘মাছিবাহিত হওয়ায় ট্রাইপেনোসোমা রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকা কঠিন। আমি থাকার সময় নেট (জাল) দিয়ে ঘিরে রেখেছিলাম। মাছির যেখানে জন্ম, সে জায়গাগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিলাম। এর কোনো টিকা নেই। এ জন্য এটি একটু বিপজ্জনক রোগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই রোগে বাঘের বাচ্চা মারা যায়।’
নেই সুরক্ষা ব্যবস্থা
মাছির কামড়ে এর আগে শাবক মারা গেলেও এবার আলাদা করে কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বুধবার চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, মানুষ যাতে ওই বাঘগুলোকে বিরক্ত করতে না পারে, সে জন্য নেট দেওয়া হয়েছে। তবে মাছি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আলাদা করে কোনো সুরক্ষাবলয় গড়ে তোলা হয়নি।