বিদেশে লেখাপড়ায় আগ্রহ বেশি, থাকার চিন্তা কম
দেশের শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেক পড়ালেখার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। অনেকে অভিজ্ঞতা অর্জন এবং ভালো সুযোগ-সুবিধার আশায় কাজ করতেও বিদেশে যেতে চান। তবে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ তরুণের স্থায়ীভাবে বিদেশে থাকার চিন্তা নেই।
প্রথম আলোর তারুণ্য জরিপ ২০১৯–এ এমন তথ্য এসেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন, বিদেশে পড়তে যাওয়ার বিষয়টি তাঁদের ভাবনায় রয়েছে। আগ্রহী তরুণেরা বলছেন, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার ভালো সুযোগ রয়েছে। তাঁরা গবেষণার এই সুযোগ নিতে চান এবং নিজেদের আরও দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে চান।
তবে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ কাজ করতে বিদেশে যেতে চান না। তাঁরা দেশে পরিবারের সঙ্গে থাকতে চান। দেশে থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার মধ্য দিয়ে অন্যদের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি করতে চান। কাজের অভিজ্ঞতা, সুযোগ-সুবিধা এবং উন্নত জীবনমানের জন্য বিদেশে যাওয়ার চিন্তা করছেন ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ।
অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক বাংলাদেশি অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ কম। বাংলাদেশি শ্রমিকদের বৈধভাবে বিদেশে গিয়ে কাজ করার মতো দক্ষতাও নেই। ফলে তাঁরা অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
অনেক সময় জনশক্তি রপ্তানিকারক ও দালালেরা বিদেশের জীবন সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দিয়ে জনগণকে প্রতারিত করেন। তাঁদের প্ররোচনায় অনেকে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। আবার অনেকে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ দিকনির্দেশনা পান না।
প্রায় ২৪ শতাংশ স্থায়ীভাবে বিদেশে থাকতে চান
জরিপে অংশগ্রহণকারী তরুণদের মধ্যে ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশই স্থায়ীভাবে বিদেশে থাকতে যেতে চান না। আর ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ তরুণ স্থায়ীভাবে বিদেশে থেকে যেতে চান। উন্নত সুযোগ-সুবিধা, ভালো জীবনমান, মানসম্পন্ন শিক্ষা, ভেজালমুক্ত খাবারের কারণে তাঁরা স্থায়ীভাবে বিদেশে যেতে আগ্রহী। রাজধানীর যানজট ও দূষণ থেকে পরিত্রাণ পেতেও তরুণদের অনেকে বিদেশে চলে যেতে চান বলে জরিপে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষিত ও উচ্চশিক্ষিত বাংলাদেশিদের মধ্যে স্থায়ীভাবে বিদেশে অভিবাসন করার প্রবণতা বাড়ছে। সমাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাব, মেধার মূল্যায়ন না হওয়া, সন্ত্রাসের বিস্তার, ব্যবসা করতে গেলে পদে পদে ঘুষ দিতে হয় বলে শিক্ষিত তরুণেরা দেশে থাকতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।