আইপিটিভিগুলোকে সংবাদ পরিবেশনের অনুমতি নিতে হবে: তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘দেশে মূলধারার গণমাধ্যম দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে সচেষ্ট।’ তিনি বলেছেন, আইপিটিভিগুলো শুরুতে বিনোদন চ্যানেল হিসেবে কাজ করবে। কোনো টেলিভিশন চ্যানেল যখন অনুমতি পায়, শুরুতে সংবাদ পরিবেশনের অনুমতি পায় না। আইপিটিভির ক্ষেত্রেও তাই।
গণমাধ্যম শুধুমাত্র মতপ্রকাশই নয়, সমাজের দর্পণ হিসেবে, মানুষের মনন তৈরিতে, সমাজকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করে জাতিকে প্রত্যয়ী করতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষ গণমাধ্যমের সাথে কিছুটা সময় প্রতিদিন ব্যয় করে, সুতরাং জাতি গঠনের জন্য এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম-বিএসআরএফ আয়োজিত ‘মিট দ্যা প্রেস’-এ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, স্বপ্নহীন মানুষের যেমন স্বপ্নপূরণের তাগাদা থাকে না, তেমনি আশাহীন জাতিরও আশাপূরণের তাগাদা থাকে না। আর সেই স্বপ্ন দেখানোর কাজটি গণমাধ্যম করতে পারে এবং করে। ‘আমাদের মূলধারার গণমাধ্যম সেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনলাইনে কিছু ভুঁইফোড় পোর্টাল, যেগুলো মূলধারার নয়, সেগুলোর কারণে অনেক সময় বিভ্রান্তি হয়,’ বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আজ বিশ্ববাস্তবতা। এটি মানুষের সাথে মানুষকে সংযুক্ত করা ও হারিয়ে যাওয়া মানুষকে খুঁজে পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। দেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। একজন মানুষ এর মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে। এটি ভালো দিক, কিন্তু ঠিক ব্যবহার করা না হলে খারাপ দিকও অনেক। আজকে সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্তিও তৈরি হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, এটিও শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বব্যাপী বাস্তবতা।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যে সংবাদমাধ্যম নয়-ব্যাখ্যা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেকেই মনে করে ফেসবুকে দেওয়া তথ্যই বুঝি সংবাদ, আসলে সেটি সংবাদ নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি আনএডিটেড (অসম্পাদিত) প্ল্যাটফর্ম। সে কারণে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীব্যাপী এটিকে নিয়মনীতির মধ্যে আনার জন্য আইন তৈরি হয়েছে, আমরাও করছি।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে বিশেষ পরিস্থিতিতে অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টা হয়। করোনাকালে শুরুতে সেই অপচেষ্টা ছিল। কিন্তু মূলধারার গণমাধ্যম সেটি করতে দেয়নি। এ জন্য মূলধারার গণমাধ্যম অর্থাৎ আপনাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমের বিকাশের লক্ষ্যে সব সময় বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘উপমহাদেশের অন্য দেশে সাংবাদিকদের জন্য করোনাকালীন বিশেষ সহায়তা দেওয়া হয়নি। ভারতে করোনায় যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, শুধুমাত্র তাদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশেই প্রধানমন্ত্রী করোনাকালে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রয়োজনমাফিক সাংবাদিকদের সহায়তা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। কারণ তিনি বাংলাদেশের সমস্ত খেটে খাওয়া মানুষের কথা ভেবেছেন, সবার কথা ভেবেছেন।’
অনলাইন গণমাধ্যম প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী এ সময় বলেন, অনলাইন নিবন্ধনের কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই আমরা বেশ কয়েকটি অনলাইনকে নিবন্ধনের জন্য অনুমতি দিয়েছি, আরও দেওয়া হবে। তবে যেহেতু কয়েক হাজার অনলাইন, এটি সম্পন্ন করতে সময় লাগবে। কারণ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা রিপোর্ট দেওয়ার পরই তা দেওয়া হয়। আর এ নিবন্ধন কাজ চলমান প্রক্রিয়া, কারণ অনলাইন ভবিষ্যতেও তো অনেকগুলো প্রকাশিত হবে।
আইপিটিভি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘আইপিটিভি নিবন্ধনের জন্যও দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল। সেগুলোর প্রাথমিক তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে, যা সম্পন্নের পর নিবন্ধনের কাজ শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আইপিটিভিগুলো শুরুতে বিনোদন চ্যানেল হিসেবে কাজ করবে। কোনো টেলিভিশন চ্যানেল যখন অনুমতি পায়, শুরুতে সংবাদ পরিবেশনের অনুমতি পায় না। সে জন্য আবার দরখাস্ত করতে হয়। আইপিটিভির ক্ষেত্রেও তাই।’