ধানের শীষ নয়, উদীয়মান সূর্য!
ঋণখেলাপির অভিযোগ থাকায় মানিকগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না। তবে এই আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল গণফোরামের (উদীয়মান সূর্য প্রতীক) প্রার্থী রয়েছেন। ভোটাররা বলছেন, জোটের অন্তর্ভুক্ত দল হিসেবে গণফোরামের প্রার্থীই এই আসনে ভরসা।
সাধারণ ভোটারদের ধারণা, এই আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনে সুযোগ না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী কিছুটা স্বস্তিতে আছেন। কারণ, এই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। যেহেতু বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনের সুযোগ নেই, তাই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল গণফোরামের প্রার্থী মজিফুল ইসলাম খান ওরফে কামালের পাশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা থাকলে এবং নির্বাচনী মাঠে কাজ করলে এই আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ পৌরসভা, সাটুরিয়া উপজেলা এবং জেলা সদরের সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জ-৩ আসন ভোটের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭০৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩৩৭ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৬১ হাজার ৩৭০ জন।
এই আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান এবং সদর উপজেলা পরিষদের পদত্যাগী চেয়ারম্যান আতাউর রহমানকে বিএনপি দলীয়ভাবে প্রাথমিক মনোনয়ন দেয়। পরবর্তীকালে দলটি আফরোজা খানকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়। এতে আতাউর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। আর ঋণ খেলাপের অভিযোগে সোমবার আফরোজা খানের প্রার্থিতার ওপর উচ্চ আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এ কারণে তাঁর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।
এই আসনে গণফোরামের প্রার্থী মফিজুল ইসলাম খান উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি ১৯৭৩ সালে এই আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৯৩ সালে গণফোরাম প্রতিষ্ঠা হলে প্রবীণ এই রাজনৈতিক দলে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি গণফোরামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সভাপতি পদে রয়েছেন।
মফিজুল ইসলাম খান বলেন, ড. কামাল হোসেন শুধু গণফোরামেরই সভাপতি নন, তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেরও শীর্ষ নেতা। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক দল বিএনপি। এ জন্যই বিএনপির নেতা-কর্মীরাও তাঁর জন্য প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেবেন বলে তিনি আশাবাদী। আর দু-এক দিনের মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে তিনি আলোচনা করবেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার জেলা সদরের গড়পাড়া এলাকায় মাইকে প্রচারণার সময় প্রচার কাজে ব্যবহৃত অডিও সিডি ও তাঁর লিফলেট কেড়ে নেওয়া হয়।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি জামিলুর রশিদ খান বলেন, বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে সরকার বিএনপির প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আইনের শাসনের অনুপস্থিতির কারণে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা খান নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ হারিয়েছেন। আইনের শাসন থাকলে এটা হতো না। এতে বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গায় সংকটের সৃষ্টি হয়। গণফোরামের প্রার্থীর পক্ষে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের বিষয়ে জামিলুর রশিদ বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক ফোরামের নির্দেশনা অনুযায়ী দলের নেতা-কর্মীরা কাজ করবেন।
এই আসনে বর্তমানে পাঁচজন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ মালেক, উদীয়মান সূর্য প্রতীকে গণফোরামের প্রার্থী মফিজুল ইসলাম খান, লাঙ্গল প্রতীকে জহিরুল ইসলাম, কোদাল প্রতীকে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রফিকুল ইসলাম এবং হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. ইব্রাহিম হোসেন প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।