>• রাইড শেয়ারিং অ্যাপস ব্যবহারর যাতায়াতের ধকল কমেছে
• পাঠাওর অনেক চালক সঠিকভাবে অ্যাপ ব্যবহার করতে জানেন না
• পাশাপাশি গন্তব্যে যেতেও চালকেরা ম্যাপ ব্যবহার করতে পারেন না
• অ্যাপ-ম্যাপে চালক দক্ষ না হলে যাত্রীকে ভোগান্তি পোহাতে হয়
• অনেক চালকের আচরণ নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন যাত্রীরা
মিরপুর ১০ নম্বর থেকে বারিধারা যেতে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘পাঠাও’ ব্যবহার করে মোটরসাইকেল ডাকেন সাঈদ মোহাম্মদ। কাজীপাড়ায় থাকা চালক ফোন করে যাত্রী ওঠানোর স্থান (পিকআপ পয়েন্ট) জেনে নেন। পরবর্তী কয়েক মিনিটে মোটরসাইকেল না আসায় অ্যাপের গুগল ম্যাপে সাঈদ দেখতে পান, চালক নির্ধারিত স্থানে না এসে ১০ নম্বর গোল চত্বরের পাশ দিয়ে উল্টো পথে চলে গেছেন। সঙ্গে রাইডও চালু করে দিয়েছেন।
পরে এই যাত্রী চালককে ফোন দিলে চালক বলেন, তিনি ঢাকায় নতুন। জায়গা চিনতে পারছেন না। তখন ম্যাপ (মানচিত্র) ব্যবহারের পরামর্শ দিলে চালক বলেন, তিনি গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে চলাফেরা করতে পারেন না। আর ভুলে রাইড চালু করেছেন। পরে অবশ্য চালক রাইডটি বাতিল করে দেন।
পাঠাও ব্যবহারে প্রায় একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান মোহাম্মদপুরে বাসিন্দা রিশাদ হোসাইন।তিনি বলেন, রাইডের জন্য অনুরোধ পাঠানোর পরে চালকেরা গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে যাত্রী তোলার স্থান চিহ্নিত করতে পারেন না। বেশ কয়েকবার বলার পরও নির্ধারিত স্থানে আসতে না পেরে অবশেষে রাইড বাতিল করে দেন। আবার অনেক সময় যাত্রী না তুলেই রাইড চালু করে দেন।
সেবাটি অ্যাপভিত্তিক হলেও পাঠাওর চালকেরা সঠিকভাবে অ্যাপ ব্যবহার করতে জানেন না বলে অভিযোগ করেন বেশ কয়েকজন যাত্রী। তাঁরা বলেন, চালকদের সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হয় যাত্রী তোলার নির্ধারিত স্থান চিনতে। অনেক সময় নির্দিষ্ট স্থানে আসতে গিয়ে দেরি হয়। অনেক চালক আবার নিজের যে অবস্থানের কথা জানান, তা ম্যাপের সঙ্গে মেলে না। পাশাপাশি গন্তব্যে যেতেও চালকেরা ম্যাপ ব্যবহার করতে পারেন না। তখন যাত্রীকে পথ চিনিয়ে নিতে হয়। আর গন্তব্য যাত্রীর পরিচিত না হলে পৌঁছাতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক চালকের আচরণ নিয়েও অসন্তুষ্টির কথা জানান যাত্রীরা।
এক যাত্রী বলেন, তিনি নতুন বাজার থেকে কারওয়ান বাজারে একটি ভবনে যাওয়ার জন্য পাঠাও ডাকেন। চালক কারওয়ান বাজারে এসে নির্দিষ্ট ভবন অতিক্রম করে বাংলামোটরের দিকে মোটরসাইকেল চালাতে থাকেন। তখন ওই যাত্রী চালককে থামাতে বলে নেমে পড়েন।
এ বিষয় নিয়ে পাঠাওর কমপক্ষে ১৫ জন মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের অনেকেই ঢাকার বাইরে থেকে এসে অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল চালানো শুরু করেছেন। রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ হওয়ায় তাঁরা রাজধানীতে এসেছেন বলে জানান। সঠিকভাবে অ্যাপস ব্যবহার করতে না পারার পাশাপাশি ঢাকার পথঘাটও ভালোভাবে চেনেন না বলে জানান তাঁরা। তাঁদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ম্যাপ ব্যবহার করতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালক বলেন, ‘ঢাকায় নতুন। পাঠাও মোটরসাইকেল চালাতে নিবন্ধন করেছি বেশি দিন হয়নি। এখনো অ্যাপ ব্যবহার আয়ত্তে আনতে পারিনি।’ এই চালকের পড়াশোনা মাধ্যমিকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
জানা গেছে, পাঠাও মোটরসাইকেল চালাতে নিবন্ধনের পরে চালকদের প্রাথমিকভাবে অ্যাপ ব্যবহারের নিয়মাবলি শেখানো হয়। এর বাইরে কিছু ভিডিও চিত্র সরবরাহ করা হয়, যাতে চালকেরা প্রয়োজনমতো দেখে নিতে পারেন। বর্তমানে পাঠাও লিমিটেডে নিবন্ধনকৃত চালকের সংখ্যা দেড় লাখের ওপর।
পাঠাও লিমিটেডের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা নাবিলা মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ম্যাপ ব্যবহারে অনেক চালকের সীমাবদ্ধতা আছে। এর বড় কারণ পড়াশোনার ঘাটতি। পাশাপাশি ডিজিটাল ম্যাপ ব্যবহার করে চলাচলের চর্চা এখনো গড়ে ওঠেনি। এই সমস্যা সমাধানে আগামী মাসে ‘পাঠাও’ অ্যাপে কিছু পরিবর্তন আনা হবে। যাতে চালক ও যাত্রী উভয়ই উপকৃত হবে।
দেশের মুঠোফোনভিত্তিক অ্যাপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম আশরাফ আবির বলেন, রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি ইতিবাচক। অন্য পেশার মতো এখানে দক্ষতার প্রয়োজন আছে। এর অংশ হিসেবে একটি কোর্স মডিউলের মাধ্যমে চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। এতে চালকের দক্ষতার পাশাপাশি সেবার মানও বেড়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল ম্যাপ ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। একই কথা অ্যাপ ব্যবহার করা যাত্রীদের জন্যও প্রযোজ্য।