ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ২৫৩। শিক্ষক ৫২ জন। শ্রেণিকক্ষ ৪৩টি। করোনাকালে ৩০ মার্চ থেকে কীভাবে শ্রেণি কার্যক্রম চলবে, তার একটি পরিকল্পনা সাজিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে একই শ্রেণিতে পড়া শিক্ষার্থীদের একাধিক ভাগে ক্লাস নেওয়া, শ্রেণিকক্ষে ছয় ফুটের বেঞ্চে দুজন করে এবং চার ফুটের বেঞ্চে একজন শিক্ষার্থীকে বসানো। দুই বেঞ্চের মাঝে একটি বেঞ্চ ফাঁকা থাকবে।
পঞ্চম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণি ছাড়া অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে এক দিন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবে—এমন নির্দেশনা আগেই দিয়ে রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এটি বিবেচনায় নিয়ে ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রথম থেকে চতুর্থ, ষষ্ঠ থেকে নবম এবং একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহের ভিন্ন ভিন্ন দিনে আনা হবে, যাতে অন্তত দুটি শ্রেণির বেশি শিক্ষার্থীদের একই দিনে আসতে না হয়।
রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অবস্থিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল হক জানালেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে তাঁরা স্কুল–কলেজ খোলার বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
স্কুল-কলেজ ৩০ মার্চ খুললেও বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে ২৪ মে থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগেই স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে অনেকের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে একসঙ্গে অসংখ্য শিক্ষার্থী থাকায় এখনই হল খুলতে চাচ্ছে না সরকার। ১ লাখ ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থীকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে চায় সরকার।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজেদের সুবিধামতো প্রস্তুতি নিচ্ছে। করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি চলছে। দীর্ঘ ছুটির কারণে শিক্ষার্থীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি স্কুল, এনজিও পরিচালিত স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন মিলিয়ে দেশের প্রাথমিক স্তরে মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১ লাখ ২৯ হাজার ২৫৮টি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র–ছাত্রী প্রায় ২ কোটি, আর ২০ হাজার ৬৬০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে ১ কোটি ৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ৪ হাজার ৫৫১টি কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় ৪৪ লাখ। দেশের ৯ হাজার ২৭৮টি আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ে প্রায় ২৫ লাখ শিক্ষার্থী।
সরকারি সিদ্ধান্তে ৩০ মার্চ থেকে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। তবে শুরুতে সব শ্রেণির ক্লাস প্রতিদিন হবে না। প্রথমে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের দ্বাদশ, মাধ্যমিক পর্যায়ে দশম এবং প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন (সপ্তাহে ছয় দিন) ক্লাস হবে। আর শুরুর দিকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে এক দিন ক্লাস হবে। নবম ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে দুদিন করে ক্লাস হবে, আর প্রাক্-প্রাথমিকের ক্লাস আপাতত বন্ধই থাকছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জানিয়েছে, ১০ মার্চের মধ্যে প্রস্তুতির বিষয়ে তথ্য দিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে তিন ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। প্রথমত, প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে কি না, দ্বিতীয়ত ৩০ মার্চের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে পারবে কি না এবং তৃতীয়ত ২৯ মার্চের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে না পারলে তার কারণগুলো জানাতে বলা হয়েছে।
মাউশির মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এখন প্রস্তুতির ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি নিজেই প্রতি সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতির পাশাপাশি ১০ মার্চের মধ্যেই শিক্ষকদের টিকা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
স্কুল-কলেজ ৩০ মার্চ খুললেও বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে ২৪ মে থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগেই স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে অনেকের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে একসঙ্গে অসংখ্য শিক্ষার্থী থাকায় এখনই হল খুলতে চাচ্ছে না সরকার। ১ লাখ ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থীকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে চায় সরকার।
নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি
মিরপুরে সরকারি বাঙলা কলেজে গতকাল শনিবার দুপুরে এসেছিলেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাঁদের একজন রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আকতার হোসেন। স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষে পড়া এই শিক্ষার্থী জানালেন, ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য ক্যাম্পাসে এসেছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই কলেজে এখন সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্নাতকের (সম্মান) বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা চলছে। গতকাল ছিল স্নাতকের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা।
ওপরের স্তরের পরীক্ষার পাশাপাশি ৩০ মার্চ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের ক্লাস নেওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারি বাঙলা কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের অধ্যক্ষ ফেরদৌসী খান জানালেন, স্নাতকের (সম্মান) পরীক্ষা চলায় কলেজের শ্রেণিকক্ষগুলো এখন এমনিতেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিতে বাড়তি প্রস্তুতি চলছে। কলেজটিতে একাদশ শ্রেণিতে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী আছে। করোনার আগে কয়েকটি শাখায় এসব শিক্ষার্থীর ক্লাস হতো। প্রতিটি শাখায় ১৫০ জন করে শিক্ষার্থী। এখন বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুন পরিকল্পনায় প্রতিটি শাখায় ৫০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে ক্লাসগুলো করা হবে, আর শিক্ষার্থীদের ছয় ফুটের বেঞ্চে দুজন এবং নয় ফুটের বেঞ্চে তিনজন করে বসানো হবে।
আমরা এখন প্রস্তুতির ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমি নিজেই প্রতি সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতির পাশাপাশি ১০ মার্চের মধ্যেই শিক্ষকদের টিকা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।সৈয়দ গোলাম ফারুক, মাউশির মহাপরিচালক
এভাবে ক্লাস নিলে তো শিক্ষক বেশি লাগবে, বিদ্যমান শিক্ষক দিয়ে তার ব্যবস্থা কীভাবে হবে, প্রথম আলোর এই প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বললেন, এখন যেহেতু স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তরসহ ওপরের শ্রেণিগুলোর ক্লাস হবে না। ফলে শিক্ষকের সমস্যা হবে না। কলেজে মোট শিক্ষক আছেন ১৪০ জন।
কলেজের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ও খোলার প্রস্তুতি চলছে। হাজারীবাগ সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম ছায়িদ উল্লা বললেন, তাঁদের পরিকল্পনা হলো, শনিবার পঞ্চম শ্রেণির পাশাপাশি প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনা। রোববার পঞ্চম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণি, সোমবার পঞ্চম ও তৃতীয় এবং মঙ্গলবার পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ক্লাসে আনা। এরপর সরকারের অনুমতি পেলে বুধবার ও বৃহস্পতিবার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আরেক দিন করে বিদ্যালয়ে আনারও পরিকল্পনা রয়েছে।