২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ভালো মানুষ ছিলেন মুশতাক আহমেদ

লেখক মুশতাক আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা এবং জেনেশুনে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর মতো গুরুতর অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ১০ মাস আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল লেখক মুশতাক আহমেদকে। কারাগারে তাঁর মৃত্যুর পর কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। কারাগারে কারও সঙ্গে কখনো উত্তেজিত হননি।

সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কারাগারের ফোন বুথ থেকে টেলিফোনে বাবার কাছ থেকে স্ত্রীর অসুস্থতার কথা জেনে তিনি (মুশতাক) হতাশ হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে অন্য বন্দীদের সঙ্গে বারবার নিজের জামিন না হওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

তদন্ত কমিটি গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার, জেলার, বন্দীসহ মোট ২৫ জনের সাক্ষ্য ও জবানবন্দি নিয়েছে। তাঁদের প্রায় সবাই মুশতাক সম্পর্কে একই কথা বলেছেন। প্রতিবেদনটি গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদ মারা যান। গ্রেপ্তারের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মোট ছয়বার তাঁর জামিন আবেদন নাকচ হয়। তাঁর মৃত্যুর পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি উঠেছে আবারও। মতপ্রকাশের অধিকার হরণ এবং বাক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য এ আইন বড় হুমকি উল্লেখ করে তা বাতিল বা সংশোধনের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

তদন্ত প্রতিবেদনে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের সহকারী সার্জন উম্মে সালমার বক্তব্য উল্লেখ রয়েছে। তিনি কমিটিকে বলেছেন, ২৫ ফেব্রয়ারি সন্ধ্যা সাতটা ছয় মিনিটে কারাগারের ডিপ্লোমা নার্স আবুল বাশার মুঠোফোনে তাঁকে জানান, মুশতাক আহমেদ নামের এক বন্দী হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েছেন এবং তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ সময় তিনি বন্দীকে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুশতাক আহমেদের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। কারাগারের কোনো বন্দী বা প্রশাসনের কেউ তাঁকে নির্যাতন বা অত্যাচার করেননি। আগে তাঁকে কখনো অসুস্থ হতেও কেউ দেখেননি। তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘মুশতাক আহমেদ হার্ট ডিজিজের (হৃদ্‌রোগ) কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন (ভিন্ন কিছু থাকলে ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট থেকে জানা যাবে)।’ এতে আরও বলা হয়েছে, সার্বিক ঘটনা বিশ্লেষণ, চিকিৎসকের ভাষ্য ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য অনুযায়ী বন্দী মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনের কেউ বা কোনো বন্দী জড়িত নন।

মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষের তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেছেন, মুশতাকের মৃত্যু ‘ন্যাচারাল ডেথ’ (স্বাভাবিক মৃত্যু)। এর সঙ্গে অন্য কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কেও মতামত দিয়েছে। প্রতিটি কারা হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট জনবল বৃদ্ধি করাসহ নয়টি সুপারিশ করেছে তারা। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রতিটি কারাগারে অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বাড়ানো; পর্যাপ্ত ওষুধের জোগান রাখা; কারাগারের প্রতিটি এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা এবং তা সচল রাখা; জরুরি ভিত্তিতে ৬৮টি কারাগারে চিকিৎসক নার্স ও ফার্মাসিস্টদের শূন্য পদ পূরণ করা; হঠাৎ অসুস্থ হওয়া রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে সম্পাদনের জন্য প্রতিটি কারাগারে কিছুসংখ্যক কারারক্ষী, ফার্মাসিস্ট, ডিপ্লোমা নার্সসহ অন্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

যে কারাগারে মুশতাক বন্দী ছিলেন, সেই কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন গতকাল বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মুশতাক আহমেদ অত্যন্ত ভদ্র ও চুপচাপ স্বভাবের ছিলেন। ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। কোনো দিন সমস্যা বা অসুবিধার কথা বলতেন না। কারাগারে ইতিহাসবিষয়ক ও অন্যান্য বই পড়তেন।