চট্টগ্রামের তিন উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

টানা বৃষ্টিতে কর্নফুলী ও হালদার পানি ৮ থেকে ১০ ফুট বেড়ে তলিয়ে গেছে সড়ক। আজ বেলা আড়াটায় চট্টগ্রামের রাউজানের ছামিদর কোয়াং গ্রামেপ্রথম আলো

পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারীর বেশির ভাগ গ্রামীণ এলাকা। ডুবে গেছে সড়ক, ফসলের জমি ও মাছের পুকুর। পানি বন্দী হয়ে পড়েছে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ। তিন উপজেলার সঙ্গে জেলার যোগাযোগও ভেঙে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাউজানের আঞ্চলিক সড়ক তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এসব এলাকার গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিতে কোথাও কোমরসমান, আবার কোথাও বুকসমান পানি দেখা গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের। এ ছাড়া স্কুল, কলেজ মাদ্রাসায় পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফটিকছড়ি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের সব কটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধুরং ও হালদা নদীতে পানির চাপ বাড়ায় কয়েকটি স্থানে ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ। ঘরবাড়িতে হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ পানি উঠেছে।

ফটিকছড়ির ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পশ্চিম ধর্মপুরে প্রায় ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে। সড়কেও হাঁটুপানি জমে রয়েছে।

ফটিকছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কমবেশি সব এলাকা প্লাবিত। প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে রয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হবে। তাঁর এলাকার বেশ কিছু মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাউজানের পশ্চিম নোয়াপাড়া, পালোয়ান পাড়া, মোকামীপাড়া, সাম মাহালদারপাড়া, ছামিদর কোয়াং, কচুখাইন, দক্ষিণ নোয়াপাড়া, মইশকরম, সওদাগরপাড়া, সুজারপাড়া, পূর্ব উরকিরচর, খলিফার ঘোনা, বৈইজ্জাখালি, বাগোয়ান, পশ্চিম গুজরা, গহিরা, নোয়াজিশপুর, চিকদাইর, ডাবুয়াসহ কয়েকটি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে রয়েছে।

আজ দুপুরে হালদা নদীর তীরবর্তী নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ছামিদর কোয়াং গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামে ঢোকার দুটি সড়ক কোমরসমান পানিতে ডুবে গেছে। গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবার অনেকটা ঘরবন্দী সময় কাটাচ্ছেন। এলাকার কয়েক শ একর চাষাবাদের জমি ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার পানিতে ডুবে রয়েছে। পানির তোড়ে ভেঙে পড়েছে কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটি। এতে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আশপাশের গ্রাম।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হালদা নদীর হাটহাজারীর অংশে বেড়িবাঁধ দেওয়া হলেও রাউজান অংশে তা নেই। তাই অমাবস্যা-পূর্ণিমা তিথিতে জোয়ারের উচ্চতা বাড়ার কারণে গ্রামগুলোতে পানি ঢুকে পড়ে। এবার বৃষ্টির কারণে পানি আরও বেশি বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন তাঁরা।

রাউজানের ছামিদর কোয়াং গ্রামের বাসিন্দা সালামত উল্লাহ বলেন, তাঁদের গ্রামের প্রায় বাড়িঘর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পিচঢালাই সড়ক ভেঙে গ্রামের যোগাযোগব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। গাড়ি চলছে না।

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আজ বেলা আড়াইটায় চট্টগ্রামের রাউজানের মোকামী পাড়া গ্রামে
প্রথম আলো

রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অংগ্যজাই মারমা প্রথম আলোকে বলেন, রাউজানে নদীর পানি বেড়ে অনেক গ্রাম তলিয়ে গেছে। এর ফলে মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ক্ষতি হওয়ার খবর তাঁদের কাছে আসছে। সব স্কুল–কলেজ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বরাদ্দ চাওয়া হবে।

হাটহাজারী উপজেলার বন্যায় প্লাবিত এলাকার মধ্যে রয়েছে ফরহাদাবার, মান্দাকীনি, বুড়িশ্চর, শিকারপুর, গড়দোয়ারা, দক্ষিণ মাদার্শা, উত্তর মাদার্শা, মেখল, পৌরসভার একাধিক ওয়ার্ড, নাঙ্গলমোড়া, ছিপাতলী। হালদা নদীর পানি উপচে পড়ে তীরবর্তী এলাকার বাড়িঘর পানিতে ডুবে রয়েছে। ফরহাদাবাদ ও উত্তর মাদার্শায় দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার মানুষকে সরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানান ইউএনও এ বি এম মশিউজ্জমান।

হাটহাজারীর শিকারপুরের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য লোকমান হাকিম বলেন, বন্যার কারণে তাঁরা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। ঘরে পানি, উঠানেও পানি এবং সড়কও কোমরসমান পানিতে ডুবে রয়েছে। এভাবে তাঁর ইউনিয়নে প্রায় গ্রাম ও সড়ক তিন দিন ধরে ডুবে আছে।

হাটহাজারীর ইউএনও এ বি এম মশিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর উপজেলার ৭ থেকে ৮টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী প্রায় অর্ধলাখ মানুষ।