বরিশালে ২০টিতেই জামানত গেল ধানের শীষের
বরিশালের ২১টির মধ্যে ২০টি আসনেই জামানত হারাচ্ছেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা।
জামানত হারানো প্রার্থীদের তালিকায় বিএনপির বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা প্রাপ্ত (কাস্ট) ভোটের আট ভাগের এক ভাগও পাননি।
জামানত হারানো হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আরেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দীন আহমেদ, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান ওমর, সাবেক ছাত্রদল নেতা নাজিম উদ্দীন আলম আছেন।
তবে ফল ঘোষণার আগেই ধানের শীষ প্রতীকের এই প্রার্থীরা নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ আনেন। এসব অভিযোগে তাঁরা আগেই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, বরিশাল জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা জামানত হারাচ্ছেন।
বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ২ লাখ ৫ হাজার ৫০২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপন পেয়েছেন ১ হাজার ৩০৫ ভোট। এ কারণে তিনি জামানত হারাচ্ছেন।
বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শাহে আলম ২ লাখ ১২ হাজার ৩৪৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু পেয়েছেন ১১ হাজার ১৩৭ ভোট। তিনিও জামানত হারাচ্ছেন।
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদি) আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু ৫৪ হাজার ৭৭৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির জয়নুল আবেদীন ৪৭ হাজার ২৮৭ ভোট পেয়েছেন। এই আসন জয়নুল জামানত হারাচ্ছেন না।
বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের পঙ্কজ দেবনাথ পেয়েছেন ২ লাখ ৪১ হাজার ৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে নুরুর রহমান পেয়েছেন ৯ হাজার ২৮২ ভোট। এ কারণে এই আসনেও বিএনপির প্রার্থী জামানত হারাচ্ছেন।
বরিশাল-৫ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জাহিদ ফারুক শামীম পেয়েছেন ২ লাখ ১৫ হাজার ৮০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ার পেয়েছেন ৩১ হাজার ৩৬২ ভোট। বিএনপির প্রার্থী এখানেও জামানত পাচ্ছেন না।
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রতনা ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আবুল হোসেন খান পেয়েছেন ১৩ হাজার ৬৫৮ ভোট। তিনিও জামানত পাচ্ছেন না।
ঝালকাঠির দুটি আসন। এই দুটি আসনেও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা জামানত পাচ্ছেন না। ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বি এইচ হারুন ১ লাখ ৩১ হাজার ৫২৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির শাহজাহান ওমর পেয়েছেন ৬ হাজার ১৫১ ভোট। ঝালকাঠি-২ (সদর-নলছিটি) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু পেয়েছেন ২ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির জীবা আমিনা খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৮২ ভোট। এ কারণে দুই আসনেই বিএনপি প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন।
একই অবস্থা বরগুনার দুটি আসনেও। বরগুনা-১ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ৩ লাখ ১৭ হাজার ৬২২ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির সাবেক সাংসদ মতিয়ার রহমান তালুকদার পেয়েছেন ১৫ হাজার ৮৫০ ভোট। বরগুনা-২ (বামনা-পাথরঘাটা-বেতাগী) আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের শওকত হাচানুর রহমান রিমন পেয়েছেন ২ লাখ ৩২৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির খন্দকার মাহবুব হোসেন পেয়েছেন ৯ হাজার ৫১৮ ভোট। জেলার দুটি আসনেই জামানত ফিরে পাচ্ছেন না বিএনপির দুই প্রার্থী।
পটুয়াখালী জেলার চারটি আসনেও বিএনপির কোনো প্রার্থী জামানত ফিরে পাচ্ছেন না। পটুয়াখালী-১ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে শাহজাহান মিয়া পেয়েছেন ২ লাখ ৭০ হাজার ৯৭০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আলতাফ হোসেন চৌধুরী পেয়েছেন ১০ হাজার ৩৬৯ ভোট। পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আ স ম ফিরোজ পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৮৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকের সালমা আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৬০ ভোট। পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে এস এম শাহজাদা সাজু পেয়েছেন ২ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৯ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকের গোলাম মাওলা রনি পেয়েছেন ৬ হাজার ১৭৬ ভোট। বিজয়ী এস এম শাহজাদা সিইসি নূরুল হুদার ভাগনে। পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে মুহিব্বুর রহমান মুহিব পেয়েছেন ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮১২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকের এ বি এম মোশারেফ হোসেন পেয়েছেন ৬ হাজার ১৮৫ ভোট। চারটি আসনে ধানের শীষ প্রতীকের চার প্রার্থী প্রাপ্ত (কাস্ট) ভোটের আট ভাগের এক ভাগ না পাওয়ায় তাঁরা জামানত পাচ্ছেন না।
দ্বীপজেলা ভোলার চারটি আসনের চারটিতেই বিএনপির প্রার্থীরা জামানত হারাচ্ছেন। ভোলা-১ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তোফায়েল আহমেদ পেয়েছেন ২ লাখ ৪২ হাজার ১৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির গোলাম নবী আলমগীর পেয়েছেন ৭ হাজার ২২৪ ভোট। ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আলী আজম মুকুল পেয়েছেন ২ লাখ ২৬ হাজার ১২৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের হাফিজ ইব্রাহিম পেয়েছেন ১৩ হাজার ৯৯৯ ভোট। ভোলা-৩ (লালমোহন ও তজুমদ্দিন) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন পেয়েছেন ২ লাখ ৫০ হাজার ৪১১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের হাফিজ উদ্দিন আহমেদ পেয়েছেন ২ হাজার ৫০২ ভোট। ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব পেয়েছেন ২ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের নাজিম উদ্দিন আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৭ ভোট।
একইভাবে পিরোজপুর জেলার তিনটি আসনেও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা জামানত হারাচ্ছেন। পিরোজপুর-১ (সদর-নেছারাবাদ-নাজিরপুর) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে শ ম রেজাউল করিম পেয়েছেন ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৯৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকের জামায়াত নেতা শামীম সাঈদী পেয়েছেন ৯ হাজার ২৭১ ভোট। পিরোজপুর-২ (কাউখালী-ভান্ডারিয়া-জিয়ানগর) আসনে সাইকেল প্রতীক নিয়ে মহাজোটের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পেয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৮৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের মুস্তাফিজুর রহমান পেয়েছেন ৬ হাজার ৩৮৪ ভোট। পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে মহাজোট–মনোনীত জাতীয় পার্টির প্রার্থী রুস্তম আলী ফরাজী পেয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩১০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের রুহুল আমিন দুলাল পেয়েছেন ৭ হাজার ৬৯৮ ভোট। এই জেলার তিনটি আসনেই ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা জামানত পাচ্ছেন না।