ইভ্যালি ব্যবস্থাপনায় চার সদস্যের বোর্ড গঠন করে দিলেন হাইকোর্ট
প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আলোচনায় থাকা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি লিমিটেড ব্যবস্থাপনায় চার সদস্যের বোর্ড গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এই বোর্ড সদস্যদের নাম ঘোষণা করে আদেশ দেন।
আদালত বলেছেন, বোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক থাকবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নাম পাঠানো তিনজনের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. রেজাউল আহসান (স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগ) থাকবেন। বোর্ডে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে ফখরুদ্দিন আহমেদ ও আইনজীবী হিসেবে খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ থাকবেন।আর সরকারি বেতনে এক্স অফিসিও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে থাকবেন অতিরিক্ত সচিব (ওএসডি) মাহবুব কবির।
১২ অক্টোবর মামলার শুনানিতে আদালত বলেছিলেন, বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় চারজনের বোর্ড হতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সচিব, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসহ চারজনকে বোর্ডে রাখা যেতে পারে।
সেদিন আদালত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আইনজীবীকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে কথা বলে বর্তমান বা সাবেক সচিব, অতিরিক্ত সচিব—এমন তিনজনের নাম দিতে বলেন।
এর ধারাবাহিকতায় ১৩ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবিত সাবেক তিন সচিবের নাম আদালতে দাখিল করেন তাদের আইনজীবী।
শুনানি নিয়ে ১৩ অক্টোবর হাইকোর্ট আদেশের জন্য ১৮ অক্টোবর (আজ) তারিখ রাখেন। সে অনুসারে আজ মামলাটি কার্যতালিকায় ওঠে।
ক্রম অনুসারে মামলাটি উঠলে চেয়ারম্যানসহ চার সদস্যের বোর্ড গঠন করে দিয়ে আদালত বলেন, হাইকোর্টের আদেশে পাওয়ার পরপরই তাঁরা (সদস্য) বোর্ড মিটিংয়ে বসবেন। তাঁরা সবকিছু বুঝে নেবেন, কোথায় কী আছে। কোম্পানি যেভাবে চলে, সেভাবে প্রথমে বোর্ড মিটিং বসবে। তাদের (বোর্ড) দায়িত্ব হলো টাকাগুলো কোথায় আছে, কোথায় দায় আছে, তা দেখা।
আদালত আরও বলেন, কোম্পানি কোর্টের কাজ হলো যদি দেখা যায়, কোনো একটি মিটিং করা সম্ভব হচ্ছে না, তখন কোম্পানি কোর্টের স্যুয়োমটো ক্ষমতা আছে। আদালত বোর্ড গঠন করে দিতে পারেন। এখন এই বোর্ড গঠন করে দেওয়া হলো। তারা (বোর্ড) বসে বিষয়গুলো দেখবে। অডিট লাগবে, তারা অন্য কাজগুলোও দেখবে। এরপর সবকিছু করার পর বোর্ড যদি দেখে কোম্পানিটি চলার যোগ্যতা নেই, তখন অবসায়নের জন্য প্রসিড করবে। কোম্পানি অবসায়ন চেয়ে আবেদনকারী আবেদন করেছে। তখন আবেদনকারীর সঙ্গে বোর্ডও বলবে, কোম্পানিটি অবসায়ন করতে হবে। আর যদি বলে চালানো সম্ভব, তাহলে কোম্পানিটি চলবে। আদালত খোলার (২০ অক্টোবর) এক মাস পর পরবর্তী দিন রাখা হচ্ছে। ৩০ তারিখের পর বোর্ড প্রথম বোর্ড মিটিং করে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেবে।
গত মে মাসে ইভ্যালিতে ইলেকট্রনিকস পণ্য অর্ডারের পর অর্থ পরিশোধ করে পণ্য ও টাকা না পেয়ে কোম্পানিটির অবসায়ন চেয়ে গ্রাহক ফরহাদ হোসেন গত ২২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে আবেদন করেন। এতে ইভ্যালি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বোর্ড গঠনের আরজিও জানানো হয়।
আবেদনের শুনানি নিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর একই বেঞ্চ ইভ্যালির ওপর তাদের সব সম্পদ বিক্রি ও হস্তান্তর থেকে বিরত থাকতে নিষেধাজ্ঞা দেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত ইভ্যালির সব নথি ১২ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে রেজিস্ট্রার ফর জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসকে নির্দেশ দেন। সে অনুসারে নথি দাখিলের পর ১২ অক্টোবর আদালত চার সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেওয়ার অভিমত দেন।
আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী এ এম মাছুম ও সৈয়দ মাহসিব হোসেন ছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রতিযোগিতা কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তাপস কান্তি বল। রেজিস্ট্রার ফর জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম বদরুদ্দোজা।
প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বর্তমানে ইভ্যালির নাম দেশজুড়ে আলোচিত-সমালোচিত। প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইতিমধ্যে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তাঁর স্ত্রী ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে রাসেল ও শামীমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে তাঁরা কারাগারে আছেন।