ই–কমার্স
ই–অরেঞ্জ চালাতেন পুলিশ কর্মকর্তার বোন–ভগ্নিপতি
প্রতিষ্ঠানটি ১ লাখ গ্রাহকের প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানার বোন ও ভগ্নিপতি চালাতেন ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ই–অরেঞ্জ’। সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই অভিযোগে সোহেল রানার বোন, ভগ্নিপতিসহ পাঁচজনকে প্রতিষ্ঠানটির মালিক উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় প্রতারণার মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী।
পুলিশও বলেছে, ই–অরেঞ্জের মূল মালিক পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানার বোন সোনিয়া মেহজাবিন, ভগ্নিপতি মাসুকুর রহমান ও আমানউল্লাহ নামের এক ব্যক্তি। মামলার পর এই তিনজনই এখন কারাগারে আছেন। এজাহারভুক্ত আসামি বীথি আক্তারসহ দুজন পলাতক।
মামলার বাদী বলছেন, বীথি আক্তার সোহেল রানার স্ত্রী বলে তিনি শুনেছেন। যদিও সোহেল রানা তা অস্বীকার করেছেন। আর পুলিশ বলছে, বীথি আক্তারকে নিয়ে যে বক্তব্য এসেছে, তা তদন্ত করে নিশ্চিত হবে তারা।
এক লাখ গ্রাহকের ই–অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার গুলশান থানায় প্রতারণার মামলা করা হয়। মামলায় ভুক্তভোগী ২৯ জন গ্রাহকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্য থেকে তাহেরুল ইসলাম বাদী হয়েছেন।
ই–অরেঞ্জ প্রতিষ্ঠানটি মোটরসাইকেল, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী অনলাইনে বিক্রি করত।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ২৮ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনার জন্য টাকা দেন গ্রাহকেরা। একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পর ই–অরেঞ্জ কোম্পানির পণ্য সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি পণ্যও দিচ্ছে না, টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা।
■ এক মালিক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী বলে দাবি করেছেন বাদী। ■ মামলার পর তিন আসামি কারাগারে, দুজন পলাতক। ■ পুলিশ কর্মকর্তার দাবি, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই।
মামলার বাদী তাহেরুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মোটরসাইকেল কিনতে ই–অরেঞ্জে টাকা দিয়েছেন। কিন্তু গত ১৫ মে থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের টাকা মেরে দিয়েছে। তারা কোনো পণ্য সরবরাহ করছে না। এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামির সবাই প্রতিষ্ঠানটির মালিক।
গুলশান বিভাগের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানা ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গুলশান থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) ছিলেন। তখন তাঁর দায়িত্ব ছিল গুলশানের কূটনৈতিক অঞ্চলের তত্ত্বাবধান করা। ওই সময় বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি বিভিন্ন দেশে লোক পাঠিয়ে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হন। তাঁদের অভিযোগ, সোহেল রানা বোন সোনিয়াকে টাকা দিয়ে ই–অরেঞ্জ চালাচ্ছিলেন।
গতকাল রাতে কথা বলতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত জানুয়ারিতে আমার বোন ই–অরেঞ্জের মালিকানা বিক্রি করে দিয়েছেন। এই মামলায় দুজন আসামি পলাতক আছেন বলে তিনি জেনেছেন। পলাতক আসামি বীথি আক্তার আপনার স্ত্রী কি না জানতে চাওয়া হয় পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানার কাছে। এর জবাবে তিনি বলেন, ‘বীথি আক্তার আমার স্ত্রী নন, তাঁর কাছেই আমার বোন ই–অরেঞ্জের মালিকানা বিক্রি করে দিয়েছেন।’
ই–অরেঞ্জের অর্থ আপনার, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি বোনকে দিয়ে চালাচ্ছেন—এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোহেল রানা বলেন, ‘বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, সে তার সংসারে থাকে। সে নিজেই ব্যবসা করছে। আমি ব্যবসা করলে আমার স্ত্রীর নামে করতাম। আমার বোন অবৈধ কাজে জড়িত ছিল না বলেই আত্মসমর্পণ করেছে। আর ভাই হিসেবে বোনকে আমি একটু সাপোর্ট দিতে পারি না?’
সোহেল রানা বলেন, ‘ডিপ্লোমেটিক জোনে দায়িত্ব পালনের সময় আমি স্যারদের বিদেশে যাওয়ার ভিসা করে দিতাম। আমি তো এখন বলির পাঁঠা। সরকারি চাকরিতে এমন কি করা যায়?’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মামলা হওয়ার পর অনেক ভুক্তভোগী তাঁদের টাকা ফেরত পেতে মামলা করতে চাচ্ছেন। আর বীথি আক্তার সোহেল রানার স্ত্রী কি না, তা তদন্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, তদন্ত শেষে জানা যাবে, প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছে।