‘ফুটবলার হতে’ বাসা ছেড়ে হোটেলে চাকরি কিশোরের
ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন তার। কিন্তু ইট-পাথরের এই শহরে পছন্দমতো খেলার মাঠ পাওয়া ভার। তার ওপর রয়েছে লেখাপড়ার চাপ। তাই পছন্দের মাঠে খেলার সুযোগ বের করতে বাসা থেকেই পালিয়ে গেল কিশোরটি। কাজ নিল একটি খাবারের হোটেলে। তবে শর্ত একটাই, হোটেলের পেছনের খেলার মাঠে প্রতিদিন বিকেলে নিয়ম করে খেলতে দিতে হবে।
ওই কিশোরের পরিকল্পনা অবশ্য বেশি দূর এগোয়নি। কেবল এক রাত কেটেছে হোটেল কর্মচারীদের সঙ্গে। ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই পুলিশ তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে মা–বাবার কাছে।
১৪ বছরের এই কিশোর রাজধানীর একটি বিদ্যালয়ের ইংরেজি মাধ্যমের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। থাকে মা–বাবার সঙ্গে এলিফ্যান্ট রোডের একটি অ্যাপার্টমেন্টে। বিকেলে খেলার জন্য ছুটি মেলে। তবে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের মাঠে খেলে মন ভরে না। তার দরকার আরও বড় আর সুন্দর মাঠ।
ছেলেটির বাবা একজন আইনজীবী, মা সরকারি কর্মকর্তা। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার দুজনই কর্মস্থলে যান। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে ছেলেকে না পেয়ে তাঁদের মাথায় হাত পড়ে।
তার বাবা জানান, দুপুরে পাশের একটি মসজিদে প্রতিদিনই আরবি শিখতে যায় ছেলে। সেখান থেকে যায় খেলার মাঠে। তবে মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে নিয়ম করে সে বাসায় ফেরে। সেদিন আজান শেষ হওয়ার পর আরও মিনিট দশেক চলে গেলেও সে ফিরছিল না। তখন মসজিদ ও খেলার মাঠে গিয়ে জানতে পারেন, কোনো জায়গায়ই ছেলে যায়নি। সঙ্গে সঙ্গে নিউ মার্কেট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তাঁরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ছবিসহ পোস্ট দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত বন্ধুবান্ধবের জানিয়ে দেন। তাঁদের অনেকেই পুলিশ সদস্য হওয়ায় চারদিকে খোঁজ লেগে যায়।
ঘর ছাড়ার সময় ছেলেটি সঙ্গে নিয়েছিল ফুটবল, খেলার বুট আর কিছু কাপড়। বাসায় ব্যবহারের জন্য রাখা মুঠোফোনটিও সঙ্গে নেয় সে। আর এই ফোনের সূত্র ধরেই পুলিশ তাকে খুঁজে বের করে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাঁরা বুঝতে পারেন, ছেলেটির অবস্থান মতিঝিল এলাকায়। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তাঁরা পল্টন ও মতিঝিলকেন্দ্রিক সব আবাসিক ও খাবার হোটেলে খোঁজ নেওয়া শুরু করেন। শুক্রবার মতিঝিলের ঘরোয়া হোটেলের ব্যবস্থাপক ছবি দেখে জানান, ছেলেটি তাঁদের হোটেলে ‘মেসিয়ারের’ কাজ নিয়েছে। পাশের মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গেছে। সেখান থেকেই তাকে উদ্ধার করা হয়।
কেন বাসা থেকে চলে গিয়েছিল, তা জানতে চাইল ছেলেটি প্রথম আলোকে বলে, ‘আমি ফুটবল খেলতে চাই। কিন্তু টিচার্স ট্রেনিং কলেজের মাঠ আমার ভালো লাগে না। আরামবাগের বালুর মাঠ খুব সুন্দর। তাই চলে গিয়েছিলাম।’
ছেলেটির বাবা বলেন, তার ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছায় তাঁদের কোনো বাধা নেই। গত বছর বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। ২০ মিনিটের একটি পরীক্ষামূলক ম্যাচে সে গোলও করেছিল। কিন্তু পরে ভর্তির তালিকায় নাম আসেনি। এই ঘটনায় সে খুবই মর্মাহত হয়। গোল দেওয়ার পরও কেন তাকে ভর্তি করা হলো না, তা বারবার জানতে চায়। বিকেএসপি এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের বিজ্ঞাপন দেয়। সেখানেও সে অংশ নিতে চেয়েছিল। কিন্তু তখন তারা আর অনুমতি দেননি।
‘ভালো মাঠে খেলতে না পারা, বিকেএসপিতে ভর্তি হতে না পারা, প্রশিক্ষণে যেতে না পারা—এসব থেকেই তার জেদ চেপেছিল বলে মনে হচ্ছে,’ বলেন ছেলেটির বাবা।