নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক স্থাপনা দরাসবাড়ি মসজিদ

অযত্ন-অবহেলা ও নজরদারির অভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক দরাসবাড়ি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।দরাসবাড়ি মসজিদসহ গৌড় নগরের বিভিন্ন স্থাপনার দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত শারাফত আলী জানান, বৃষ্টির পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে ছাদহীন এই মসজিদের দেয়াল। সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে তা রক্ষা করা যেতে পারে। বিষয়টি একাধিকবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।পাঁচ শতাধিক বছর আগের সুলতানি আমলের বাংলার রাজধানী গৌড় নগরের অংশ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের সোনামসজিদ এলাকা। সোনামসজিদ, শাহ সুজার প্রাসাদসহ নানা স্থাপনা মনে করিয়ে দেয় ঐতিহাসিক গৌড় নগরের ঐতিহ্য। এর মধ্যে ভারত সীমান্তের কোল ঘেঁষে সোনামসজিদ স্থলবন্দরের এক-দেড় কিলোমিটারের মধ্যেই ছাদহীন দরাসবাড়ি মসজিদের অবস্থান। চারদিকেই ঘন আমবাগান। সামনে স্বচ্ছ পানির প্রায় দিঘির মতো পুকুর। প্রায়ই নির্জন ও সুনসান নীরবতায় উদাস হবে মন।দরাসবাড়ি মসজিদের তথ্যস ংবলিত একটি আরবি শিলালিপিতে ৮৮৪ হিজরি তথা ১৪৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদটি স্থাপিত হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। দুই অংশে বিভক্ত এই মসজিদের আয়তন যথাক্রমে ৯৯ ফুট ৯ ইঞ্চি ও ৩৪ ফুট ৯ ইঞ্চি। ছাদহীন মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে এখনো অক্ষত আছে কারুকার্যখচিত মেহরাব। তবে মসজিদটির ছাদ ধসে পড়েছে নাকি নির্মাণকাজ অসমাপ্ত ছিল তা জানা যায়নি। এই মসজিদটি বাংলার প্রথম যুগের মুসলিম স্থাপত্যের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন।কোলাহলমুক্ত ঐতিহাসিক নিদর্শন পরিদর্শনে আগ্রহী পর্যটকদের তাই আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে দরাসবাড়ি মসজিদ। এমনই একজন পর্যটক ঢাকায় বসবাসকারী কর্মজীবী নারী শামীম আরা। ঐতিহাসিক গৌড় নগরসংক্রান্ত পড়াশোনা করে তাঁর আগ্রহ জন্মে গৌড় নগরের বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শনের। বিশেষ করে নির্জন এলাকায় অবস্থিত দরাসবাড়ি মসজিদ ও তার পাশেই অবস্থিত অসমাপ্ত দরাসবাড়ি মাদ্রাসা এবং তার চার পাশের পরিবেশ। এমন নির্জন পরিবেশে পরিবার-পরিজন নিয়ে দরাসবাড়ি মসজিদ দেখতে এসে তাঁর একটু অন্য রকম ভালোলাগা অনুভূত হয়। কিন্তু মসজিদের বেহাল দশা দেখে তিনি দারুণভাবে মর্মাহত হন। অভিযোগ করেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঐতিহাসিক নিদর্শনটি।সরেজমিনে দেখা যায়, নজরদারির অভাবে মসজিদের ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে আশপাশের মানুষ। দেয়ালের ওপরে প্রতিরোধক কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি চুইয়ে ঢুকছে দেয়ালের ভেতর।শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ জেড এম সারজিল হাসান বলেন, মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। মসজিদটি সংস্কার ও সেখানে পর্যটকদের জন্য টয়লেট নির্মাণের বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে।