করোনায় সৌদিতে ৪৫ বাংলাদেশির মৃত্যু, কষ্টে কাটছে দিন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে এ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি নাগরিক মারা গেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবেই করোনায় সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃতের সংখ্যা ৪৫ জন। ওয়ার্ল্ডোমিটারের সোমবারের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়েছেন ১৮ হাজার ৮১১ জন। আর এদের মধ্যে মারা গেছেন ১৪৪ জন।
সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস ও জেদ্দায় কনসুলেট এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা যাওয়া ১৪৪ জনের মধ্যে ৪৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক। সংক্রমণের শিকার হয়েছেন ১৬৯০ জন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবেই সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে মারা গেছেন ও সংক্রমিত হয়েছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে কোভিড–১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি দেশটিতে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকদের একটি অংশ এরই মধ্যে খাবারের কষ্টে পড়ে গেছেন। এর পাশাপাশি দেশটিতে ফ্রি ভিসায় যাওয়া কর্মীদের ওপর ঝুলছে দেশে ফেরার খড়গ। কারণ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এই সংকটকালে তেলের দাম ইতিহাসের সর্বনিম্ম পর্যায়ে চলে এসেছে। এতে বড় ধরণের অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে যাচ্ছেন অভিবাসী কর্মীরা।
গত ৮ থেকে ১০ দিন ধরে সৌদি আরবে কর্মরত শ্রমিকেরাও প্রথম আলোর কাছে তাঁদের খাবারের সংকটের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এর পাশাপাশি ভবিষ্যতে কাজের অনিশ্চয়তা নিয়ে আশঙ্কার কথাও প্রকাশ করেছেন।
সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের কর্মীদের খাবারের সংকটের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে দূতাবাস এরই মধ্যে ওয়েবসাইট ও ফেসবুকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাঁদের সহায়তার প্রয়োজন, তাঁদের নাম নিবন্ধন করার আহ্বান জানায়। এর ভিত্তিতে হাজার পাঁচেক লোককে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আইওএম, আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্টসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সচ্ছল প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের যুক্ত করে আরও অভিবাসী কর্মীদের মাঝে খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
অবৈধ অভিবাসীদের ফেরতের বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীদের মধ্য কতজনকে ফেরত পাঠানো হবে, সে বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে তেলের দামে ব্যাপক ধস নামায় ভবিষ্যতে সৌদি অর্থনীতিতে সংকট সৃষ্টি হবে। এর ফলে বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীদের কাজেও অনিশ্চয়তা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।
এ মুগূর্তে সৌদি আরবে বাংলাদেশের কর্মীদের করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে সেখানকার কূটনৈতিক সূত্র ও প্রবাসী শ্রমিকেরা। নাম প্রকাশে না করার শর্তে তাঁরা বলছেন, এ মুহূর্তে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আর খাবারের দুঃশ্চিন্তায় তাদের বেশি ভোগাচ্ছে। আর সামনের দিনগুলোতে কাজের অনিশ্চয়তা তো আছেই। বিশেষ করে শ্রমিকদের গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। এ ছাড়া কোন উপায়ও নেই। সিঙ্গাপুরে যেভাবে দ্বিতীয় ধাপে করোনার সংক্রমণ হয়েছে, এতে এখানে ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ সিঙ্গাপুরের মতো সৌদি আরবেও শ্রমিকদের ছোট জায়গায় একসঙ্গে অনেক ব্যক্তির থাকা ছাড়া উপায় নেই। বিপুল টাকা বিনিয়োগ করে তাঁরা সৌদি আরবে গিয়ে কাজে যান। কাজেই সে টাকা ওঠানোর জন্য তাদের অনেকটা স্বাস্থ্য ঝুঁকি মেনে নিয়েই জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এভাবে জীবনযাপনের ফলে সংক্রমণের আশঙ্কাও থাকছে।
জেদ্দা থেকে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ফয়সল আহমেদ গতকাল সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ মাসের শুরুতে কনসুলেটের শ্রম কাউন্সেলরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল চার হাজারের বেশি বাংলাদেশির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মদিনায় যান। ওই শ্রমিকেরা স্বাস্থ্য পরীক্ষায় রাজি না হওয়ায় সৌদি কর্তৃপক্ষের অনুরোধে মিশনের প্রতিনিধিদের সেখানে পাঠায়। এঁদের মধ্যে প্রথম দুই হাজারের পরীক্ষায় ৮৯ জন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পেয়েছি। বাকি দুই হাজারের মধ্যেও আক্রান্ত রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ফলে করোনাভাইরাসে যে সব শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সংস্পর্শে এসে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তো আছেই।
বাংলাদেশের কর্মীদের খাবারের সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে ফয়সল আহমেদ জানান, জরুরি ভিত্তিতে খাবারের প্রয়োজন—এমন অন্তত ১৫ হাজার শ্রমিক জেদ্দা কনসুলেটে নাম নিবন্ধন করেছেন। এরই মধ্যে কনসুলেটের বাজেট অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাঁচ হাজার শ্রমিকের মধ্যে খাবার বিতরণ শুরু হয়েছে। শুরুতে নির্দিষ্ট দিনে নির্ধারিত এলাকায় গিয়ে খাবার বিতরণ করা হতো। সান্ধ্য আইন জোরদার হওয়ায় ওই বিতরণে বিঘ্ন এবং খাবার বিতরণ সহজ করতে এখন নিবন্ধিত শ্রমিকদের অনলাইনে কুপন দেওয়া হচ্ছে। ওই কুপন দিয়ে শ্রমিকেরা নির্ধারিত মূল্যের খাদ্য সামগ্রী সুপারষ্টোরে গিয়ে কিনছেন।
কনসাল জেনারেল ফয়সল আহমেদ জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কনসুলেটের শ্রম আক্রান্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশর রয়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।