জয়ীদের দুজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোনার পাঁচটি আসনে জয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে দুজন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন খেতাবপ্রাপ্ত। এ ছাড়া জয়ী একজন প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের স্ত্রী।ওই দুই মুক্তিযোদ্ধা হলেন নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনের মো. আশরাফ আলী খান খসরু ও নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীর প্রতীক।
নেত্রকোনা-৪ (মোহনগঞ্জ-মদন-খালিয়াজুরি) আসনে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রয়াত আবদুল মমিনের স্ত্রী রেবেকা মমিন জয়ী হয়েছেন।জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে নেত্রকোনার পাঁচটি আসনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ বিভিন্ন দলের ২৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সব কটি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হন।
আশরাফ আলী মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ নম্বর সেক্টরে টাইগার কোম্পানির প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে নেত্রকোনার বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন। মাধ্যমিক স্কুল থেকে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি নেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন খানের চেয়ে ৮৬ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে প্রথমবার নির্বাচিত হন। দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়নবঞ্চিত হন। এবার তিনি ২ লাখ ৮৪ হাজার ২০৯ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুল হক পান ৩০ হাজার ৭২২ ভোট। আশরাফ আলীর বাবা প্রয়াত নুরুল ইসলাম খানও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক।
ওয়ারেসাত বেলালের পরিবারের প্রায় সবাই মুক্তিযোদ্ধা। তিনি নিজে বীর প্রতীক। তাঁর বড় ভাই কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম খেতাব পাওয়া। আরেক বড় ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনও মুক্তিযোদ্ধা। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে হাতেখড়ি ওয়ারেসাত বর্তমানে পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে প্রথম সাংসদ হন। টানা তিনবার নির্বাচিত হয়ে এবার তিনি ‘হ্যাটট্রিক’ করলেন। এবার তিনি ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪৭৫ ভোট পান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির মো. আবু তাহের তালুকদার পান ১৫ হাজার ৬৩৮ ভোট।
রেবেকা মমিন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবদুল মমিনের স্ত্রী। রেবেকা ষাটের দশকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হন। এরপর দলের বিভিন্ন পদে থেকে বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হন। টানা তিনবার নির্বাচিত হয়ে তিনিও এবার ‘হ্যাটট্রিক’ করেছেন। এবার তিনি নৌকা প্রতীকে ২ লাখ ৪ হাজার ৪৪৩ ভোট পান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী বিএনপির তাহমিনা জামান পান ৩৮ হাজার ১৮১ ভোট।
জেলার অপর দুই জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনে মানু মজুমদার পান ২ লাখ ৪৯ হাজার ১৭৭ ভোট। নেত্রকোনা (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে অসীম কুমার উকিল পান ২ লাখ ৭০ হাজার ১৪৪ ভোট।