নেতার বাড়ির পাশে সেতু
জনপ্রতিনিধিদের চাহিদার ১৩০টি সেতুর মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ৯টির। এসব সেতু এলাকা পরিদর্শন করেছেন প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানান, অন্তত ৩টি সেতু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। এলাকাগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, একটি সেতু তৈরি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতার বাড়িকে কেন্দ্র করে। একটি সেতু তৈরি করা হয়েছে প্রভাবশালী একজনের সুপারিশে, তাঁরই বাড়ির পাশে। সেতুর এক পাশে সড়ক, আরেক পাশে ধানি জমি। আবার কোথাও সেতুর উচ্চতা কম। এর ফলে যাত্রীদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে এখনই।
সরেজমিন রাজবাড়ী
রাজবাড়ী সদরে কাতালাগরী বাজার থেকে উদয়পুর-বসন্তপুর সড়কে কুমার নদের ওপর ৬০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ৩ কোটি ২ লাখ টাকা খরচে সেতুর এক পাশে পাকা রাস্তাসহ বাজার থাকলেও অপর পাশে রয়েছে মাটির রাস্তা। সেতুর প্রায় এক কিলোমিটার ভাটিতে একটি বড় সেতু রয়েছে।
দেখা গেছে, সেতুটির সংযোগ সড়ক চলে গেছে বসন্তপুর ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিয়ার রহমানের বাড়ির দিকে। এ নিয়ে আতিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অনেক টাকা খরচ করেছি। স্থানীয় এমপির কাছে অনেক চেষ্টা-তদবির করে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের এখানে কোনো পাকা রাস্তা নেই। আমার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পাকা করা হয়েছে। অপর পাশেও কিছু অংশ পাকা করা হয়েছে। যত দূর জানি, সেতু আরও উঁচু হওয়ার কথা ছিল। প্রায় দেড় ফুট নিচু করে তৈরি করা হয়েছে।’
সরেজমিন সুনামগঞ্জ
গ্রামের নাম আনুজানি। সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ভাতগাঁও ইউনিয়নের অংশ। এখানকার মঈনপুর-আলীগঞ্জ সড়কে চেলা খালের ওপর তৈরি হয়েছে ৬৬ মিটার দীর্ঘ সেতুটি। ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। উদ্বোধন হয়েছে এক বছর আগে।
এই আনুজানি গ্রামের বাসিন্দা একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। সেতু নির্মাণের পেছনে তাঁর একটি ভূমিকা আছে বলে গ্রামবাসী জানালেন। সেতুর দক্ষিণ পাশে সড়কের পরই বিশিষ্ট ব্যক্তিটির বাড়ি। সড়ক থেকে সেতুটি উত্তর দিকে খালের ওপর নির্মাণ করা। কিন্তু সেতুর পর আর কোনো সড়ক নেই। সব ধানি জমি। জমির আল ধরে মইনপুর, করশি গ্রামের মানুষজন যাতায়াত করেন।
আনুজানি ও আশপাশের গ্রামের লোকজন বলছেন, সেতুটির এখন এখানে প্রয়োজন ছিল না। বরং এ সেতু থেকে আধা কিলোমিটার দূরে আলীগঞ্জ বাজারের পশ্চিম পাশে চেলা খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। সেখানে সেতু হলে মঈনপুর ও কুরশি গ্রামের মানুষও ওই দিকে যাতায়াত করতে পারত। এখন তৈরি করা নতুন সেতুর সঙ্গে ওই দুই গ্রামের সংযোগ দিতে হলে এক দিকে তিন কিলোমিটার, অন্যদিকে চার কিলোমিটার সড়ক করতে হবে।
বড়াটুকা গ্রামের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকার মানুষ চেয়েছিল সেতুটি আলীগঞ্জ বাজারের পাশে খালের ওপর হোক। কিন্তু এলাকার একজন সম্মানিত ব্যক্তির ইচ্ছায় সেতুটি সেখানে না হয়ে আনুজানি গ্রামের পাশে হয়েছে, এটা সবাই জানে। কিন্তু কেউ এ নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি নয়।’
সরেজমিন জামালপুর
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার জোড়খালী ইউনিয়নের হাটমাগুড়া বাজার-কাইজার চর সড়কের ফুলকোচা মোড়ে যমুনা নদীর একটি শাখা খালের ওপর ৯৬ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণাধীন। সেতুর পূর্ব পাশ পর্যন্ত পাকা সড়ক রয়েছে। তবে পশ্চিম পাশে এখনো পাকা সড়ক নেই। স্থানীয় লোকজন বলছেন, সেতুটির উচ্চতা অনেক কম। সড়ক থেকে কিছুটা ওপরে। ভবিষ্যতে সড়কটি উঁচু হলে সেতুটি নিচে পড়ে যাবে। তবে সেতুটি তাঁদের প্রয়োজন ছিল বলেও জানান স্থানীয় ব্যক্তিরা।
সেতুটির উচ্চতা জানতে চাইলে নির্মাণাধীন সেতুর কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, সেতুর উচ্চতা কত, সেটা আমার জানা নেই। পরে তিনি সেতুটি নির্মাণের রাজমিস্ত্রি মো. জিয়াউলকে ফোন ধরিয়ে দেন। তিনিও সেতুর সঠিক উচ্চতা জানাতে পারেন না। সেতুটির উচ্চতা সম্পর্কে জানতে জামালপুরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই ধরনের সেতুতে নিয়ম অনুযায়ী যে উচ্চতা থাকার কথা রয়েছে, সেটাই রয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজন বলছেন, সেতুর উচ্চতা অনেক কম।