কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের উদ্বোধন, ঢাকার দিকে ছুটবে কাল
গাঁদা ফুলের মালা জড়িয়ে আছে ট্রেনের ইঞ্জিনটির দুপাশজুড়ে। সাদা–নীল–লাল রঙের ফুলও আছে গোঁজা। ইঞ্জিনের দুপাশে ঝুলছে নানা রঙের কাপড়। ট্রেনের কোচগুলোর গায়েও ঝুলছে বাহারি কাপড়। আজ ট্রেনটির জন্মদিন যে! এর উদ্বোধন হলো আজ বুধবার, উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রাম স্টেশনে। কাল বৃহস্পতিবার ট্রেনটি ছুটবে প্রথম, রাজধানীর দিকে। কুড়িগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ট্রেনের ব্যবস্থা করার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের দাবিতে সায় দিয়েছিলেন। আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ট্রেন উদ্বোধন করে সেই দাবি পূরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ কুড়িগ্রাম–ঢাকার পথে চলা কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের উদ্বোধনের পাশাপাশি রংপুর ও লালমনিরহাট এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিরও আধুনিকায়ন করা হলো।
আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটি উদ্বোধন উপলক্ষে কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন সেজেছিল উৎসবের আমেজে। শুধু ট্রেনই সাজেনি, রেলওয়ে স্টেশন প্ল্যাটফর্মও হয়েছিল সুজজ্জিত। ট্রেন দেখতে ছুটে এসেছে কুড়িগ্রামের হাজারো মানুষ।
কাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে প্রথম যাত্রা করবে বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।
কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশনমাস্টার বাবু আল রশিদ বলেন, এই ট্রেনের প্রধান চালক সাইফুল ইসলাম ও সহকারী চালক ইউনুস আলী। তাঁদের নেতৃত্বে ট্রেনটি পরীক্ষামূলক হিসেবে আজ দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত যাওয়া-আসা করেছে।
আজ ট্রেনটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে সরাসরি গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) দেবদাস ভট্টাচার্য, জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক, কুড়িগ্রামের সব স্থানীয় সাংসদ, রেলওয়ের কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ নানা শ্রেণি–পেশার কয়েক হাজার মানুষ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘কুড়িগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা আরও ট্রেন আমদানির ব্যবস্থা করছি, যেগুলো দেশের প্রায় সব জেলায় রেলসেবা পৌঁছে দেবে।’
জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন বলেন, ‘এই ট্রেনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। কুড়িগ্রামের উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক।’
কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা এই ট্রেন ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ নামে চলাচল করবে। এতে ৬২৬টি আসন রয়েছে। আর ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম ফেরার সময় এতে ৫৯৬টি আসন থাকবে। এর মধ্যে শোভন চেয়ার ৫১০ টাকা, এসি চেয়ার ৯৭২ টাকা এবং এসি বাথ ১৭৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনটি সপ্তাহে প্রতি বুধবার বাদে ৬ দিন সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে কুড়িগ্রাম রেলস্টেশন ত্যাগ করবে। আর ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামের উদ্দেশে ছাড়বে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। উভয় পথে ট্রেনটির বিরতি থাকবে রংপুর, বদরগঞ্জ, পার্বতীপুর, জয়পুরহাট, সান্তাহার, মাধনগর, ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন।
এদিকে আজ একই সঙ্গে রংপুর ও লালমনিরহাট এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটিতেও ১৪টি নতুন কোচ সংযুক্ত করা হয়েছে। এই ট্রেনের আধুনিকায়ন উপলক্ষে আজ রংপুর রেলওয়ে স্টেশনও নতুন সাজে সেজেছিল। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনের সাংসদ আহসানুল হক চৌধুরী, রংপুর মহানগর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদ, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছাফিয়া খানম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম প্রমুখ।
রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি রোববার বাদে ছয় দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে। আর ঢাকার কমলাপুর থেকে সকাল নয়টায় ছাড়ে রংপুরের উদ্দেশে।