চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা: হাইকোর্টের রায় স্থগিত হয়নি, আবেদনের শুনানি মুলতবি
সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার রায় স্থগিত হয়নি।
হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি মুলতবি হয়েছে। রিট আবেদনকারীপক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ‘নট টুডে’ (আজ নয়) বলে আদেশ দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন হাইকোর্ট ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এ রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা গত ৯ জুন চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ৪ জুলাই শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি ওঠে।
ক্রম অনুসারে বিষয়টি উঠলে রিট আবেদনকারীপক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড মো. জহিরুল ইসলাম এক দিনের (নট টুডে) সময়ের প্রার্থনা জানান। তিনি বলেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী দেশের বাইরে রয়েছেন। ৮ জুলাই তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আগে কোটা ছিল। ২০১৮ সালে কোটাপদ্ধতি সংশোধন করে পরিপত্র জারি করা হয়। এটা বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই রায় স্থগিতের আরজি জানান তিনি।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘চেম্বার আদালত কি আদেশ দিয়েছিলেন?’
তখন মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেছেন।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নট টুডে (আজ নয়)। আপনারা সিপি (লিভ টু আপিল) ফাইল করেন। আমরা এখন ইন্টারফেয়ার (হস্তক্ষেপ) করব না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘রায়টা (হাইকোর্টের) পাইনি।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘পাবেন।’
একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এত আন্দোলন কিসের, রাস্তায় শুরু হয়েছে? আন্দোলনের চাপ দিয়ে কি হাইকোর্টের রায়, সুপ্রিম কোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন?’
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘নো, নো (না, না)। আন্দোলনের সঙ্গে এই আবেদনের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারের পলিসি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। এখানে আইনের প্রশ্ন জড়িত, যে কারণে আবেদন নিয়ে এসেছি।’
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি সংশোধন করে পরিপত্র জারি করে।
১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চের স্মারক সংশোধন করে জারি করা পরিপত্রের ভাষ্য, ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) ও ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) ও ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি বাতিল করা হলো।
পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে ওই পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট।