পাত্র ঠিক শুনে বেঁকে বসলেন মা, তারপর হঠাৎ ফিরে এলেন বাবা
১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১। বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরবময় দিন। ‘বিজয়’ শব্দটা হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে দেশের আনাচে-কানাচে। সেই শব্দটা কানে পৌঁছাতেই আনন্দমুখর হয়ে ওঠল দেশের আমজনতা। সে কি আনন্দ! জাতি–ধর্মনির্বিশেষে সবাই উল্লাসে অংশ নিল। ধীরে ধীরে বাংলার লড়াকু যোদ্ধারা বাড়ি ফিরে এলেন। ৯ মাসের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পর পরিবারগুলো আনন্দে আত্মহারা। সেই খুশির সময়ে আমার মা হোসনেয়ারা বেগম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা মনির আহমেদ তখনো বাড়ি ফেরেননি। পরিবার–পরিজন একরকম নিশ্চিত হলেন, মুক্তিযোদ্ধা বাবা রণাঙ্গনে শহীদ হয়েছেন। পরিবারে নানা জল্পনা–কল্পনা চলছে। মায়ের কোলে তখন বড় ভাই আলম শাইন। আমার জন্ম হয়নি তখনো।
দিন, মাস পেরিয়ে গেলেও বাবা বাড়ি ফেরেননি। তবে মায়ের বিশ্বাস, তাঁর স্বামী বেঁচে আছেন। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও বাবা মনির আহমেদ বাড়ি না ফেরায় সবাই ধরে নিলেন, বাবা আর নেই! নানা তাঁর মেয়ের জন্য, অর্থাৎ আমার মায়ের জন্য পাত্র দেখা শুরু করলেন। পাত্র প্রায় ঠিকঠাকও। বিয়ের দিনক্ষণের জন্য মায়ের মতামত প্রয়োজন। কিন্তু বেঁকে বসলেন আমার মা। তাঁর একটাই কথা, কোলের ছেলেকে নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন। প্রয়োজনে ভিক্ষা করে খাবেন। তবু আর বিয়ে করবেন না। মায়ের অনড় অবস্থানের কারণে বিয়েটা আর হয়নি।
তারপর ঘটল নাটকীয় ঘটনা। প্রায় চার মাস পর হঠাৎ একদিন বাড়িতে হাজির আমার বাবা। পরিবারে তখন আনন্দের বন্যা বইছে। সবাই মাকে বাহবা দিতে লাগলেন।
এখনো মাঝেমধ্যে সেই ঘটনা মায়ের মুখে শুনে আমি হতবাক হয়ে যাই। সেদিন মায়ের কঠোর সিদ্ধান্ত আর আত্মবিশ্বাসের কারণে আমি আজ দুনিয়ার আলো-বাতাস ভোগ করার সুযোগ পেয়েছি। মাকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা।
লেখক: প্রথম আলোর রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি