এবার ভারতে শোনা যাবে বাংলাদেশ বেতার
বাংলাদেশ বেতার ও ভারতের আকাশবাণীর মধ্যে অনুষ্ঠান বিনিময় কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভেদকার নয়াদিল্লিতে এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেছেন। বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
তথ্যমন্ত্রী হিসেবে হাছান মাহমুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সারা ভারতে বাংলাদেশ টেলিভিশন সম্প্রচার শুরুর সাড়ে তিন মাসের মাথায় এবার সারা ভারতে শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশ বেতারও।
এর ফলে এখন থেকে বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান আকাশবাণী চ্যানেলে কলকাতায় এফএম ১০০.১ মেগাহার্টজ, আগরতলায় এফএম ১০১.৬ মেগাহার্টজ এবং আকাশবাণী অ্যাপ ও ডিটিএইচের মাধ্যমে সারা ভারতে ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে নয়টা এবং বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় একযোগে সম্প্রচার শুরু হলো। একই সময়ে আকাশবাণীর অনুষ্ঠান বাংলাদেশ বেতারের এফএম ১০৪ মেগাহার্টজে সম্প্রচার শুরু হলো। ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রসার ভারতী ও বাংলাদেশ বেতারের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে এ কার্যক্রমের সূত্রপাত দুদেশের গণমাধ্যম খাতে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল।
আজ দুই দেশের তথ্যমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণে দুই দেশের চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানও দেখেন।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ২০২০ সালে বেতার ও চলচ্চিত্র খাতে এই সহযোগিতা দুদেশের জনগণ ও সরকারের বন্ধুত্বের এক অনন্য মাইলফলক। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে পারস্পরিক সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছেন, এই বিনিময় ও চুক্তি তারই প্রতিফলন।’
মন্ত্রী এ সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে বলেন, ভারতের প্রত্যক্ষ সহায়তা ছাড়া নয় মাসে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হতো না।
মন্ত্রী হাছান এ সময় ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভেদকারকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। উল্লেখ্য, একই সঙ্গে পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা প্রকাশ জাভেদকার গত নভেম্বরে ঢাকায় পরিবেশ সম্মেলনে যোগদানকালে তথ্যমন্ত্রী হাছানের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন।
ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভেদকার তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে হাছান মাহমুদকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ভৌগোলিক নৈকট্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্যগত। গণমাধ্যম ক্ষেত্রের এই সহযোগিতা দুদেশের অন্যান্য খাতে সহযোগিতাকেও প্রসারিত করবে। জাভেদকার এ সময় তথ্যমন্ত্রী হাছানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছার কথা জানান।
আজ বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণে দুদেশের চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের মধ্যে যৌথ চলচ্চিত্র প্রযোজনা চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত নুজহাত ইয়াসমিন এবং ভারতের এনএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক টি সি এ কল্যাণী।
ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনারের দায়িত্বে নিয়োজিত ডেপুটি হাইকমিশনার এ টি এম রকিবুল হক, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র শীল, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাহানারা পারভীন, নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত প্রেস মিনিস্টার ফরিদ হোসেন, উপসচিব মো. সাইফুল ইসলামসহ তথ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব রাভি মিত্তাল, প্রসার ভারতীর প্রধান নির্বাহী শশী শেখর ভেম্পতি, অতিরিক্ত সচিব অতুল কুমার তিওয়ারিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিকেলে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ভারতের পররাষ্ট্রবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খ্যাত স্বামী বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশনে অতিথি বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন। তিনি পারস্পরিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে মতবিনিময় করেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আজ থেকে দিল্লিতে শুরু হয়েছে ‘রাইসিনা ডায়ালগ’। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের আসার কথা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদেশ সফরের জন্য তা বাতিল হওয়ায় ভারতে অনর্থক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। রাইসিনা ডায়ালগের অতিথিরা বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মিলিত হবেন। সেই নৈশভোজে হাছান মাহমুদকে যোগ দিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে।