নোয়াখালীতে গণধর্ষণ: ৭ জন ৫ দিনের রিমান্ডে
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের গ্রামে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে এক নারীকে (৪০) গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ সাতজন আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ রোববার দুপুরে নোয়াখালীর ২ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক নবনীতা গুহ শুনানি শেষে সাতজন আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামিরা হলেন, বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা ‘ঘটনার ইন্ধনদাতা’ রুহুল আমিন, প্রধান আসামি মো. সোহেল, বাদশা আলম ওরফে কুড়াইল্যা বাসু, মো. স্বপন, মো. বেচু, জসিম উদ্দিন ও হাসান আলী ওরফে বুলু।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক কবির আহমদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে বিভিন্ন তারিখে আসামিদের প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন। সবগুলো আবেদনের শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশ দেন।
মানববন্ধন
নারীকে মারধর ও গণধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে।
আজ রোববার সকাল দশটায় সুবর্ণচর উপজেলা সদরের জিরো পয়েন্টে ‘সুবর্ণচর সচেতন জনতা’ এবং বেলা ১১টায় ‘সুবর্ণ ব্লাড ফাউন্ডেশন’ নামে দুটি সংগঠনের ব্যানারে পৃথক এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে আয়োজক সংগঠনের সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়।
আরেক আসামি গ্রেপ্তার
নারীকে মারধর ও গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আরও এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর নাম ছালা উদ্দিন। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে ফেনীর সুলতানপুর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল।
জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াস শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়া ছালা উদ্দিন মামলার এজাহারভুক্ত ৯ নম্বর আসামি। এ নিয়ে এ মামলায় এজাহারভুক্ত পাঁচজন এবং তদন্তে নাম আসা তিনজনসহ আটজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইন্ধনদাতাকে আ. লীগ থেকে বহিষ্কার
নারীকে মারধর ও ধর্ষণের ঘটনায় ইন্ধনদাতা হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রুহুল আমিন সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চিকিৎসা ও পরিবারের দায়িত্ব নিলেন সাংসদ একরামুল
সুবর্ণচরের নির্যাতনের শিকার নারীর চিকিৎসা ও পরিবারের পুনর্বাসনসহ সকল দায়িত্ব নিয়েছেন নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী। গত শুক্রবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল হাসপাতালে গিয়ে নির্যাতনের শিকার নারীকে দেখতে যান। তাঁরা ওই সময় ওই নারীকে সাংসদদের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন এবং তাঁর চিকিৎসার সকল ব্যয়ভারসহ পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে সাংসদের সিদ্ধান্তটি অবহিত করেন। প্রতিনিধি দলের সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী (৪০) গত রোববার ভোট দিতে গেলে কেন্দ্রে থাকা কয়েক যুবক তাঁদের পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে রাজি না হলে তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এরপর ওই দিন রাতে ১০-১২ জনের একদল যুবক ঘরে ঢুকে প্রথমে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে মারধর করে। পরে স্বামী ও সন্তানদের বেঁধে রেখে ওই নারীকে ঘরের বাইরে নিয়ে গণধর্ষণ করে।
এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামী ৯ জনের নাম উল্লেখ করে গত ৩১ ডিসেম্বর চরজব্বর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। চরজব্বর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, আসামিদের মধ্যে মো. হানিফ, মো. চৌধুরী, আবুল ও মোশারফকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।