নিজেকে আড়াল করেই ফিরলেন মুরাদ হাসান
কানাডায় ঢুকতে না পেরে তিন দিনের মাথায় আবার দেশে ফিরেছেন সদ্য মন্ত্রিত্ব হারানো মুরাদ হাসান।
মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারানোর পর দেশ ছেড়ে কানাডায় যেতে চেয়েছিলেন মুরাদ হাসান। কিন্তু কানাডায় ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে তাঁকে তিন দিনের মাথায় আবার দেশেই ফিরতে হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় তিনি অনেকটা চুপিসারে, নিজেকে আড়াল করে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়েন।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, দুবাই থেকেই গতকাল বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটসের যে ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করে, তাতেই মুরাদ হাসান ঢাকায় ফেরেন। ফ্লাইট থেকে নামার সময় মুরাদ হাসানকে চেনার উপায় ছিল না। তিনি মাথায় কালো টুপি, মুখে কালো মাস্ক ও হুডি দিয়ে পুরো চেহারা ঢেকে রেখেছিলেন।
মুরাদ হাসান বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের বের হওয়ার পথ বাদ দিয়ে ভেতর দিয়ে চলে যান অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে। সেখান অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের যাত্রীরা যে পথ দিয়ে বের হন, সে পথেই তিনি চুপিসারে বেরিয়ে একটি গাড়িতে উঠে চলে যান। তাঁর আগমনের খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা ভিআইপি ফটক এবং আন্তর্জাতিক যাত্রীদের বের হওয়ার পথে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর বক্তব্য জানতে। কিন্তু তিনি সবার চোখ এড়িয়ে অন্য পথে বেরিয়ে যান। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি দেশ ছাড়ার জন্য যখন বিমানবন্দরে যান, সেদিনও তাঁকে কালো টুপি ও মাস্ক পরে মাথা নিচু করে হেঁটে যেতে দেখা যায়।
তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব এবং আওয়ামী লীগের পদ হারালেও মুরাদ হাসান এখনো সংসদ সদস্য রয়েছেন। তাঁর দেশ ছাড়া, আবার ফিরে আসা নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে নানা আলোচনা থাকলেও এ বিষয়ে মুরাদ, তাঁর পরিবার বা সংশ্লিষ্ট আর কারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
‘নতুন দেশ’সহ কানাডাভিত্তিক একাধিক অনলাইনের বরাত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হয়, টরন্টো বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর মুরাদ হাসানকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিকদের অভিযোগের কারণে পদ হারানো ওই প্রতিমন্ত্রী ভিসা থাকার পরও উত্তর আমেরিকার দেশটিতে প্রবেশের সুযোগ পাননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার খলিলুর রহমান শনিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (মুরাদ হাসান) কানাডায় এসে পৌঁছেছেন কি না, তা নিয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। কয়েক মাস আগে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময় কানাডা সফরের আগে আমাদের জানানো হয়েছিল। একজন সাংসদ হিসেবে প্রটোকল-সুবিধার জন্য প্রায় সব সময় মিশনকে জানানো হয়। কিন্তু মুরাদ হাসানের কানাডা সফরের বিষয়ে হাইকমিশনে কেউ যোগাযোগ করেননি।’
কানাডার অভিবাসন দপ্তর সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে ঢুকতে বাধা দিয়েছে, এমন খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিককে নিয়ে ইমিগ্রেশনে কোনো সমস্যা দেখা দিলে হাইকমিশনকে জানানোর কথা। কিন্তু কানাডার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আমাদের কনস্যুলেটে এ নিয়ে কোনো যোগাযোগ করেনি।’
নারীর প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ, অশালীন ও অবমাননাকর বক্তব্য এবং টেলিফোনে এক চিত্রনায়িকাকে অশালীন মন্তব্য এবং হুমকি দেওয়ার অডিও ফাঁস হওয়ার জেরে গত মঙ্গলবার তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন মুরাদ হাসান। সেদিনই জামালপুর আওয়ামী লীগের পদ থেকেও তাঁকে সরানো হয়। এরপর মুরাদ হাসান লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। কোথাও তাঁর খোঁজ না মিললেও বৃহস্পতিবার রাতে তিনি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে উপস্থিত হন এবং দুবাই হয়ে কানাডায় যাওয়ার উদ্দেশে মধ্যরাতে এমিরেটসের ফ্লাইটে ওঠেন। কিন্তু কানাডায় ঢুকতে না পেরে আবার দুবাইয়ে ফেরেন এবং গতকাল ঢাকামুখী ফ্লাইটে ওঠার আগপর্যন্ত দুবাই বিমানবন্দরেই ছিলেন বলে জানা গেছে।