কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকা মনোনয়নবঞ্চিত পক্ষের লোকজন শেষ পর্যন্ত গত বুধবার থেকে স্বেচ্ছায় দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে শুরু করেন। গত দুই দিনে তাঁরা পৌর শহরের পলতাকান্দা ও আগানগর ইউনিয়নে পৃথক সভা করেন।
নৌকায় ভোট চাইতে পক্ষটির কাছে প্রার্থী বা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো তাগিদ ছিল না। তবে ভোটের শেষ সময়ে এসে স্বেচ্ছায় তাঁরা মাঠে নেমে পড়ায় নির্বাচনী আলোচনায় এই ইস্যুটি আলোচ্য হয়ে ওঠে।
ওই পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন ভৈরব পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইফতেখার হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি উমর ফারুক ও উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম।
ইফতেখার দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি। মনোনয়ন পান বিসিবি সভাপতি ও সাংসদ নাজমুল হাসান। নাজমুল হাসান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভি রহমান দম্পতির সন্তান। বিএনপির হয়ে মাঠে আছেন দলীয় কেন্দ্রীয় পর্ষদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম।
দলীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, দলীয় নেতৃত্ব নিয়ে পাঁচ বছর আগে থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সায়দুল্লাহ মিয়ার সঙ্গে পক্ষটির প্রকাশ্য বিরোধ সৃষ্টি হয়। দুই বছর আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সম্মেলনে সভাপতি পদে সায়দুল্লাহ মিয়া ও আবুল মনসুর প্রার্থী ছিলেন। প্রত্যক্ষ ভোটে সায়দুল্লাহ মিয়া ফের সভাপতি হন। শুধু তা–ই নয়, সাধারণ সম্পাদক হন সায়দুল্লাহ মিয়া প্যানেলের জাহাঙ্গীর আলম। মূলত সম্মেলনে ভরাডুবির পর পক্ষটি নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়ে। একপর্যায়ে সাংসদও তাঁদের ওপর থেকে আস্থা হারান। এতে পক্ষটি আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় পক্ষটির নেতা ইফতেখার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংসদ নাজমুল হাসানের প্রতিপক্ষ হয়ে দলীয় মনোনয়নপত্র কেনেন। মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর পক্ষটি আরও আড়ালে চলে যায়। প্রার্থীও তাঁদের দূরে রেখেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, পাঁচ বছরে নানাভাবে পক্ষটিকে কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে। এখন কেবল দল থেকে স্থায়ীভাবে বিদায় করার অপেক্ষা চলছিল। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করার অভিযোগে নির্বাচনের পর পক্ষটির নেতাদের বহিষ্কার করার পরিকল্পনা ছিল। পক্ষটির নেতাদের মধ্যে এমন আশঙ্কা পেয়ে বসেছিল। তাই তাঁরা অনেকটা নিজ দায়িত্বে প্রচারণায় নামেন।
ইফতেখার বলেন, ‘প্রচারণায় আছি দুই দিন হয়ে গেল। কিন্তু প্রার্থী বা নির্বাচন পরিচালনাসংশ্লিষ্ট কেউ তাঁদের সঙ্গে সমন্বয় করছেন না। এ কারণে পৃথকভাবে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।’
উমর ফারুক বলেন, ‘দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আমাদের পক্ষের রফিকুল ইসলাম নিউটাউন এলাকায় হামলার শিকার হন। দলীয় প্রতিপক্ষরা হামলার সঙ্গে জড়িত বলে মনে করেন তিনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ বলেন, ‘যে কারও ভোট চাওয়ার অধিকার আছে। তবে পক্ষটি আমাদের ভাবনায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।’