মুহিবুল্লাহ হত্যা
খুনে অংশ নেন ২৫ জন, নির্দেশদাতা আরসাপ্রধান
চারজন আসামি আদালতে জবানবন্দিতে বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে এবং মাদক ও অপহরণ–বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় মুহিবুল্লাহকে হত্যা।
রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে খুনের নির্দেশ দিয়েছেন মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী। আর হত্যায় অংশ নেন প্রায় ২৫ জন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া চারজন আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এমন তথ্য দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এই চার আসামি হলেন আজিজুল হক, হামিদ হোসেন, নাজিম উদ্দিন ও মো. ইলিয়াস। তাঁরা নিজেদের আরসা সদস্য বলে দাবি করেন এবং মুহিবুল্লাহ হত্যায় অংশ নেন বলে পুলিশকে জানান। তাঁরা গত বছরের ২৩ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে কক্সবাজারের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহকে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শিবিরে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। তাঁর পরিবার এ হত্যার জন্য আরসাকে দায়ী করে আসছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামি মো. ইলিয়াস বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে মুহিবুল্লাহ সচেষ্ট ছিলেন। আরসার অবস্থান প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে মাদক চোরাচালান ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থানের কারণে মুহিবুল্লাহকে আরসা নেতাদের নির্দেশে খুন করা হয়।
আরেক আসামি আজিজুল হক বলেন, মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গা শিবিরে জনপ্রিয় নেতা ওঠেন। তিনি রোহিঙ্গা শিবিরে আরসার কর্মকাণ্ডে বাধা হয়ে দাঁড়ান। আরসাপ্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশে মুহিবুল্লাহকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে ক্যাম্প ১-এর একটি ঘরে বৈঠক করে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়।
আরেক আসামি হামিদ হোসেন জবানবন্দিতে বলেন, ঘটনার দিন (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তাঁরা শিবিরের মোস্তফা কামালের বাসায় জড়ো হন। সেখানে আবদুর রহিমসহ ১২ জনকে মাস্ক পরা অবস্থায় দেখতে পান হামিদ। সবার হাতে ছিল ছোট অস্ত্র।
নাজিম উদ্দিনের জবানবন্দিতে বলা হয়, ‘মুহিবুল্লাহকে পরপর দুটি গুলি করেন জাহিদ হোসেন। ফয়েজ উল্লাহ করেন একটি গুলি। ছমি উদ্দিন করেন আরেকটি। মোট পাঁচটি গুলি করা হয়।’
পুলিশ এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সর্বশেষ ৬ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয় মাওলানা জাকারিয়াকে। তিনি আরসার ওলামা শাখার প্রধান হিসেবে পরিচিত।
মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আরসা নেতা আতাউল্লাহর নির্দেশে মুহিবুল্লাহকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়। হত্যাকাণ্ডে প্রায় ২৫ জন অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ এখানে নেই। তবে হত্যায় জড়িত তাঁর সহযোগীদের কেউ কেউ এখানে আছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
তবে আতাউল্লাহর ভাই মো. শাহ আলীকে গত ১৬ জানুয়ারি রোহিঙ্গা শিবির থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তদন্ত কর্মকর্তার দাবি, ভাইয়ের সঙ্গে শাহ আলীর যোগাযোগ নেই।
এদিকে মুহিবুল্লাহর স্ত্রী নাছিমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, মূল খুনিরা গ্রেপ্তার হয়নি। তাই তিনি ৯ ছেলেমেয়ে নিয়ে আতঙ্কে আছেন।
মুহিবুল্লাহ হত্যাকারী বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. হাছানুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিহত মুহিবুল্লাহর পরিবারের নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি যাতে না হয়, সে জন্য পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।