বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ৩ আগস্ট পর্যন্ত লেগে যেতে পারে
কুশিয়ারা ছাড়া দেশের বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে সামগ্রিকভাবে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আগস্টের ৩ তারিখ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে।
এ বিষয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চল থেকে বন্যার পানি দ্রুত নামছে। আগামী দু–তিন দিনের মধ্যে দেশের বেশির ভাগ এলাকা থেকে পানি নেমে যাবে। পানি নেমে যাওয়ার সময় উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের চার-পাঁচটি জেলায় নদীভাঙন বাড়তে পারে।
নদী বিশেষজ্ঞ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যার পানি নামতে শুরু করায় আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে ভাঙন বেশি হতে পারে। সরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) পূর্বাভাসেও এই জেলাগুলোতে নদীভাঙন বেশি হওয়ার পূর্বাভাস ছিল। এবার বন্যার পানি বেশি দিন ওই এলাকায় অবস্থান করায় ভাঙন পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে সংস্থাটির বিজ্ঞানীরা মনে করেছেন।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আজ রোববার দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা আছে। চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, মৌসুমি বায়ু আবারও সক্রিয় হওয়ায় দেশের দক্ষিণ, উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টি বাড়বে।
এদিকে বন্যায় এ পর্যন্ত ১১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, এই তথ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথ ইমারজেন্সি অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই হচ্ছে শিশু-কিশোর। যাদের বড় অংশ পানিতে ডুবে মারা গেছে। এ ছাড়া বন্যায় এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৬৭৬ জন নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় ৫ হাজার ৯৮৫ জন ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ১ হাজার ৬৯১ জন আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে ত্রাণ নিয়ে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে চরাঞ্চল ও দুর্গম এলাকাগুলোতে প্রয়োজনের চেয়ে কম ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বন্যাকবলিত জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার থেকে যা ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ পেয়েছিলাম, অনেক আগেই বানভাসিদের মধ্যে তা বিতরণ করে দিয়েছি। আমি বরাদ্দ না পেলে তাঁদের দিব কীভাবে। নানা জায়গায় যোগাযোগ করে ত্রাণসামগ্রী আমার এলাকায় বিতরণের অনুরোধ করেছি।’