আজ বিশ্ব বন দিবস
জীবন বাঁচাতে বন সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার
বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর যে পরিমাণ বন উজাড় হচ্ছে, তার তুলনায় বাংলাদেশে বেশি হচ্ছে। উজাড় হওয়া থেকে সংরক্ষিত বনও রক্ষা পাচ্ছে না।
বিংশ শতাব্দীতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জল জঙ্গলের কাব্য উপন্যাসে অরণ্যঘেরা সুন্দরবনের অধিবাসীদের জীবন আর লোকবিশ্বাস চমৎকারভাবে উঠে এসেছে। সাহিত্য ও ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে বন আর জনমানুষ উপজীব্য হয়ে উঠে এসেছে। সপ্তম শতকের প্রথম ভাগে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন-সাং জানান, তৎকালীন পুণ্ড্রবর্ধন তথা বর্তমান বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া অঞ্চল এবং সমতট তথা বর্তমান বৃহত্তর যশোর, ঢাকা ও ফরিদপুর অঞ্চল গভীর বন ও বন্য প্রাণীতে পরিপূর্ণ ছিল। ষোড়শ শতাব্দীতে ইতিহাসবিদ আবুল ফজল আইন-ই-আকবরী বইতে সুবাহ বাংলার বিবরণে কুষ্টিয়া ও যশোর পর্যন্ত সুন্দরবনের বিস্তৃতির কথা উল্লেখ করেছেন। এসেছে অনেক কুমির ও বাঘের কথাও।
১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে সেন বংশের সর্বশেষ রাজা লক্ষ্মণ সেন তুর্কি সেনাপতি বখতিয়ার খলজির আক্রমণ প্রতিহত না করে পূর্ব দিকে গভীর বনজঙ্গলের ভেতরে আত্মগোপন করেছিলেন। ওই সময়ের আরব বণিকদের বর্ণনাতেও গভীর বনজঙ্গলবেষ্টিত, সাপের মতো বিস্তৃত অসংখ্য নদ-নদীবিধৌত বাংলার দেখা মেলে। পুরো বাংলাজুড়েই ছিল গভীর বনের মিতালি। কালের যাত্রায় বন ক্রমেই ক্ষীণকায় হয়ে আসছে। মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ডেই বনভূমি প্রাণ হারাচ্ছে।
আজ আন্তর্জাতিক বন দিবস। ২০১২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন এ দিনকে আন্তর্জাতিক বন দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ‘বন পুনরুদ্ধার: উত্তরণ ও কল্যাণের পথ’। এ বছরের ৫ জুন থেকে জাতিসংঘের বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার দশকও (২০২১-৩০) শুরু হতে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী প্রতিটি মহাদেশে এবং সমুদ্রে বাস্তুসংস্থানের অবক্ষয় প্রতিরোধ ও পুনরুদ্ধারই এ দশকের লক্ষ্য। দেখা দরকার, কেমন আছে বাংলাদেশের বন-বনানী?
উজাড় হচ্ছে বন
বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর যে পরিমাণ বন উজাড় হচ্ছে, তার তুলনায় বাংলাদেশে বেশি হচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, বিশ্বব্যাপী ২০০০-২০১৫ সময়কালে প্রায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ বন উজাড় হয়েছে। বাংলাদেশে তা ২ দশমিক ৬ শতাংশ। দেশে বছরে ২ হাজার ৬০০ হেক্টর বন উজাড় হয়। উজাড় হওয়া থেকে সংরক্ষিত বনও রক্ষা পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে পরিচিত দেশের সংরক্ষিত বন ‘সুন্দরবনের’ বিস্তার ও ঘনত্ব উভয়ই কমছে। বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণের সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, গত দুই দশকে (২০০০-২০) সুন্দরবনের গাছপালার পরিমাণ মারাত্মক হারে কমেছে। কমছে বনের ঘনত্বও। বন উজাড় হয়ে ফাঁকা বা পতিত জমির পরিমাণ বাড়ছে। সুন্দরবনের বিস্তার আগের তুলনায় কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ১৭৭৬ সালে বাংলাদেশ অংশের পুরো বনের বিস্তার ছিল ১৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ অংশের পুরো বনের বিস্তার ৬ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার। সংরক্ষিত বনের যদি এ দশা হয়, তাহলে অসংরক্ষিত বনাঞ্চলের অবস্থা কী!
অবৈধ দখল বাড়ছেই
দেশে মোট বনভূমির পরিমাণ ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ একর। তবে বনভূমির একটি বিশাল অংশ প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল করে নিচ্ছেন। সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বন বিভাগের উপস্থাপিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা দেশে ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ একর বনভূমি দখল হয়ে গেছে। ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৬৬ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান এসব বনভূমি জবরদখল করে রেখেছেন। জমি দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ, কৃষিকাজ থেকে শুরু করে তৈরি করা হয়েছে শিল্পকারখানা।
বন বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দখলদারদের মধ্যে ৮৮ হাজার ২১৫ জন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ দশমিক শূন্য ৬ একর সংরক্ষিত বনভূমি দখল করেছেন। ৮২০ একর সংরক্ষিত বন দখল করে স্থায়ী স্থাপনাসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা করেছেন ১৭২ জন। ৪ হাজার ৯১৪ একর বন দখল করে ৩ হাজার ৩২৯ জন গড়েছেন হাটবাজার, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কটেজ, ফার্ম, রিসোর্ট ইত্যাদি। ঘরবাড়ি করেছেন ৫৮ হাজার ৪০৭ জন। স্থায়ী স্থাপনা না করে কৃষিকাজ, বাগান ইত্যাদি করেছেন ২৬ হাজার ৩০৭ জন। এ ছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন কাজে পাহাড়-টিলা কাটা বা অন্য কোনো উপায়ে ভূমিরূপ পরিবর্তন করা যাবে না বলা হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাহাড় কাটা চলছেই। ফলে পাহাড়ি বন এবং পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। হারাচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
বনজ সম্পদের অনিয়ন্ত্রিত আহরণ
বনের জীববৈচিত্র্য, সংরক্ষণ ও প্রজননের কথা চিন্তা না করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে অতিরিক্ত আহরণের কারণে বনজ সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য দুই–ই নষ্ট হচ্ছে। বাজারে বনজ সম্পদের চাহিদা এবং দাম বেশি থাকায় মুনাফার লোভে একশ্রেণির মানুষ এ কাজে যুক্ত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, গত দুই দশকে (২০০০-২০) সুন্দরবনে দামি গাছ, মধু ও বড় মাছের পরিমাণ কমেছে। উন্নয়ন অন্বেষণ খুলনার কয়রা উপজেলায় বনজীবীদের অংশগ্রহণে ভৌগোলিক তথ্যব্যবস্থার মাধ্যমে এই গবেষণা করে। বনজ সম্পদ—গাছ, মধু এবং বড় মাছের ওপর ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩০ কিলোমিটার প্রস্থ একটি অঞ্চলে গবেষণাটি করা হয়।
সুন্দরবনের কাঠুরিয়া সম্প্রদায় বাওয়ালি নামে পরিচিত। তাঁদের তথ্যানুসারে, গত দুই দশকে সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দামি গাছ আহরণের পরিমাণ বাড়ছে। স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও অনিয়ন্ত্রিত আহরণ বাড়ায় মূল্যবান গাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। জেলেরা বলছেন, বিভিন্ন অঞ্চলে মাছের পরিমাণ কমেছে। মৌয়ালরাও একই কথা বলছেন। দুই দশকে বিভিন্ন অঞ্চলে মধু ও মোম পাওয়ার পরিমাণও কমেছে।
বনজীবীদের মতে, সংরক্ষণ ও পুনরুৎপাদনের কথা চিন্তা না করে অতিরিক্ত ও অবৈধ আহরণের কারণেই দামি গাছ, মধু এবং মাছের পরিমাণ কমছে। যেমন সরকারিভাবে কাঁকড়া ধরা বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও প্রতিবছরের মতো এবারও জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে অবাধে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া নিধন হয়েছে। এই দুই মাসে মা কাঁকড়া কোটি কোটি বাচ্চা ছাড়ে। উপকূলীয় এলাকার হাজারো জেলে এই কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বিদেশে রপ্তানি করে বছরে প্রায় দুই কোটি ডলার আয় হয়।
টেকসই আহরণে লোকজ জ্ঞান
বনজ সম্পদ আহরণে বনজীবীরা নির্দিষ্ট পন্থা ও নিয়মকানুন অনুসরণ করেন। উদাহরণস্বরূপ, সুন্দরবনের মৌয়ালরা এপ্রিল, মে ও জুন মাসে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। মৌচাকের একটি নির্দিষ্ট অংশ (প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ) কেটে বাকি অংশ পরবর্তী প্রজননের জন্য রেখে দেন। ধাতব সরঞ্জাম ব্যবহার না করে হাতে মধু সংগ্রহ করার চেষ্টা করায় অল্পবয়স্ক মৌমাছি মারা যায় না। শুকনো পাতা ব্যবহার করে ধোঁয়া তৈরি করায় ও আগুন না লাগানোয় মৌমাছি মারা পড়ে কম। মৌচাকটি পুনরায় ব্যবহৃত হয়।
গোলপাতা সংগ্রহকারীরাও নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করেন। বছরে একাধিকবার একই অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করেন না। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন গোলপাতা জন্মানোর সময় সংগ্রহ করেন না। পাতা প্রায় ৯ ফুট লম্বা হলেই কাটেন। কচি গাছ কাটা হয় না। এমনভাবে কাটেন যাতে গাছের কেন্দ্রীয় পাতা এবং তার পাশের পাতার কোনো ক্ষতি না হয়। বনজীবীদের ছাড়া বহিরাগতদের এসব প্রথাগত কৌশল জানা থাকে না। মুনাফা লক্ষ্য হওয়ায় বহিরাগতরা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বনজ সম্পদ সংগ্রহ করেন।
কোভিড-১৯, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বন
সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, শিল্পায়ন, কৃষি সম্প্রসারণ ও নগরায়ণের ফলে বিশ্বব্যাপী বন ও বনভূমি কমছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী উপকূলের নিচু এলাকা তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলবর্তী নিচু এলাকা সাগরের লোনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের মাটি-পানি ক্রমেই লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলার কারণে নতুন নতুন অণুজীব আমাদের চারপাশের পরিবেশে অবমুক্ত হচ্ছে। ফলে কোভিড-১৯–এর মতো আরও নিত্যনতুন রোগের সংক্রমণ শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা আছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বনভূমি বৃদ্ধি, সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের বিকল্প নেই। বন স্বাস্থ্যকর বাতাস, পুষ্টিকর খাবার, পরিষ্কার পানীয় জল, বিনোদন ইত্যাদির উৎস। উন্নত দেশগুলোতে ২৫ শতাংশ ওষুধের কাঁচামাল উদ্ভিদ থেকে আসে। আর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই অবদান ৮০ শতাংশের বেশি। সুতরাং সুস্থ জীবনধারণের জন্য বনের জীবন বাঁচানো অত্যাবশ্যকীয়।
গত কয়েক বছরে প্রাকৃতিক বনের বাইরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গাছ বেড়েছে। তবে বেশির ভাগই গ্রামে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বৃক্ষরোপণ, বাণিজ্যিক ফলবাগান এবং সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে হয়েছে। নতুন জেগে ওঠা উপকূলীয় চরে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমেও কিছু বনায়ন হয়েছে। সরকারের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। ব্যাপক পরিসরে আরও সম্প্রসারণের প্রয়োজন। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন প্রাকৃতিক বনাঞ্চল সংরক্ষণে গুরুত্বারোপ ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ।
আইনের যুগোপযোগীকরণ ও যথাযথ বাস্তবায়ন
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে বন উজাড়কারী ও দখলদার ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। আইনের তোয়াক্কা না করে সংরক্ষিত এলাকাগুলোর মধ্যেই ‘উন্নয়ন’ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনের যুগোপযোগীকরণ ও যথাযথ বাস্তবায়ন করা না গেলে বন সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়।
বন আইনের যুগোপযোগীকরণ ও প্রয়োগ দরকার। প্রণীত খসড়া বন আইন ২০১৯–এর বিভিন্ন দিকের ওপর সর্বসাধারণের মতামত চাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকৃতিবিষয়ক সংগঠনগুলোর জোট আইইউসিএন, বাংলাদেশ জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে মতামত ও প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। বন লালন ও সংরক্ষণে বনবাসী ও বনজীবীদের বিভিন্ন ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও প্রথাগত টেকসই পন্থাগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক বন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্তি দরকার। বনবাসী ও বনজীবীদের বিভিন্ন ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও প্রথার চর্চা বাড়াতে পারলে বন ও বনভূমি সংরক্ষণ ত্বরান্বিত হবে। বন ব্যবস্থাপনায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার এবং বনজীবীদের অংশগ্রহণ আবশ্যিক। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আইনের প্রতিপালনও জরুরি।
জীবন বাঁচাতে নতুন রেনেসাঁস
মানুষ প্রকৃতি ধ্বংসে দায়ী; তেমনি মানুষের দ্বারাই প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পেতে পারে। মানুষ ও প্রকৃতির আন্তসম্পর্কের মাধ্যমে পরস্পর সহযোগিতা ও নির্ভরশীলতার মাধ্যমে বনভূমি পুনরুদ্ধারের নতুন রেনেসাঁস জরুরি। মোটা দাগে এভাবে চিন্তা শুরু করা যেতে পারে। প্রতিটি গাছ পরিবেশের অকৃত্রিম বন্ধু। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একটি গাছকে বাঁচাতেও উন্নয়ন নকশায় পরিবর্তনের নজির আছে। ক্ষুদ্র পরিসরে বৃক্ষরোপণ এবং পুনরুদ্ধার প্রকল্পও পরিবেশে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা, বায়ু দূষণ হ্রাস, পরিবেশ শীতলকরণ এবং বন থেকে অন্যান্য পরিষেবার গুণগত পরিমাণ বাড়াতে বনের জীবন বাঁচানো জরুরি।
প্রথমত, বন সংরক্ষণের মাধ্যমেই শোভন ও পরিবেশবান্ধব জীবিকার ব্যবস্থা হতে পারে। বন থেকে বিশ্বব্যাপী ৮৬ কোটির বেশি কাজের ব্যবস্থা হয়। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বন সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করা গেলে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনব্যবস্থা নিশ্চিত করা যাবে, সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান। দ্বিতীয়ত, বন সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে দরকার স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্তকরণ ও ক্ষমতায়ন। বনবাসী এবং বনজীবীদের অংশগ্রহণে সহব্যবস্থাপনা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। তাহলে স্থানীয় জনগণই বন ও বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসবে। তা ছাড়া বনের জন্য ক্ষতিকর এমন কাজ থেকে নিজেরাও বিরত থাকবে। তৃতীয়ত, সরকারি, বেসরকারি ও স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রয়াসে বিভিন্ন বাস্তুসংস্থানের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আইইউসিএনের টাঙ্গুয়ার হাওর, কক্সবাজার, নিঝুম দ্বীপসহ কয়েকটি প্রকল্পের শিক্ষণের আলোকে আরও সহব্যবস্থাপনা প্রকল্প নিতে হবে। সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে সারা দেশের বাস্তুসংস্থানে ঝুঁকি হ্রাস সম্ভব। মূলত নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই বন ও বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা অতীব জরুরি। বন বাঁচলেই মানুষ বাঁচবে। একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ এবং সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য বন সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের বিকল্প নেই।
●রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এবং ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’-এর চেয়ারপারসন। আইইউসিএন এশীয় অঞ্চলের সদস্যদের কমিটির ভাইস চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশের আইইউসিএন জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন। [email protected]