আবার হাসপাতালে যাওয়ার তোড়জোড়ে আমিন হুদা
মাদক মামলায় ৭৯ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আমিন হুদাকে হাসপাতালে পাঠাতে আবারও তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন মা নূরজাহান হুদা। চিঠিতে আমিন হুদা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছিলেন, কিন্তু সেই অনুযায়ী চিকিৎসা হচ্ছে না বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই চিঠি পাঠানো হয়। এর আগে গত মাসে ‘আত্মহত্যার ঝুঁকি’ এড়াতে ও বিষণ্নতা দূর করতে চিকিৎসা দরকার বলে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল আমিন হুদাকে। পরে সমালোচনার মুখে আবার তাঁকে কারাগারে ফেরত নেওয়া হয়।
সাজা হওয়ার পর আমিন হুদা কারাগারে আছেন ছয় বছর ধরে। এর মধ্যে প্রায় দুই বছর (৭২০ দিন) কাটিয়েছেন হাসপাতালের কেবিনে। কখনো পিঠে ব্যথা, কখনো বুকে ব্যথার কথা বলে হাসপাতালে এসেছেন তিনি। এই সময়ে কেবল হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনের ভাড়াই দিয়েছেন তিনি এক কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে টানা ১৯ মাস হাসপাতালে থাকার নজিরও আছে।
২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর মাদকসহ গ্রেপ্তার হন আমিন হুদা ও তাঁর সহযোগী আহসানুল হক ওরফে হাসান। এরপর গুলশানে তাঁর একটি ফ্ল্যাট থেকে ইয়াবা তৈরির সরঞ্জাম, উপাদানসহ বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করে র্যাব। ওই ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা হয়। দুই মামলায় ২০১২ সালের ১৫ জুলাই আদালতের রায়ে আমিন হুদাকে বিভিন্ন ধারায় মোট ৭৯ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জরিমানার আদেশও দেওয়া হয়। রায়ের বিরুদ্ধে আমিন হুদা হাইকোর্টে আপিল করেন ও জামিন চান। ২০১৩ সালে হাইকোর্ট তাঁকে জামিন দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে ওই বছরের ৫ মে আপিল বিভাগ জামিন বাতিল করে তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে ও হাইকোর্টে আপিল নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেন। এরপর থেকে তিনি কারাগারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সর্বশেষ চিঠিকে আমিন হুদার মা নূরজাহান হুদা দাবি করেছেন, তাঁর ছেলে হৃদ্রোগ, হাইপারটেনশন, অ্যাজমা, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন। ২০০৭ সালে ব্যাংককে তাঁর হৃদ্যন্ত্রে দুটি রিং পরানো হয়। এখন জরুরি ভিত্তিতে তাঁর এনজিওগ্রাম করানো দরকার। কিন্তু কারাগারে ঢোকার পর থেকে তাঁকে এনজিওগ্রাম করানো হয়নি।
>২০০৭ সালে গ্রেপ্তার হন আমিন হুদা ও তাঁর সহযোগী আহসানুল
সাজা হওয়ার পর আমিন হুদা কারাগারে আছেন ছয় বছর ধরে
এর মধ্যে প্রায় দুই বছর কাটিয়েছেন হাসপাতালের কেবিনে
কখনো পিঠে ব্যথা, কখনো বুকে ব্যথার কথা বলেছেন তিনি
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, আমিন হুদাকে মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সে সময় তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রিপোর্টগুলো ভালো আসেনি। তারপরও তাঁকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়। আমিন হুদার নিয়মিত চিকিৎসা, ওষুধ ও সেবার প্রয়োজন দাবি করে তাঁর মা জানান, মানবিক বিবেচনায় হলেও যেন এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বারডেম হাসপাতালে কারাবন্দীদের রাখার নিয়ম নেই। কিন্তু এর আগে মাসের পর মাস সেখানে থেকেছেন সাজাপ্রাপ্ত ওই আসামি। কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রথম আমিন হুদাকে বারডেম হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন টানা এক মাস ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ৭ মে পর্যন্ত প্রায় ১৮ মাস এবং ২০১৭ সালের ২২ জুন থেকে ১ মাস ১০ দিন একই হাসপাতালে ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের ৫ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ (২৫ দিন) পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ২৯ আগস্ট থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত (২ মাস ১৭ দিন) বিএসএমএমইউতে ছিলেন আমিন হুদা। ২০১৯ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ মে পর্যন্ত আবার বিএসএমএমইউতে ভর্তি ছিলেন তিনি।