দেশের গবেষকদের উদ্ভাবন
কারকুমা ইমিউন প্লাস ডায়াবেটিসে উপকারী
কারকুমা ইমিউন প্লাস হলুদ, আদা, লবঙ্গের কুঁড়ি, দারুচিনি ও গোলমরিচ দিয়ে তৈরি। এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় বলে দাবি করা হচ্ছে।
হলুদ, লবঙ্গ, দারুচিনি, গোলমরিচের উপাদান দিয়ে তৈরি ক্যাপসুল ডায়াবেটিস রোগীদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এই ক্যাপসুল ডায়াবেটিস রোগীদের টিস্যুর ক্ষতিজনিত প্রভাব কমিয়ে দেয়। খুব শিগগির এই গবেষণার ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, বারডেম হাসপাতাল, গণবিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ও অর্গানিক নিউট্রিশন লিমিটেডের বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা হলুদভিত্তিক ক্যাপসুল নিয়ে এই গবেষণা করেছেন। এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক খালেদা ইসলাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হলুদভিত্তিক এই ক্যাপসুলটির নাম ‘কারকুমা ইমিউন প্লাস’। এটি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি। উপাদানের মধ্যে আছে হলুদ, আদা, লবঙ্গের কুঁড়ি, দারুচিনি ও গোলমরিচের নির্যাস, গুঁড়া বা তেল। এসব উপাদান যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি প্রশাসনের অনুমোদন পাওয়া। কারকুমা ইমিউন প্লাস ক্যাপসুল তৈরি করেছে অর্গানিক নিউট্রিশন লিমিটেড। এটি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি প্রশাসন অনুমোদিত এবং যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসনে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান।
গতকাল শনিবার দুপুরে বারডেম হাসপাতালের মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করার কথা ছিল। তবে গত শুক্রবার গণমাধ্যমের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে অনুষ্ঠান স্থগিতের কথা বলা হয়। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং গবেষণার প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর খালেদা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণমাধ্যমের সঙ্গে আপাতত আমরা কোনো কথা বলতে চাইছি না।’ অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, গবেষণা ফলাফল নিয়ে গবেষক ও বারডেম কর্তৃপক্ষের মধ্যে খুব শিগগির একটি সভা হবে।
গবেষণার ফলাফল
রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ৯৪ রোগীকে নিয়ে এই গবেষণা করা হয়েছে। তাঁদের মধে৵ ৬৪ জনকে কারকুমা ইমিউন প্লাস ক্যাপসুল খেতে দেওয়া হয়। প্রত্যেককে সকালে ও বিকেলে দুটি করে ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। বাকি ৩০ জনকে একই নামে ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়, তবে তাতে ওষুধের মূল উপাদান ছিল না।
গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের রক্তের নমুনা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় নিয়মিতভাবে। গত বছরের প্রথম দিকে শুরু হয়ে গবেষণাটি চলে ১০ মাস ধরে।
গবেষণায় দেখা গেছে কারকুমা ইমিউন প্লাস ক্যাপসুলে সিসা, আর্সেনিক, ক্রিমিয়াম বা ক্যাডমিয়ামের মতো ভারি ধাতু নেই। বিষাক্ত প্রতিক্রিয়া তৈরির কোনো উপাদানও পাওয়া যায়নি। সেই কারণে কারকুমা ইমিউন প্লাস ক্যাপসুলকে নিরাপদ বলছেন গবেষকেরা।
গবেষকেরা বলছেন, ডায়াবেটিস (টাইপ–২) রোগীদের কিছু টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’–এর কারণে টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৩০ দিন কারকুমা ইমিউন প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর পর দেখা গেছে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমে এসেছে। একই সঙ্গে তিন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেড়ে গেছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেড়ে যাওয়া। পাশাপাশি দেখা গেছে কিডনি ও যকৃতে কারকুমা ইমিউন প্লাস ক্যাপসুলের কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই।
উপসংহারে গবেষকেরা বলেছেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন কারকুমা ইমিউন প্লাস রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং ডায়াবেটিস রোগীদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে দেয়।
কারকুমা ইমিউন প্লাস বা হলুদ, আদা, লবঙ্গের কুঁড়ি, দারুচিনি ও গোলমরিচের নির্যাস, গুঁড়া বা তেল দিয়ে তৈরি ওষুধ বা খাদ্য নিয়ে গবেষণা অনেক আগে থেকেই চলছে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ে এই ধরনের গবেষণা এর আগে হয়নি। গবেষকেরা বলছেন, এ গবেষণা ডায়াবেটিস চিকিৎসায় নতুন পথ দেখাবে।