অবসরটা সুন্দর হতে হবে
তরুণ–তরুণীরা অবসরে ইন্টারনেটে বেশি সময় কাটায়, এটা বাস্তবতা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে একজন তরুণ-তরুণী হয়তো জেমস, শাকিব খান, জয়া আহসান, সাকিব আল হাসান, তিশা, তাহসান খানের সঙ্গে কথা বলতে চায়। প্রিয় তারকাকে কিছু জানাতে চায়। এই মোহ কাটানো কষ্টসাধ্য। ইন্টারনেটের মাধ্যমে হলিউড তারকা ব্রাড পিটের জীবনে কী ঘটছে তাও জানতে পারছে। আমাদের উচিত পরিবারের অন্য সবাইকেও ইন্টারনেট ব্যবহারে উৎসাহী করে তোলা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এটা হয়। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো এই বিষয়ে ফোকাস করছে। প্রাযুক্তিক বিপ্লবকে অস্বীকার করা যাবে না, থামানোও যাবে না। ইতিবাচক ও গঠনমূলকভাবে কাজে লাগাতে হবে। তাহলেই অবসরটা সুন্দর হবে।
অনেকের মতে, এখনকার তরুণ-তরুণীদের বই পড়ার অভ্যাস কম। এই অভ্যাসটা বাড়াতে পারলে সবচেয়ে ভালো হতো। কিন্তু বইয়ের সরবরাহও তো বাড়াতে হবে। ঢাকা শহরে এবং ঢাকার বাইরে একটা সময় অনেক পাঠাগার ছিল। বই পড়ার সুন্দর সংস্কৃতি ছিল। এটার পৃষ্ঠপোষকতাও বাড়াতে হবে। চাইলেই বই হাতের কাছে পাওয়া যায় না, কঠিন হয়ে গেছে। ঢাকা শহরের কোনো পাড়া কিংবা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় লাইব্রেরি নেই। সরকারি কিংবা সামাজিক উদ্যোগ থেকে লাইব্রেরি করতে হবে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে একজন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বই পড়ার অভ্যাস তৈরির চেষ্টা করেছেন। এই সংখ্যা বাড়াতে হবে। সেই লাইব্রেরিতে বই থাকতে পারে। ট্যাব, কম্পিউটার থাকবে। যেখানে তরুণ–তরুণীরা অবসরে এসে পড়বে। আমরাও একটা সময় শুনতাম, ছুটির দিনে কিংবা দিনের অবসরে অনেকে পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়ত। এখন তা নেই।
আমাদের বয়সীদের মধ্যে বই পড়া কমে যাওয়ার কারণ, সারা দিন বুঝে না–বুঝে কিছু না কিছু পড়ছি। হয়তো ফেসবুকে নিউজ পড়ছি। অনলাইনে কোনো নিবন্ধ পড়ছি। যেটা হয়, একজন মানুষের দিনে শব্দ পড়ারও একটা সীমাবদ্ধতা আছে। বাসায় ঢুকে বই হাতে নেওয়ার আগে দেখছি, ৫ থেকে ৭ হাজার শব্দ পড়ে ফেলেছি।
তরুণদের ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে উৎসাহ বাড়াতে হবে। পড়া মানেই যে বই পড়তে হবে তা কিন্তু নয়, জ্ঞান সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নিউইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিন কিংবা প্রথম আলো, যা–ই বলি না কেন, যেকোনো জায়গায় ঢুঁ মেরে কিছু পড়া। সেটাও কিন্তু পড়া।
অবসর কাজে লাগাতে গেলে, কৌতূহল বাড়াতে হবে। ইউটিউবে সব সময় গসিপ আর বিভিন্ন রোস্টিং ভিডিও না দেখে, পাঁচ মিনিটের একটা ভিডিও শিক্ষণীয় দেখা যেতে পারে। সেটা হতে পারে ভূগোল, ইতিহাস, খেলা, বিনোদন, এমনকি ফটোগ্রাফিও। জ্ঞান আহরণে মোটিভেট করতে হবে।
আমাদের ছোটবেলায়, একই এলাকায় সবার সঙ্গে সবার দেখা হতো। এখন অ্যাপার্টমেন্ট সংস্কৃতি। একই পরিবারের একেকজন একে জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে। এই অ্যাপার্টমেন্ট–জগতে ইউনিটি কিংবা যোগাযোগ নেই। ইন্টারনেট কিন্তু কানেকটিভিটির জায়গা। এটা দিয়ে আমরা শাহবাগে লাখ লাখ তরুণ জড়ো করেছি। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সবাইকে একত্র করে সচেতন করেছি। এই ইন্টারনেটকে আসলে ইতিবাচক কাজে লাগাতে পারলেই অবসরও সুন্দর হবে।
বাংলাদেশে আমরা শক্তিশালী সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করিনি। শক্তিশালী সাহিত্যশিল্প, সংগীতশিল্প তৈরি করিনি। এখনো আমরা আর্টসেল ও মাইলস উদ্যাপন করছি। গত ২০ বছরে আর্টসেলের রিপ্লেসমেন্ট আসেনি, ৪০ বছরে মাইলসের মতো কেউ আসেনি। ওদেরকে যা দেব, তাই-ই তো নিবে। আমাদের মনোযাগী হতে হবে। রাষ্ট্রকে ভাবতে হবে। সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও কর্মকাণ্ড বাড়ানো খুব জরুরি, যা এখন খুব অভাব।