বিএনপিতেই মতপার্থক্য স্মারকলিপি দেওয়া নিয়ে
অভিযোগ, দাবিদাওয়া নিয়ে একাধিকবার নির্বাচন কমিশনে গিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের জেরে বৈঠকের মাঝামাঝি বের হয়েও আসেন নেতারা। নির্বাচনের ফল বর্জন করে প্রার্থীসহ সেই ইসিতেই তাঁরা আবার যাচ্ছেন স্মারকলিপি দিতে। যেদিন তাঁরা যেতে চান, ওই দিনই আবার নবনির্বাচিতরা শপথ নেবেন।
তবে জোটের বড় দল বিএনপিরই নেতারা মনে করছেন, এখন স্মারকলিপি দিয়ে কিছু হবে না, যা করার নির্বাচনের আগে করতে হতো।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না দাবি করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ চেয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট। সেই নির্বাচন কমিশনেই তাঁরা আবার যাচ্ছেন নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনর্নির্বাচন দাবি নিয়ে। এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, এখন স্মারকলিপি দিয়ে কিছুই হবে না। যে নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষমতার পরিচয় দেয়নি, সেই নির্বাচন কমিশন এখন কী করবে।
নির্বাচনের কয়েক দিন আগে মওদুদ আহমদ ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর একটি ফোনালাপ ফাঁস ঘিরে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়। সেখানে তাঁদের আলোচনায় ছিল সব প্রার্থীকে ঢাকায় ডেকে কোনো কর্মসূচি দেওয়া। এখন নির্বাচনের পর সবাইকে ঢাকায় ডেকে কমিশনে নেওয়া প্রসঙ্গে মওদুদ বলেন, ‘এ ধরনের কর্মসূচি নির্বাচনের আগেই করতে হতো। এখন করলে ফলপ্রসূ কিছু হবে বলে মনে হয় না।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট ৭টি আসনে জয় পেয়েছে। তবে এ নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন বলে এর ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে তারা। ৩ জানুয়ারি ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনে যাবে স্মারকলিপি দিতে। সেদিন তাদের সব প্রার্থীই সঙ্গে যাবে। জোটের কয়েকটি সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে সবাইকে ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। তাঁদের অবস্থান, তাঁরা কে কোথায় কী করেছেন এসব নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ঐক্যফ্রন্ট ৩ জানুয়ারি ইসিতে যাবে। তবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আজ মঙ্গলবার জানান, ৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান হবে।
গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন জানিয়েছেন, স্মারকলিপির পাশাপাশি কর্মসূচিও ঘোষণা করা হবে। ঐক্যফ্রন্টের এক শীর্ষ নেতা জানান, বাম দলগুলোও নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কথা ভাবছে এই জোট। যদিও ঐক্যফ্রন্ট গঠনের আগে তাদের সঙ্গে জোটভুক্ত হওয়ার জন্য বলা হলেও বাম জোট সাড়া দেয়নি। আন্দোলনের ধরনের ব্যাপারে এই শীর্ষ নেতা বলেন, মিছিল বা অবস্থান কর্মসূচির মতো কিছু হতে পারে।
এদিকে ঐক্যফ্রন্টের ৭টি আসনের প্রার্থীরা শপথ নেবেন কি না, সে ব্যাপারে জয়ী প্রার্থীরা এখনো স্পষ্ট করে কিছু জানেন না। সিলেট-২ আসনে গণফোরাম থেকে জয়ী হওয়া দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান প্রথম আলোকে জানান, দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন তিনি। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে জয়ী প্রার্থীদের শপথের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সব ফলাফলই তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু কামাল হোসেন জানান, বিষয়টি বিবেচনাধীন।
ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইনজীবীসহ অনেকের পরামর্শই হচ্ছে এই ৭ জনের শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়া উচিত। পাশাপাশি বাইরের আন্দোলনও থাকবে। তবে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেন, ফল প্রত্যাখ্যান করে শপথ নিতে যাওয়াটা সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত হবে।