নিয়াজিকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিলেন জ্যাকব

লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জে এফ আর জ্যাকবের স্মরণসভায় বক্তারা বলেছেন, জ্যাকব যদি লে. জেনারেল নিয়াজিকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য না করতেন, তাহলে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হতে দেরি হতো। এতে বাঙালির রক্তক্ষয়ও অনেক বাড়ত।
বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু জেনারেল জ্যাকব স্মরণে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এই স্মরণসভার আয়োজন করে। স্মরণসভায় সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহ বলেন, নিয়াজির মতো লোক এত সহজে আত্মসমর্পণ করতেন না। জ্যাকব যখন তাঁকে বলেন পাকিস্তানি সেনাদের চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে, তাঁদের পালানোর আর কোনো পথ নেই, তখন তিনি মূলত একটি মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চালান। এতে নিয়াজির মনোবল ভেঙে যায়। নিয়াজিকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেন জ্যাকব।
১৯৭১ সালে জেনারেল জ্যাকব ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল ও পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার। সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর তিনি ভারতের গোয়া ও পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলের খসড়াও তিনি তৈরি করেছিলেন। তিনি সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা: বার্থ অব অ্যা নেশন নামের বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিকসহ ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের ইতিহাস তুলে ধরেছেন। ২০১২ সালের ২৭ মার্চ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জ্যাকবকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হয়। ১৩ জানুয়ারি ৯২ বছর বয়সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর প্রধান জেনারেল এম এ জি ওসমানীর উপস্থিত না থাকা প্রসঙ্গে কে এম সফিউল্লাহ বলেন, জেনারেল ওসমানী তখন মৌলভীবাজারে ছিলেন। এ ছাড়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান স্যাম মানেকশ সেখানে ছিলেন না, ছিলেন তাঁর দ্বিতীয় ব্যক্তি জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। তাই মুক্তিবাহিনীরও দ্বিতীয় ব্যক্তি এ কে খন্দকার আত্মসমর্পণের সময় উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক নুরুল আলম স্মরণসভায় বলেন, ‘২০১২ সালে যখন জ্যাকবকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হলো, তখন আমি তাঁর অনুভূতি জানতে চেয়েছিলাম। জ্যাকব বলেছিলেন, “বাংলাদেশে আসলে সব সময় আমি নিজের বাড়িতে আছি বলে মনে হয়।” জ্যাকব বাংলাদেশকে নিজের দেশের মতোই ভালোবাসতেন, মনের ভেতর থেকে ভালোবাসতেন।’
নিয়াজিকে ‘টাইগার নিয়াজি’ বলা হতো উল্লেখ করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহসভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ার উল আলম বলেন, ‘টাইগার যে বিড়াল হয়ে যেতে পারে, সেটা জ্যাকবের রণনীতি ও বুদ্ধিমত্তা থেকে দেখেছি।’ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ভারতীয় সেনাসদস্যদের জন্য দেশে কোনো স্মৃতিসৌধ না থাকায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
স্মরণসভায় সূচনা বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব হারুন হাবিব। আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সহসভাপতি আবু ওসমান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী শিকদার, সাব-সেক্টর কমান্ডার জিয়াউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। স্মরণসভায় ভারতীয় হাইকমিশনের ডিফেন্স অ্যাটাশে ব্রি. জেনারেল জে এস নন্দ উপস্থিত ছিলেন।