জামালপুর-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা ও নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে মাঠ এখন সরব। কিন্তু অনেকটা কৌশলে, গোপনে ও নীরবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপির প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা। নীরবে ভোটবিপ্লব ঘটাতে চান বলে জানিয়েছেন বিএনপির কয়েকজন নেতা।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মোজাফফর হোসেনের পক্ষে পৌরসভার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সকাল থেকে প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। ওই সব ওয়ার্ডে বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত নৌকার স্লোগান চলে, চলে মিছিল ও সভা। প্রায় প্রচারকেন্দ্রেই মাইকে চলছে বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন জয়গান। পাশাপাশি শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে মাইকে নৌকার প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। শহর থেকে গ্রামের হাটবাজারের আনাচকানাচ নৌকার পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রার্থী নিজে কোনো না কোনো এলাকায় নির্বাচনী সভা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর পক্ষে পৌর শহরে চলছে বড় বড় মিছিলের শোডাউনও।
পুরো উল্টো চিত্র বিএনপির প্রার্থী শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুনের প্রচারণায়। তিনি কৌশলে, নীরবে এবং অনেকটাই গোপনে তাঁর প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আসনে তাঁর তেমন কোনো পোস্টারও নেই। নৌকা প্রার্থীর প্রচার মাইক সরব থাকলেও বিএনপি প্রার্থীর মাইকের দেখা পাওয়া দুষ্কর। শহরের কোথাও তাঁর পক্ষে বড় ধরনের কোনো মিছিল বা সভাও দেখা যাচ্ছে না। তবে বিভিন্ন পাড়া–মহল্লায় তিনি অনেকটা নীরবে ভোটের আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, অনেকটাই কৌশলেই তাঁদের মাঠে অবস্থান করতে হচ্ছে। বেশি সরব থাকার মতো পরিস্থিতি এই নির্বাচনে নেই। খণ্ড খণ্ডভাবে খুব সতর্কতার সঙ্গেই চালানো হচ্ছে প্রচারণা। বিভিন্ন জায়গায় ভোট চাইতে গিয়েও তাঁদের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকেরা মারমুখী হওয়ায় তাঁরা কৌশলে সেই পথ এড়িয়ে চলছেন। কোনো নেতা–কর্মী মাঠে নামলেই বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তাঁদের প্রায় সব নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক জায়গায় নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এসব দেখে তাঁরা অনেকটাই কৌশলগত কারণে নীরবে ভোট প্রার্থনা করছেন।
জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনী মাঠে আমাদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। নির্বাচনী মাঠে আমরা সমান সুযোগ পাচ্ছি না। অনেকটা সংঘাত এড়িয়ে চলতে হচ্ছে। গত রোববার সন্ধ্যার দিকে আমরা নরুন্দি এলাকায় প্রচারণায় যাই। কিন্তু সেখানে নৌকার সমর্থকেরা আমাদের সামনে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে আমাদের সামনে তাঁরা মহড়া দিতে শুরু করেন। তবে সেখানেও আমরা আমাদের লোকজনকে শান্ত রেখে ওই জায়গা ত্যাগ করে চলে আসি। এভাবে সব সময় সতর্কতার সঙ্গে আমাদের মাঠে থাকতে হচ্ছে। আমাদের নীরব ভোট আছে। অনেকেই ভয়ে চুপচাপ রয়েছেন। মানুষ যদি কেন্দ্রে গিয়ে তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, তাহলে আমাদের নীরব ভোটবিপ্লব ঘটবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, বিএনপির এ ধরনের কৌশল নিয়ে তাঁরাও উদ্বিগ্ন। নির্বাচনের মাঠে বিএনপি অনেকটাই গোপনে গোপনে প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু প্রকাশ্যে বিএনপির নেতা–কর্মীদের তেমন সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁদের প্রচারণায়ও তেমন কোনো বাধাও দেওয়া হচ্ছে না। তারপরও বিএনপি কেমন জানি ঘাপটি মেরে রয়েছে। বিএনপির গতিবেগও বোঝা যাচ্ছে না।