জঙ্গিবাদ ঠেকাতে আলেমদের সাহায্য নেবে পুলিশ
দেশের এক লাখ মসজিদের ইমাম ও ওলামাদের সাহায্য নিয়ে জঙ্গিবাদ ঠেকানোর পথ খুঁজছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরে দেশের শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক ‘ইসলামের দৃষ্টিতে জঙ্গিবাদ: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক ওই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মো. মনিরুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওই সভায় অতিরিক্ত আইজিপি (এসবি) জাবেদ পাটোয়ারী, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. মোখলেসুর রহমান, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সভা শেষে পুলিশ সদর দপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘বাংলাদেশের এক লাখ ইমাম, ওলামা-মাশায়েখ একযোগে ফতোয়া দেবেন যে, জঙ্গিবাদ ইসলাম ধর্ম পরিপন্থী। জঙ্গিরা পথভ্রষ্ট। তাদের মদদদাতারা বিদেশি, বিধর্মী এবং ইসলাম ধর্মের প্রকাশ্য শত্রু। ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই।’
সভায় আইজিপি শহীদুল হক বলেন, ‘আমরা আপনাদের নিয়ে দেশ থেকে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করতে সক্ষম হব। মতাদর্শের পার্থক্যের কারণে একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে নাস্তিক, মুরতাদ আখ্যা দিয়ে হত্যা করতে পারে না, গুলি-বোমা মারতে পারে না।’ তিনি বলেন, এ দেশে একসময় চরমপন্থী, সর্বহারা, নকশাল আন্দোলন হয়েছিল। বহু তরুণের মগজ ধোলাই হয়েছিল, হত্যা করা হয়েছিল। তারা কিন্তু সফল হয়নি। এখন জঙ্গিবাদের হাত থেকে তরুণদের বাঁচাতে পারেন আলেম-ওলামারাই। যারা এর মধ্যে বিপথগামী হয়েছে, তাদের বিভ্রান্তি দূর করতে পারেন তাঁরাই। ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণী তুলে ধরে প্ররোচনাদানকারীদের ঠেকাতে পারেন তাঁরাই।
আইজিপি বলেন, ইসলাম ধর্ম নিয়ে একেকজন একেক ধরনের কথা বললে মানুষ বিভ্রান্ত হবে। ইসলামের ব্যাখ্যা একই রকম হতে হবে। শহীদ হওয়ার লোভে যেসব যুবক সন্ত্রাসে লিপ্ত হচ্ছে, তাদের সঠিক পথে আনতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো মসজিদ-মাদ্রাসায় খবরদারি করি না, গোয়েন্দা দিতেও চাই না।’ মসজিদে জুমার খুতবার বয়ানে, ওয়াজ মাহফিলে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য আলেম-ওলামাদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
ব্লগার হত্যা প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। এ জন্য কাউকে হত্যা করা উচিত নয়।’
সভায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, এখন চুপ করে বসে থাকার সময় নেই। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলা ইমানি দায়িত্ব, নিজেদের আত্মরক্ষার জন্যও এটা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ওলামা-মাশায়েখদের বয়ান ও ওয়াজ মাহফিলে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। তিনি প্রস্তাব দেন, সারা দেশে প্রায় তিন লাখ ইমাম আছেন, তিন লাখ মুয়াজ্জিন আছেন। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এক লাখ ইমামের স্বাক্ষরসংবলিত একটি ফতোয়া বের করে তা ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি এ বিষয়ে পুলিশের সহযোগিতা চান।
ফরিদ উদ্দিনের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে আইজিপি কীভাবে এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা যায়, সে উদ্যোগ নিতে ফরিদ উদ্দিনকে অনুরোধ জানান। এ জন্য একটি কমিটি গঠনের কথাও বলেন।
সভায় ঢাকার মাওলানা রুহুল আমীন খান উজানী, দেলোয়ার হুসাইন সাইফী, চট্টগ্রামের মাওলানা যাকারিয়া নো’মান ফয়েজী, দিনাজপুরের মাওলানা আইয়ুব আনসারীসহ বেশ কয়েকজন ওলামা অংশ নেন।