‘প্যাকেট ভালো দিলে কারখানাগুলোর পরিদর্শন ভালো হয়’
হাসেম ফুডসের কারখানায় শিশুশ্রমসহ নানা অনিয়ম ছিল। অগ্নিনির্বাপণ, ভবন নির্মাণ—নানা খাতে ত্রুটি ছিল। সব কারখানা দেখভাল করার জন্য রাষ্ট্রীয় নানা দপ্তর পরিদর্শন করে। কিন্তু প্যাকেট ভালো দেওয়ার ফলে এসব দপ্তরের পরিদর্শনও ভালো হয়।
আজ রোববার ‘নারায়ণগঞ্জ ট্র্যাজেডি: দায় কার?’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় কথাগুলো বলেন বক্তারা। আইপিনিউজ ও পরিবেশ বার্তা নামে দুটি অনলাইন সংবাদ পোর্টাল এর আয়োজন করে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডসের কারখানায় গত শুক্রবার অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জনের মৃত্যু হয়। তা নিয়েই ছিল আজকের সভা।
সভায় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, হাসেম ফুডসের কারখানায় তিন হাজারের ওপর শ্রমিক ছিলেন। তার অধিকাংশই ছিল শিশু। অন্যদিকে রাষ্ট্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আছে—শ্রম মন্ত্রণালয়। তার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে শ্রম অধিদপ্তর। কারখানায় নিয়মমতো কাজ হয় কি না, এটা তারা দেখে। আর আরেকটা হচ্ছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। আছে ফায়ার সার্ভিস, যারা দেখে অগ্নিনির্বাপণের সুরক্ষাগুলো আছে কি না। আর বিল্ডিং কোড মেনে চলা হচ্ছে কি না, তা–ও দেখে সরকারি এক প্রতিষ্ঠান।
রাজেকুজ্জামান বলেন, সরকারের প্রতিটি অঙ্গ চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান কি ব্যর্থ হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত আছে? পরিদর্শনকারীদের প্যাকেট ভালো দিলে কারখানা পরিদর্শন ভালো হয়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, ‘আমরা দেখছি, প্রতিনিয়ত কারখানাগুলোতে বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এখানে ক্ষয়ক্ষতিও ব্যাপক। এ ধরনের শিল্পকারখানা যখন তৈরি করা হয়, তখন তাদের যে নিয়মগুলো অনুসরণ করার কথা, সেগুলো অনুসরণ করে না। আমরা ঠিকই প্রোভিশন রাখি কিন্তু বাস্তবে সেগুলো মানি না।’
গবেষক ও কুষ্টিয়া ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহা তানজীম বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, এসবের পেছনে দায়টা মালিকপক্ষ থেকে রাষ্ট্রের দিকে চলে যাচ্ছে। রাষ্ট্র ও তার সংস্থাগুলো কেউ ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। এই বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্যে কেউ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছি না এবং করতে চাইলেও পারা যাচ্ছে না।’
আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামাই বলেন, এত বছর এই কারখানা ভবন চলেছে যথাযথ অনুমোদন ছাড়া। আর সরকারের যে সংস্থাগুলো পরিদর্শন করে, তারা আসলে কী করেছে।
সভায় নারায়ণগঞ্জের শ্রমিকনেতা হাফিজুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসান তারিক চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট নূরুননবী শান্ত প্রমুখ বক্তব্য দেন।