বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে সেমিনার: গণমাধ্যমে সঠিক তথ্য দিতে হবে
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক গভীর হয়েছে। তবে তা যথেষ্ট নয়। উভয় দেশের সরকারের মধ্যে আন্তসম্পর্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষে মানুষে সম্পর্কও আরও গভীর করতে হবে। কোনোভাবে যেন এই সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব না পড়ে, সে বিষয়ে গণমাধ্যমকেও সতর্ক থাকতে হবে বলে। উভয় দেশর গণমাধ্যমেই সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য তুলে ধরতে হবে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধু: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং বিশেষ অতিথি ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী তাঁদের বক্তব্যে এ বিষয়টি তুলে ধরেন।
ঢাকায় ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মিডিয়া করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইমক্যাব) মুজিব বর্ষ উপলক্ষে এই সেমিনারের আয়োজন করে। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারের মূল প্রবন্ধ পড়েন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক হারুন হাবিব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সঙ্গে ভারতের সেনাবাহিনীর রক্ত মিশে একাকার হয়ে গেছে। পাকিস্তানের কারাগারে আটক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন রক্ষা ও কারাগার থেকে মুক্তির জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী সে সময় বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। এক কোটি শরণার্থীকে তারা আশ্রয় দিয়েছিলেন। এমন অনেক ঘটনা উভয় দেশের সম্পর্ক গভীর করে তুলেছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত স্থাপিত হয়েছিল। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ভারতের সঙ্গে বৈরিতাকে প্রতিপাদ্য করে ভোটের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার সরকার ভারতবিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে জনগণের মধ্যে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে উভয় দেশের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উভয় দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আবার নিবিড় হয়েছে।
সম্প্রতি করোনাভাইরাসের টিকার উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন ভরত বাংলাদেশকে ২০ লাখ টিকা উপহার দিয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে একই সময়ে বাংলাদেশ টিকা পাচ্ছে। এটা মৈত্রী এবং সম্প্রীতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এমন কোনো মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করা উচিত হবে না, যাতে দুই দেশের মধ্যে এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতের গণমাধ্যমের প্রতিও তিনি এ আহ্বান জানান।
আজ বক্তব্যের শুরুতেই ভাষাশহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। তিনি বলেন, ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন–সংগ্রাম করেছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক কীভাবে আরও নিবিড় করে তোলা যায়, বঙ্গবন্ধুর ভাবনার মধ্যেই তার নির্দেশনা রয়েছে।
হাইকমিশনার বলেন, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আরও সুযোগ রয়েছে। এ থেকে উভয় দেশই লাভবান হতে পারবে। এ জন্য দুই দেশের মধ্যে এখন যে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তা রক্ষা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য তুলে ধরতে হবে। এত নীতি–নির্ধারকদের যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং জনসাধারণের মধ্যে সম্প্রীতির সম্পর্ক নিবিড় করে তোলার কাজটি সহজ হবে।
মূল প্রবন্ধে হারুন হাবিব বলেন, বঙ্গবন্ধু সব সময় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিলেন। ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যার সমাধান, সমুদ্রসীমা নির্ধারণ, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদনসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে তাঁর অবস্থান ছিল বাস্তবতামুখী। বঙ্গবন্ধুর এই আদর্শ সামনে রেখেই ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এতে দুই দেশের মানুষই কেবল উপকৃত হয়নি, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্র আঙিনায় সার্থক সহাবস্থানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই সম্পর্ক যেন স্থায়ী হয়, সে বিষয়ে দুই দেশের নীতি–নির্ধারকদের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রখর সতর্কতারও প্রয়োজন, যেন পারস্পরিক সম্মান-শ্রদ্ধার নিরিখে চাওয়া–পাওয়ার ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
সভায় আরও আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুছ আফ্রাদ। তাঁরা বলেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কে নানা সময় নানা রকমের টানাপোড়েন থাকে। তবে সমাধানের জন্য আন্তরিক উদ্যোগ থাকতে হবে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইমক্যাবের সভাপতি বাসুদেব ধর। স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম।