ইউক্রেনের সেনাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাজ্য

রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান সংকট নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর কূটনৈতিক প্রতিবেদক রাহীদ এজাজ

রবার্ট ডিকসন

প্রশ্ন :

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলাকে কীভাবে দেখেন?

রবার্ট ডিকসন: এটা বিনা উসকানিতে নিরীহ প্রতিবেশীর ওপর হামলা। আন্তর্জাতিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রতিবেশী দেশের প্রতি এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধ ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলি যখন ইউক্রেনের চলমান ঘটনাপ্রবাহের তদন্তের কথা বলেন, তখন সেটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হয়।

ইউক্রেনের চলমান সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে অভূতপূর্ব ঐক্য দেখা গেছে। ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি স্বাভাবিক। কিন্তু রাশিয়ার নির্বিচার হামলা সবাইকে এতটাই বিচলিত করেছে যে দেশটির বিরুদ্ধে আমরা কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে বাধ্য হয়েছি। নিষেধাজ্ঞার পরপরই রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দরপতন ঠেকাতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার দ্বিগুণ করেছে। কাজেই নিষেধাজ্ঞা যে রাশিয়ার অর্থনীতিকে ধাক্কা দিয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে খারকিভে সংঘর্ষের পর রাশিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত একটি যান
ছবি: এএফপি

প্রশ্ন :

নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া কি দমে যাবে বলে মনে করছেন?

রবার্ট ডিকসন: আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে রাশিয়া যেভাবে হামলা চালিয়েছে, তাতে দেশটি পরবর্তী সময়ে কী পদক্ষেপ নেবে, সেটা আগাম বলা মুশকিল। তবে নিষেধাজ্ঞা যে রাশিয়ার অর্থনীতিতে সামনের দিনগুলোতে বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের আশা থাকবে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নেবেন।

প্রশ্ন :

রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন?

রবার্ট ডিকসন: আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই ইউক্রেনের সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। আট বছর ধরে যুক্তরাজ্য একাই ইউক্রেনের ২০ হাজার সৈন্যকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ইউক্রেন যাতে তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারে, সে জন্য সৈন্যদের নানা ধরনের সমরাস্ত্রও দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন :

সংকট নিরসনে জাতিসংঘের কতটা ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে?

রবার্ট ডিকসন: আগ্রাসী দেশ যখন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হয়, খুব স্বাভাবিকভাবেই দেশটি তার ভেটোদানের ক্ষমতার প্রয়োগ করবে। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদ যখন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করে, সেটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কারণ, দীর্ঘদিন পর এভাবে সাধারণ পরিষদের বৈঠক ডাকার প্রস্তাব এল। আমাদের আশা থাকবে, বাংলাদেশের মতো বন্ধুদেশগুলো বৈঠক আহ্বানের পক্ষে ভোট দেবে। বৈঠকের পক্ষে ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলো প্রমাণ করবে, বড় দেশ বিনা উসকানিতে নিরীহ প্রতিবেশীর ওপর হামলা চালিয়ে অন্যায় করেছে।

প্রশ্ন :

চলমান এই সংকট কি আন্তর্জাতিক সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন আনবে?

রবার্ট ডিকসন: ১৯৪৫ সাল থেকে আমরা নিয়মতান্ত্রিক একটি বিশ্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি যে আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে চলবে। এই চেষ্টা সব সময় সফল হয়নি। তবে সামগ্রিকভাবে গত ৭৫ বছরজুড়ে শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করছে। বড় রাষ্ট্রগুলো তাদের প্রতিবেশী দেশে হামলা চালায়নি। কারণ, আন্তর্জাতিক আইনকে পাশ কাটিয়ে ছোট দেশের ওপর বড় দেশের এমন হামলা খুবই বিপজ্জনক। যুক্তরাজ্যের মতো বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশ আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করার পক্ষে।

প্রশ্ন :

করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর বিশ্ব অর্থনীতি পর্যুদস্ত হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট কি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে?

রবার্ট ডিকসন: চলমান সংকটের মধ্য দিয়ে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা যে সৃষ্টি হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি স্বাভাবিক। চূড়ান্ত অর্থে এটি সারা বিশ্বের জন্য খারাপ খবর। চলমান সংকটের কারণে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। মহামারির প্রকোপ কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মতো বড় সংকট আমাদের সামনে রয়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে রাশিয়ার আগ্রাসন মানব সভ্যতার জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

প্রশ্ন :

চলমান সংকটে বাংলাদেশের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা কী?

রবার্ট ডিকসন: আমি মনে করি, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশ একটি নিয়মতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার পক্ষে। বিশেষ করে গত সপ্তাহে একটি বৃহৎ রাষ্ট্র যেভাবে বিনা উসকানিতে একতরফাভাবে তার প্রতিবেশী দেশে আগ্রাসন চালিয়েছে, তার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘনের সাক্ষী হয়েছে সারা বিশ্ব। বন্ধু হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রত্যাশা থাকবে, নিয়মতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার আদর্শ সমুন্নত রাখার বিষয়ে উচ্চকণ্ঠ হবে বাংলাদেশ। আশা করি, ইউক্রেন সংকট নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ অধিবেশনের প্রতি বাংলাদেশ সমর্থন জানাবে।