করোনার টিকার জন্য অগ্রাধিকারভুক্ত জনগোষ্ঠীর তালিকা তৈরি করতে জেলা প্রশাসক, মেয়র ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অ্যাপে নিবন্ধনের বিকল্প হিসেবে এই তালিকা ব্যবহারের কথা ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে অনেক স্থানে এই তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়নি।
১৩ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃ, নবজাতক ও শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক মো. শামসুল হক দেশের সব জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে টিকাগ্রহীতাদের তালিকা তৈরি করতে বলেছেন। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে এই তালিকা সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
এর আগেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃ, নবজাতক ও শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচির পক্ষ থেকে জেলা পর্যায়ের টিকাগ্রহীতাদের তথ্য জানার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন সিভিল সার্জনদের তথ্য দিতে বলা হয়েছিল। বেশ কয়েকটি জেলা থেকে অসম্পূর্ণ ও অসংলগ্ন তথ্য পেয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরে সেই উদ্যোগ বাতিল করা হয়। এবার তথ্য চাওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে। জেলা প্রশাসক জেলার করোনা টিকা প্রয়োগ কমিটির সভাপতি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা অ্যাপটির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে অ্যাপ ব্যবহারে ঝামেলা হতে দেখা গেছে। এসব অভিজ্ঞতা থেকে বিকল্পও ভেবে রেখেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, টিকা নিতে হলে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস এবং এটুআই একটি অ্যাপ তৈরি করছে। আজ ২৩ জানুয়ারি সেই অ্যাপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা যাচাইয়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা। ২৫ জানুয়ারি সেই অ্যাপ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। ১১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ও ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে অ্যাপের ব্যবহার সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানানো হয়।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের তিন জেলার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে প্রথম আলোর প্রতিনিধির গতকাল শুক্রবার বিকেলে কথা হয়েছে। একজন জেলা প্রশাসক প্রথম আলোকে বলেছেন, টিকাগ্রহীতাদের তালিকা তৈরির ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো চিঠি সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। পাশের জেলার জেলা প্রশাসক বলেন, জেলা প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছে। তালিকা তৈরির কোনো নির্দেশনা তাঁরা পাননি।
একটি জেলার জেলা প্রশাসক বলেছেন, বিভিন্ন দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য সমন্বয় করে একটি তালিকা তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছেন। আগামী রোববার সেই তালিকা তাঁরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। খুলনা জেলার দক্ষিণের একটি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
টিকা নিয়ে দুশ্চিন্তা কিছুটা দূর হয়েছে। শৃঙ্খলা রক্ষা করে ঠিক মানুষকে টিকা দিতে হবে। তাড়াহুড়া করার কিছু নেই। বিশৃঙ্খলা হলে মানুষের আস্থা নষ্ট হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোর এই প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা প্রত্যেকেই অ্যাপটির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে অ্যাপ ব্যবহারে ঝামেলা হতে দেখা গেছে। এসব অভিজ্ঞতা থেকে বিকল্পও ভেবে রেখেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাপের ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী। কোনো কারণে অ্যাপ ব্যবহারে বিলম্ব হলে টিকা কার্যক্রম যেন বন্ধ না রাখতে হয়, তাই তালিকা তৈরি হচ্ছে। অনেকটা বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এটা করা হচ্ছে। এতে কাজে শৃঙ্খলা থাকবে।
চিঠিতে কী আছে
‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্য উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত ও সরবরাহ প্রসঙ্গে’ শীর্ষক চিঠিতে বলা হয়েছে, যাঁদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি, যেসব জনগোষ্ঠী থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা বেশি এবং আক্রান্ত হলে জটিলতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি, এমন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানভিত্তিক তালিকা তৈরি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সম্মুখসারির কর্মীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
এরপর ১৫টি জনগোষ্ঠীর তালিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, প্রতিরক্ষাকাজে নিয়োজিত বাহিনীর সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মী, ধর্মীয় প্রতিনিধিরা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, নৌ-রেল-বিমানবন্দরে কর্মরত ব্যক্তি, মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারি কার্যালয়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী। চিঠিতে নির্দিষ্ট ছকে তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। তাতে অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে নাম, পেশা ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিতে বলা হয়েছে।
সরকারের প্রস্তুতির ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিকা নিয়ে দুশ্চিন্তা কিছুটা দূর হয়েছে। শৃঙ্খলা রক্ষা করে ঠিক মানুষকে টিকা দিতে হবে। তাড়াহুড়া করার কিছু নেই। বিশৃঙ্খলা হলে মানুষের আস্থা নষ্ট হবে।’