জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরেনি, পদোন্নতি পদায়ন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ
গত ১৫ বছরে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে রাজনৈতিক বিবেচনা ছিল মুখ্য, যা প্রশাসনের শৃঙ্খলাকে নষ্ট করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ৮ আগস্ট থেকে জনপ্রশাসনে ৪৭১ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পরও জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরেনি। কর্মকর্তাদের কেউ ব্যস্ত পদোন্নতি নিয়ে, কেউ ব্যস্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে যেতে, আবার কেউ তদবির করছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) হতে। প্রায় প্রতিদিনই সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে ভিড় করছেন তদবিরকারী কর্মকর্তারা।
এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপসচিব পদমর্যাদার ৫০–৬০ কর্মকর্তা, যাঁরা ডিসি হতে পারেননি, তাঁরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ (এপিডি) শাখায় গিয়ে হইচই–হট্টগোল করেন। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ অবস্থা চলে। এরপর তাঁরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে যান। গত দুই দিনে ডিসি নিয়োগের দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হবে—এমন আশ্বাস পেয়ে তাঁরা ফিরে যান।
মাঠ প্রশাসনেও একধরনের অস্থিরতা রয়েছে। যে কারণে প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ২৫ জেলায় এবং গতকাল মঙ্গলবার ৩৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে পেট্রোবাংলা, এলজিইডি, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ–আন্দোলন করছেন। এতে ওই সব দপ্তরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে প্রশাসনের ওপর এত চাপ তৈরি হয়নি। গত ১৫ বছরে ব্যাপক দলীয়করণ, মেধা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগের কারণে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সময় লাগবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, কারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল এবং কাউকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করায় এখন সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদ খালি। এসব মন্ত্রণালয়ের কাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
দুই সপ্তাহে তিন ধাপ পদোন্নতি
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জনপ্রশাসনে প্রথম বড় পদোন্নতি হয় গত ১৩ আগস্ট। ওই দিন ১১৭ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবকে উপসচিব করা হয়। এর এক সপ্তাহের মধ্যে ২২৩ উপসচিবকে যুগ্ম সচিব করা হয়। এরপর ২৫ আগস্ট ১৩১ কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব করা হয়। সব মিলিয়ে ৮ আগস্ট থেকে অন্তর্বর্তী সরকার ৪৭১ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ২৪ কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে উপসচিব, এরপর যুগ্ম সচিব ও সর্বশেষ পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন। ৫ আগস্টের আগেও তাঁরা ছিলেন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব। চাকরির বাকি সময়ে পদোন্নতি হবে না—এমনটা নিশ্চিত জেনে অবসরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাঁরা। ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হচ্ছে।
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এমন আলোচনাও আছে, অল্প সময়ের ব্যবধানে তিন ধাপে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এখন হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ পদে গিয়ে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাঁদের কারও কারও সমস্যা হতে পারে।
বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাবেক রেক্টর ও সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, অল্প সময়ে যাঁরা জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন, তাঁদের উচিত হবে নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করা। তাঁরা যে যোগ্য ছিলেন, এখন কাজের মাধ্যমে তাঁদের প্রমাণ করতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিসিএস ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তা খ ম কবিরুল ইসলাম দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তিন ধাপে পদোন্নতি পান। ১৩ আগস্টের আগপর্যন্ত তিনি ছিলেন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব। পদোন্নতি পেয়ে তিনি এখন অতিরিক্ত সচিব। যদিও তাঁর ব্যাচের কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকজন সচিব হয়ে গেছেন। একইভাবে বিসিএস ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান দীর্ঘদিন ছিলেন পদোন্নতিবঞ্চিত। তাঁর পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে এত বছর পদোন্নতি পাননি। তাঁর ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তা এখন সচিব। জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে মাহবুবুর রহমান এখন অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন।
খ ম কবিরুল ইসলাম ও মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেন, বিগত সরকারের সময়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় তাঁদের পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।
পদোন্নতি পেলেন বিতর্কিতরাও
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, বঞ্চিত ব্যক্তিদের পাশাপাশি বঞ্চিত সেজে কিছু সুবিধাভোগী, বিতর্কিত ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাও পদোন্নতি পেয়েছেন। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন, যাঁর বিরুদ্ধে অপরাধে জড়ানোর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা চলছে এমন কর্মকর্তাও পদোন্নতি পেয়েছেন।
বিসিএস ১৫তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে তিন ধাপে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন এবার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে পরস্পর যোগসাজশে বিবিয়ানা–২ বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৩৩ একর জমি অধিগ্রহণে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দেখিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
ওই ব্যাচের আরেকজন কর্মকর্তা তিন ধাপে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী কিছু কর্মকর্তা অন্তর্বর্তী সরকারেও গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন উপদেষ্টার একান্ত সচিব (পিএস) হয়েছেন। ওই দুজনের একজন বিসিএস ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের একান্ত সচিব ছিলেন। এ ছাড়া বিগত সরকারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন ছিলেন। এবার অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টার একান্ত সচিব হয়েছেন। এ নিয়ে সমালোচনা করছেন বিগত সময়ের বঞ্চিত কর্মকর্তারা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গত এক মাসে সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে শক্তিশালী কোনো বার্তা বা নিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কাজে গতি আনতে হলে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে।
জেলা প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে হট্টগোল
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত দুই দিনে ডিসি হিসেবে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা বিসিএস ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা। ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ হয় বিগত বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালে। ২৫তম ব্যাচের নিয়োগ হয় ২০০৬ সালে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত দুই দিনে দুই দফায় ৫৯ জেলায় ডিসি নিয়োগ দিয়েছে। এ–সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে গতকাল সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেছেন বঞ্চিত এবং ডিসি পদে নিয়োগ পেতে আগ্রহী কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যাঁদের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে, তাঁদের অনেকে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ও আশীর্বাদপুষ্ট। বিগত সময়েও এসব কর্মকর্তা ভালো পদে ছিলেন। নতুন নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানান তাঁরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গতকাল বেলা দুইটার দিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ (এপিডি) শাখার সামনে জড়ো হন উপসচিব পদমর্যাদার ৫০–৬০ কর্মকর্তা। সেখানে তাঁরা বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা এপিডি শাখার যুগ্ম সচিব কে এম আলী আযমের কক্ষে ঢুকে হইচই–হট্টগোল শুরু করেন। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে কেন সুবিধাভোগীদের ডিসি করা হলো, সে বিষয়ে এই কর্মকর্তার কাছে জানতে চান তাঁরা। প্রায় এক ঘণ্টা হইচই করার পর সেখান থেকে সংক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা যান পাশের কক্ষে আরেক যুগ্ম সচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদের কাছে। সেখানেও তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ করা হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে গতানুগতিক চিন্তা করলে হবে না। আবার সবার প্রত্যাশাও বেড়ে গেছে। তবে সবার দাবি একসঙ্গে পূরণ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সময় দিতে হবে
বিক্ষোভাকারী কর্মকর্তারা বিসিএস ২৪তম, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
বিক্ষেোভে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, যে ৫৯ জনকে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশাসনে ভালো পদে ছিলেন। অন্যদিকে তাঁরা আগেও বঞ্চিত ছিলেন, এবারও তাঁদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিক্ষোভের এক পর্যায়ে গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বঞ্চিত কর্মকর্তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে যান। আধা ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে বঞ্চিত কর্মকর্তারা বের হয়ে সাংবাদিকদের জানান, তাঁরা আশ্বস্ত হয়েছেন যে ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলবেন।
দুটি প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ডিসি হিসেবে এবার নিয়োগ পাওয়া কোনো কোনো কর্মকর্তা বিগত সরকারের সময়ও মন্ত্রীদের একান্ত সচিব ছিলেন। কেউ কেউ ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কেউ কেউ মাঠ প্রশাসনে ইউএনও এবং এডিসি থাকার সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েন। কেউ কেউ সচিবের একান্ত সচিব ছিলেন।
সাত মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব নেই
১৪ আগস্ট বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন করে এ মন্ত্রণালয়ে সচিব দেওয়া হয়নি। ফলে এ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন উন্নয়ন প্রকল্প ও প্রশাসনিক কাজ স্থবির হয়ে আছে। এরপর ২ সেপ্টেম্বর নৌপরিবহনসচিব মোস্তফা কামালকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মককর্তা (ওএসডি) করা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদ খালি আছে। এর বাইরে পরিকল্পনা কমিশনে সচিব পদমর্যাদার একটি পদ শূন্য আছে।
সচিব না থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলোা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ, জাতীয় সংসদ সচিবালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেছেন, যেকোনো অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগে। প্রশাসনে যতটা বিশৃঙ্খলার কথা বলা হচ্ছে, বিষয়টি সে রকম নয়। অন্যদিকে প্রশাসনে যাঁরা বঞ্চিত ছিলেন, তাঁরাই পদোন্নতি পাচ্ছেন। দু–একটা ভুলভ্রান্তি হতে পারে।
পদোন্নতি শুধু প্রশাসনে, বঞ্চিত অন্যান্য ক্যাডার
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পদোন্নতিবঞ্চিত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা শুধু পদোন্নতি পাচ্ছেন। এতে শিক্ষা, তথ্য, কৃষিসহ অন্যান্য ক্যাডারে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পদোন্নতিসহ বিভিন্ন দাবিতে জোট বেঁধেছেন বিসিএস ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ৩১ আগস্ট তাঁরা আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ নামের জোট ঘোষণা করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন।
এ পরিষদের কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়মিত পদোন্নতি হয়। পদের অতিরিক্ত পদোন্নতি দিতে সুপারনিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত) পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অথচ অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা সব যোগ্যতা অর্জন করেও পদোন্নতি পান না। দিনের পরদিন পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকেন।
জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানোর বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইঞা গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে গতানুগতিক চিন্তা করলে হবে না। আবার সবার প্রত্যাশাও বেড়ে গেছে। তবে সবার দাবি একসঙ্গে পূরণ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সময় দিতে হবে।