চিকিৎসাবঞ্চিত সুন্দরবনের দুই লাখ বনজীবী
জীবিকার টানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকা থেকে বছরের বিভিন্ন মৌসুমে জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালসহ প্রায় দুই লাখ বনজীবী সুন্দরবনে আসেন। কিন্তু তাঁদের চিকিৎসায় সুন্দরবন এলাকায় নেই কোনো হাসপাতাল।২০১০ সালে বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোনো অগ্রগতি নেই।বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম সুন্দরবনের নলিয়ান ও পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলার আওতাধীন চারটি রেঞ্জে প্রতিবছর জীবিকার টানে ছুটে আসেন জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালসহ নানা পেশার লোকজন। এঁদের সংখ্যা কমপক্ষে দুই লাখ। বিশুদ্ধ পানির অভাব, বাঘ, কুমির, সাপসহ বিভিন্ন হিংস্র প্রাণীর আক্রমণে এঁদের অনেকেই আহত ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদেরকে গহিন বন থেকে হাসপাতালে নিতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। চিকিৎসার অভাবে এঁদের অনেকে মারাও যান।জীবিকার টানে ছুটে আসা এসব দরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করে ১৯৯৩ সালে আন্তমন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত এক বৈঠকে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় তিনটি মিনি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণের কথা বলা হয়। কিন্ত্ত সেটা শুধু আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছরেও এ নিয়ে বন বিভাগ বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পরিকল্পনা বা কোনো প্রস্তাবনা আসেনি। এরপর ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বন বিভাগ সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু এর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতির খবর জানাতে পারেনি বন বিভাগ।বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সারা বছর ইলিশ মৌসুম, শুঁটকি মৌসুম, গোলপাতা মৌসুমসহ বিভিন্ন সময়ে প্রায় বনজীবীরা সুন্দরবনে আসে। কিন্তু সুন্দরবন ও আশপাশের এলাকায় তাঁদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। দুবলারচর ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিন বলেন, বিশ্বখ্যাত সুন্দরবনের বার্ির্ষক রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে এই অবহেলিত বনজীবীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। তাঁদের স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দেওয়া সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু সরকার সে দায়িত্ব পালন করছে না। বনজীবীদের চিকিৎসাসেবায় হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মিহির কুমার দো প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমরা সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠাই। কিন্ত্ত এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।’