আলু
নির্ধারিত দামের ধার ধারছে না কেউ
দাম নির্ধারণ করে ৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
টিসিবির হিসাবে গতকাল ঢাকায় প্রতি কেজি আলু ৪৫–৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দিলেও কোথাও তা কার্যকর হয়নি। বাজারে গতকাল বুধবারও আগের মতো চড়া দামেই আলু বিক্রি হয়।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠিয়ে জানায়, হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ২৩, পাইকারিতে ২৫ ও খুচরায় ৩০ টাকা দরে বিক্রি হবে। এ দরে বিক্রি না হলে তা কঠোরভাবে মনিটরিং (পর্যবেক্ষণ) করতে হবে। চিঠিতে আলু কেনা ও রাখা বাবদ এখন পর্যন্ত প্রতি কেজি ২১ টাকা খরচ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা বলছে, গতকাল ঢাকায় প্রতি কেজি আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়, যা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ১১১ শতাংশ বেশি। আলুর এত দাম কখনো ছিল না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
হিমাগারে প্রতি কেজি ২৩, পাইকারিতে ২৫ ও খুচরায় ৩০ টাকা নির্ধারণ। কোথাও কার্যকর হয়নি। অভিযান চালাবে সরকার।
দেশে আলু বেশি উৎপাদনকারী তিন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে হিমাগার থেকে নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি শুরু হয়নি। একই ছিল ওই সব জেলা ও ঢাকার পাইকারি ও খুচরা বাজারের চিত্র।
উত্তরাঞ্চলে সবজির সবচেয়ে বড় মোকাম বগুড়ার মহাস্থানহাটের পাইকারি দোকানে গতকাল আলু জাতভেদে ৪৩ থেকে ৪৭ টাকা দরে বিক্রি হয়। জেলার ৩৪টি হিমাগারের মধ্যে ৮টি ও জয়পুরহাটের ১৬টির মধ্যে ৪টিতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩৩ থেকে ৩৬ টাকায়। পুনট কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক বিপ্লব ঘোষ বলেন, সরকার নির্ধারিত দরে বিক্রি করলেও আলুতে প্রতি বস্তায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মুনাফা থাকবে। প্রশাসন বাজার তদারক করলেই আলুর দাম কমবে।
এদিকে বগুড়ার শিবগঞ্জ ও জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, হিমাগারগুলোতে আলু নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে অভিযান চালানো হবে। কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবারক হোসেন বলেন, তাঁর উপজেলায় আটটি হিমাগার রয়েছে। আলুর দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজার তদারক শুরু করেছেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শাহী, আমানত, রাজ্জাক ও এসবি হিমাগার ঘুরে দেখা যায়, গতকাল সেখানে প্রতি কেজি আলু ৩৩ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হয়। শহরের গোবিন্দনগরের পাইকারি দোকানে একই আলু বিক্রি হয় ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা দরে। খুচরা বাজারে দাম ৪০ টাকা।
ঠাকুরগাঁওয়ের হিমাদ্রি হিমাগারের সহকারী মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক বলেন, তাঁরা শুধু ভাড়ার বিনিময়ে আলু সংরক্ষণ করেন। আলুর মালিক কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ানো বা কমানোর ওপর হিমাগার কর্তৃপক্ষের হাত নেই।
আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ঠাকুরগাঁওয়ের হিমাগারগুলোতে গতকাল অভিযান চালান জেলার সদর উপজেলার ইউএনও আবদুল্লাহ-আল-মামুন। তিনি হিমাগারে আলু রাখা ব্যক্তিদের তালিকা দিতে ব্যবস্থাপকদের নির্দেশনা দেন। ইউএনও বলেন, তালিকা পেলেই মজুত যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে গতকাল মুন্সিগঞ্জের বড় বাজার, মুন্সিরহাট, হাটলক্ষ্মীগঞ্জ, মুক্তারপুর ও দয়াল বাজারের খুচরা দোকানে প্রতি কেজি আলু ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা দরে বিক্রি হয়। হিমাগার পর্যায়ে দর কেজিতে ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা। আলু ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত এক দশকে তিনি আলুর ব্যবসায় প্রচুর লোকসান দিয়েছেন। এবার তা অনেকটা পুষিয়ে নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, যখন লোকসান হয়েছে, সরকার কোনো খবর নেয়নি। এখন লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করছে।
বাজারে এখন সবজির দাম চড়া। বেশির ভাগ সবজি বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৫০ থেকে ১০০ টাকায়। এর মধ্যে চাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তি। করোনাকালে আয় কমে যাওয়া মানুষ বিপাকে রয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে গত মাসের শেষ দিকে সরকার মিলগেটে চালের দর বেঁধে দেয়। তাতে অবশ্য খুচরা বাজারে দাম কমেনি। এরপর আলুর দাম বেঁধে দেওয়া হলো।
এর মধ্যে বাজারে আলুর দাম ব্যাপক বেড়ে যাওয়ার একটি গুজব শুনে কেউ কেউ বাড়তি পরিমাণে আলু কিনেছেন। তেমনই একজন মফিজুল ইসলাম গতকাল বিকেলে কারওয়ান বাজার থেকে ১০ কেজি আলু কিনে ফিরছিলেন। সরকারিভাবে দাম নির্ধারণের বিষয়টি জানালে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকার পেঁয়াজের দামও তো কমবে বলে জানিয়েছিল, কমেছে কোথায়?
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া; প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও ও মুন্সিগঞ্জ)