ব্রিটিশ উপনিবেশ-পূর্ব সময় দ্বাদশ থেকে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে চা পানের রীতি ছিল। উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম ও অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যের সিংফোসহ কয়েকটি জাতিসত্তার মানুষ স্বাস্থ্যের উন্নতিতে চা পান করতেন। চা–তে থাকে ক্যাফেইন শরীর উদ্দীপ্ত করত। আর এ জন্যই এ পানীয় পান করা হতো। ব্রিটিশ পরিব্রাজক জন অভিংটনের লেখা আ ভয়েজ টু সুরাট ইন দ্য ইয়ার ১৬৮৯ নামের বইয়ে লেখক লিখছেন, ‘ভারতের ব্যবসায়ীরা মসলা বা চিনি কিংবা লেবু দিয়ে চা পান করেন।’
ব্রিটিশ আমলে চা পান (১৭০০ থেকে ১৯০০ সাল)
আ থার্স্ট ফর এম্পায়ার: হাই দ্য শেপড দ্য মডার্ন ওয়ার্ল্ড বইতে খাদ্য বিষয়ের ঐতিহাসিক এরিকা রাপাপোর্ট লিখেছেন, ভারতবর্ষে চায়ের বাণিজ্যিক উৎপাদন প্রথম শুরু হয় মূলত ইংরেজদের সঙ্গে চীনাদের বিরোধের পর থেকেই। ১৮৩০ সালের দিকে ৪ কোটি পাউন্ডের চা চীন থেকে আমদানি করে যুক্তরাজ্য। কিন্তু চীনের সঙ্গে যুদ্ধের পর আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে ১৮৩০ সালের দিক থেকে ভারতবর্ষের বিশেষ করে আসামে চা চাষের তোড়জোড় শুরু হয়।
১৯০০ থেকে ১৯৪০: চা পানের নতুন অধ্যায়
জঙ্গল কেটে চা চাষের বাগান তৈরির চেষ্টায় প্রতিরোধ গড়ে ওঠে আসামসহ বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু ১৯০০ সালের শুরুর দিক থেকে চা জনপ্রিয় পানীয় হতে শুরু করে। ১৯২০ ও ১৯৩০–এর দশকের সময় থেকে চা স্টল প্রতিষ্ঠা হতে শুরু করে। ১৯৩০–এর মহামন্দার সময় বিপুল পরিমাণ চা রপ্তানি হতে পারেনি। ফলে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের স্থানীয় মানুষদের কাছে একে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা হয়। সে সময় বিজ্ঞাপন দিয়ে এর প্রসার শুরু হয় এবং বিনা পয়সায় তা খাওয়ানোর রীতিও চালু ছিল।
বিশ্বে পানির পরেই সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় চা। এ উপমহাদেশে প্রথম আসামে ১৮৩৯ সালে চা চাষ শুরু হয়। বাংলাদেশের চট্টগ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে চা–বাগান স্থাপন করা হয় ১৮৪০ সালে। তবে এ দেশে ১৮৫৪ সালে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা–বাগান প্রতিষ্ঠা করা হয় সিলেটের মালনীছড়ায়।
বাংলাদেশ টি বোর্ডের ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশে মোট ১৬৯টি চা–বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯০টি চা–বাগান আছে মৌলভীবাজারে। বেশির ভাগ চা–বাগান উত্তর–পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলায়। দেশের উত্তর জনপদে চায়ের চাষ চলছে। এখন পঞ্চগড়ে আছে ৯টি এবং ঠাকুরগাঁওয়ে একটি বাগান আছে।
গত শতকের ১৯৩০–এর দশকে চায়ের বিকাশের শুরু থেকে ঢাকাবাসীর মধ্যে চা পানের অভ্যাস শুরু হয়। তবে নিশ্চয়ই তা ছিল স্বল্প পরিসরে এবং পারিবারিক পর্যায়ে। দোকানে গিয়ে চা পানের রীতি ঠিক কবে থেকে শুরু হলো, তার নির্দিষ্ট তথ্য নেই বলে জানান ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন। তিনি জানান, গত শতকের ১৯৫০–এর দশকে রাজধানীতে চায়ের দোকান গড়ে উঠতে শুরু করে বেশি করে।
দেশে দিন দিন চা পানের অভ্যাস বেড়েছে। চা খাবেন—এমন ধারার প্রশ্ন নগর শুধু নয় গ্রামে–গঞ্জেও এখন সাধারণ আতিথেয়তার একটি ধরনে পরিণত হয়েছে। দিন দিন বাড়ছে চায়ের দোকানের পরিমাণ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা হোটেলে ও রেস্টুরেন্ট জরিপ ২০২১ অনুযায়ী, দেশে মোট চায়ের স্টলের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৮৭। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে আছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯৩ আর গ্রামাঞ্চলে আছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৯৫টি স্টল। গ্রামপ্রধান বাংলাদেশে চায়ের কদর যে বাড়ছে, এটা সেই প্রমাণ দেয়।
নগরেও কিন্তু চায়ের সংস্কৃতিতে ভিন্নতা আসছে। যেমন আগে ঢাকার চায়ের দোকান বলতে ছিল কোনো রেস্তোরাঁয় অন্য নানা খাবারের সঙ্গে চা সরবরাহ। কেবল চায়ের জন্য আলাদা রেস্তোরাঁ কিন্তু বিশেষ ছিল না। আর কিছু রেস্তোরাঁর চায়ের বিশেষ প্রসিদ্ধি থাকলেও সেখানে এক বা দুই ধরনের বেশি চা পাওয়া যেত না। নগরের সেই চিত্র কিন্তু পাল্টে গেছে।
এখন নগরে, বিশেষ করে ঢাকায় চায়ের সংস্কৃতিতে ভিন্ন কিছু প্রবণতা দেখা গেছে। প্রথমেই বলা যায়, এখন ‘চা’ নামটি ধারণ করে কেবল এই পানীয়টিকে প্রধান বিক্রয়যোগ্য পণ্য হিসেবে রেখে নতুন নতুন সব স্টল হয়েছে বা হচ্ছে। নগরীর অভিজাতসহ সব এলাকাতেই এমন ধারার ‘চা’–এর রেস্তোরাঁ দেখা যায়।
চা প্রধান আকর্ষণ হলেও চায়ের সঙ্গে ‘টা’ বা অন্য নাশতার সম্ভার এসব স্টলের আরেক বৈশিষ্ট্য। স্যান্ডউইচ, বার্গার, নানা ধরনের কুকিজ, চাপ, পরোটা, সালাদ, চিকেন বা বিফের নানা আইটেম—খাবারের অন্ত নেই।
আজ থেকে দুই দশক আগেও চা বলতে বোঝাত দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি কালো চা। আর যাঁরা চায়ে দুধ খেতেন না, তাঁদের জন্য লাল চা দেওয়া হতো। এই লাল চায়ে আদা, দারুচিনি বা কোথাও লবঙ্গ দিয়ে পরিবেশনের রীতি ছিল। কিন্তু এখন চায়ের রকমের ইয়ত্তা নেই। মটকা চা, মালাই চা, হানি টি, বাটার ব্লিস, বাবল, গ্রিন অ্যাপল, টনিক চা, মাল্টা চা, পনির চা, বাদাম ঘি চা—মানে এই তালিকা শেষ হওয়ার নয়!
‘গ্রিন টি’ নামের নতুন ধারার চা নিয়ে চায়ের নতুন জগৎ বিকশিত হয়েছে। দেশের উত্তর জনপদে চা–চাষের বিকাশের সঙ্গে গ্রিন টির বিকাশের একটা ভূমিকা আছে। এখন বিভিন্ন চা কোম্পানি গ্রিন টি রাখছে তাদের বিক্রি হওয়া চায়ের তালিকায়। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ সে চা–কে গ্রহণও করেছে।
এখন নগরজীবনে চা সংস্কৃতির একটি নতুন চিত্র, রাস্তার পাশে ছোট ছোট ভ্রাম্যমাণ স্টলে চা বিক্রি। এই চা বিক্রি শুরু হয় মূলত সন্ধ্যার দিকে। কোনো কোনো স্থানে তা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। শীতের এ সময়ে গরম গরম পিঠার পসরা নিয়ে এসব দোকানের বাড়বাড়ন্ত দেখা যায়। এখানে মূলত মটকা চায়ের চলই বেশি।
ঢাকা মহানগরের কিছু চায়ের দোকান
চা বাগান, বনানী
‘ইট–পাথরের যান্ত্রিক শহুরে জীবন থেকে নিবিড় স্বস্তির ডাক’ দিয়ে চায়ের পসরা সাজিয়ে রাখে বনানীর এই রেস্তোরাঁটি। সবুজ গাছগাছালিতে ছাওয়া রেস্তোরাঁটির আঙিনা।
ঠিকানা: প্লট ৫৫, রোড ২১, বনানী, ঢাকা।
খোলা-বন্ধ: চা পাওয়া যাবে দুপুর ১২টায় থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত।
অন্য খাবার: কয়েক পদের প্রাতরাশের ব্যবস্থা আছে। দাম পড়বে ১৯৯ থেকে ৩৮৫ টাকা পর্যন্ত। প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা।
যোগাযোগ: ০১৭১৩–৪২৩৯৭২
ফেসবুক: https://www.facebook.com/chabagancafe/
চা টাইম
ঠিকানা: উত্তরা, বসুন্ধরা, ধানমন্ডি, ওয়ারী, মিরপুর-১–এ
বৈশিষ্ট্য: বাবল–টি এ প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য।
দামদর: এখানে চায়ের দাম ১৮০ টাকা থেকে শুরু।
ফেসবুক: https://www.facebook.com/chatimebd/
যোগাযোগ: ০১৩১৩-৩৫৮১৩৫
ঠিকানা: রাজধানীর ১৫টি স্থানে আউটলেট আছে জনপ্রিয় এই চায়ের দোকানের। এসব আউটলেট আছে মোহাম্মদপুর, জিগাতলা, কলাবাগান, সিদ্ধেশ্বরী, শাহজাদপুর, খিলগাঁও, বনশ্রী, বসুন্ধরা, উত্তরা-১৪, উত্তরা-৫, ইসিবি, মিরপুর-৬, সাগুফতা, উত্তরা–১২ ও ১৩–এর মোড়ে।
সিগনেচার চা, দামদর: এখানে চায়ের দাম শুরু হয় ৪৫ টাকা থেকে। ‘মিল্ক টি’ এখানকার সিগনেচার চা।
খোলা–বন্ধ: সাধারণত দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা।
ফেসবুক: https://www.facebook.com/chaandchill/
যোগাযোগ: ০১৯৮৯-৯৯৯৭২৫ (৯/১০ সলিমুল্লাহ রোড)
ঠিকানা: গুলশান ২-এর গোলচত্বরের কাছের গলিতে এর অবস্থান।
কত রকমের চা, দামদর: সব মিলিয়ে ‘রংপুরে’ পাওয়া যায় প্রায় ২৭ ধরনের চা। ৩০ টাকা থেকে শুরু করে পাবেন ২০০ টাকার চা। আরও পাবেন চার ধরনের ফলের রস এবং চার ধরনের নাশতা।
ফেসবুক: https://www.facebook.com/profile.php?id=61557738932422
ঠিকানা: হালদা ভ্যালি দেশের নামী চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউর ওয়াই এন সেন্টারের তৃতীয় তলায় আছে সুসজ্জিত এ প্রতিষ্ঠান। বাড়ি নম্বর ৬/এ, সড়ক–১১৩।
কত রকমের চা, দামদর: গোল্ডেন আইব্রো ব্ল্যাক চা, মুঘল মাসালা চা, স্পেশাল মালাই চা, মরোক্কান মিন্ট টি, হানি হিলার টি, হালদা ভ্যালি বাবল টি—এমন প্রায় ৫০ ধরনের চা পাওয়া যায় এখানে। ৯৫ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩৯৫ টাকার চা–ও আছে এখানে।
অন্য খাবার: সকাল, দুপুর ও রাতে সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়। সেট মেনুর পাশাপাশি স্টার্টার, নানা ধরনের স্যুপ, বার্গার ও স্যান্ডউইচ, পিৎজার সম্ভার আছে।
খোলা–বন্ধ: সকাল সাড়ে আটটায় খোলে, বন্ধ হয় রাত ১০টায়।
যোগাযোগ: ০৯৬৭৮–৮০০৫২২
চা ওয়ালা
ঠিকানা: মিরপুর–২–এর ৬০ ফিটে অবস্থিত এ চায়ের দোকান।
কত রকমের চা, দামদর: এখানে দুধ চায়ের দাম শুরু হয় ৩০ টাকা থেকে, সর্বোচ্চ ১০০ টাকা দামের চা পাওয়া যায়। লাল চায়ের দাম শুরু ২০ টাকা থেকে।
খোলা–বন্ধ: বেলা ১১টা থেকে খোলে এ দোকান, চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। শুক্রবারে শুধু বেলা তিনটা থেকে খোলা।
ফেসবুক: https://www.facebook.com/chawalaxx
যোগাযোগ: ০১৯২২–৪৪২২১২
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে সারিবদ্ধভাবে বেশ কিছু চায়ের দোকান রয়েছে। এসব দোকানে পাওয়া যায় বাহারি রকমের চা। সাধারণ লাল চা, দুধ চা তো আছেই, এর পাশাপাশি এখানে পাওয়া যায় অন্তত ৫০ রকমের চা৷
যেসব চা পাওয়া যায়: গ্রিন টি, মসলা লাল চা, লেবু–আদা লাল চা, কফি চা, মালাই দুধ চা, গুড়ের চা, মাল্টা চা, কাঁচা মরিচ চা, তেঁতুল চা, তেঁতুল–কাঁচা মরিচ চা, জলপাই লাল চা, আলুবোখারা লাল চা, তুলসী লাল চা, পনির দুধ চা, বাদাম দুধ চা, আদা-লেবু-পুদিনা লাল চা, কাশ্মীরি দুধ চা, স্ট্রবেরি চা, বেনানা চা, চেরি দুধ চা, জয়তুন ঝাল চা, মালটোভা চা, ক্যাডবেরি চা, হরলিকস চা, ভ্যানিলা ও পনির দুধ চা, অপরাজিতা চা, জেসমিন চাসহ হরেক রকমের চা৷
দামদর: এসব চায়ের দাম ১০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। সাধারণ দুধ ও লাল চা এখন ১০ টাকায় বিক্রি হয়। অন্য চাগুলোর দাম ৩০ টাকার মধ্যে। কোনোটির দাম ২০ টাকা, কোনোটির ২৫, আবার কোনোটির দাম ৩০ টাকা। চায়ের পাশাপাশি টিএসসির এই দোকানগুলোয় পাওয়া যায় বিস্কুট, কেক, রুটি ও কলা।
ঢাকার আরও কিছু চায়ের দোকান:
১. রাব্বানী; মিরপুর–১১
২. নীলা মার্কেটে মটকা চা
৩. হীরাঝিল; শাপলা চত্বর, মতিঝিল
৪. ধানমন্ডি লেকের দুধ মালাই চা
৫. গ্রাম চা; শাহবুদ্দিন পার্ক, ঢাকা
৬. ফার্মগেট; ইউএপি ইউনিভার্সিটির সামনের টংয়ের চা
৭. চায়ের আড্ডা, বসুন্ধরা আর/এ
৮. তাজমহল রোড, সলিমুল্লাহ রোড
৯. এলিফ্যান্ট রোডের হাতিরপুল মোড়ের ক্যাফে ফাইভ এলিফ্যান্ট
১০. গুলশান-১–এর পোস্ট অফিসের পাশের নাসির মামার চা
পুরান ঢাকা মানেই প্রাচীন ঐতিহ্যের গন্ধ। এখানকার টিকে থাকা নানা ভবন, মসজিদ, মন্দির, স্থাপনা এসব ইতিহাস ধারণ করে টিকে আছে। পুরান ঢাকার নানা খাবারের সুখ্যাতি তো আছে। এর সঙ্গে আছে পুরোনো সব চায়ের দোকান। সেখানে গিয়ে চা পানের পাশাপাশি ঢুঁ মেরে আসতে পারেন ঐতিহ্যপূর্ণ নানা স্থানে।
নাজিরাবাজার কাজী আলাউদ্দিন রোডের আলম খান টি নামের দোকানটি বেশ নাম করেছে। এখানকার মালাই চা সিগনেচার আইটেম বলা যায়। এখানে আছে কাদের খান টি। এখানকার মালাই চা–ও বিখ্যাত। চায়ের স্বাদ নিয়ে ঘুরে আসুন লালবাগের কেল্লা, ঢাকেশ্বরী মন্দির, তারা মসজিদ, হোসেনি দালান, আহসান মঞ্জিল, শাঁখারীবাজার, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, বড় কাটারাসহ নানা স্থান।
বেড়ানো শেষে চা পান
ইয়াসিন চা স্টল
ঠিকানা: সিলেট নগরের কিনব্রিজ এলাকায় একটি টংদোকানে ‘ইয়াসিন চা স্টল’।
চায়ের রকমফের ও দামদর: ১০ ধরনের চা পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে লাল চা, দুধ চা, কফি চা, হরলিকস চা, মালাই চা, গুড়ের চা, ক্যালসিয়াম চা। ক্যালসিয়াম চা ও গুড়ের চায়ের চাহিদা বেশি। চায়ের দাম ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত।
ঘোরাও যাবে: কিনব্রিজ এলাকায় চা খাওয়ার পাশাপাশি দেখার মতো আছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজ, আলী আমজদের ঘড়ি, সুরমা নদীতে চাঁদনীঘাট, সার্কিট হাউস। নগরের বাসিন্দাসহ যাঁরা বেড়াতে আসেন, তাঁরা সন্ধ্যার পরই মূলত কিনব্রিজ এলাকায় ভিড় জমান। এর মধ্যে জমে ওঠে চায়ের আড্ডা।
যেভাবে যাওয়া যাবে: নগরের সুরমা নদীর উত্তর পাশে প্রবেশমুখেই কিনব্রিজ। কিনব্রিজ থেকে নেমেই ইয়াসিনের চায়ের দোকান। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল অথবা রেলওয়ে স্টেশনে নেমে হেঁটেই কিনব্রিজ পার হওয়া যায়। এতে মিনিট দশেকের মতো সময় লাগবে।
আলী হোসেনের চায়ের দোকান
ঠিকানা: সিলেট নগরের রিকাবীবাজারের আলী হোসেনের ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকান অবস্থিত।
চায়ের রকমফের ও দামদর: তাঁর দোকানে ১৯ ধরনের চা পাওয়া যায়। চায়ের দাম ১০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। এসবের মধ্যে রয়েছে তেঁতুলের চা, কাঁচা মরিচের চা, দুধ চা, রং চা, বুলেট চা, পুদিনা চা, আদা চা, কালিজিরা চা, মালাই চা, কাঠবাদামের চা, মাল্টা চা, কাজু চা। এর মধ্যে বুলেট চা, মালাই চা, মাল্টা চা ও গুড়ের চায়ের চাহিদা বেশি।
ঘোরাও যাবে: রিকাবীবাজার মোড়ের পাশেই রয়েছে সিলেট জেলা স্টেডিয়াম, কবি নজরুল অডিটরিয়াম; কিছু দূর এগোলে সিলেট জেলা পুলিশ লাইনস। রিকাবীবাজার মোড় থেকে একটু সামনে এগোলে সাগরদিঘির পাড় ওয়াকওয়ে। এ ছাড়া সিলেট শহরতলী এলাকার লাক্কাতুরা চা–বাগান ও বিমানবন্দর এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান এবং হালকা খাবারের দোকান রয়েছে।
স্থান: বেড়ানো শেষে চা পান করতে পারেন সিঅ্যান্ডবি মোড়ে।
ঘোরাঘুরি ও চা পান: নগরের সিঅ্যান্ডবি মোড়ে ৩০-৩৫টি চায়ের দোকান গড়ে উঠেছে। এখানে অনেক রকমের চা পাওয়া যায়। সিঅ্যান্ডবি মোড় থেকে চার-পাঁচ মিনিট দূরত্বেই পদ্মা নদী। সপ্তাহের প্রায় সব দিনই দূরদূরান্ত থেকে এসে একবার হলেও পদ্মাপাড়ে ঢুঁ মারেন। আড্ডা শেষে চা পান করেন এসে সিঅ্যান্ডবি মোড়ে। সিঅ্যান্ডবি মোড় থেকে পদ্মার দিকে যাওয়ার রাস্তাটিও বেশ সুন্দর। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এটি রাজশাহীর সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা। এই রাস্তার ধারেও জমে আড্ডা। সঙ্গে রাস্তার ধারেই রয়েছে চা। এ ছাড়া চায়ের সঙ্গে এই এলাকায় গড়ে উঠেছে মুখরোচক খাবারের ভ্রাম্যমাণ দোকান।
চায়ের রকমফের ও দামদর: বেশি বিক্রি হয় ১০ থেকে ২৫ টাকা দামের চা। আদা চা, আদা মসলা চা, দুধ চা, আদা লেবু চা, মাল্টা চা, আদা পুদিনা চা, তেঁতুল চা, লেবু মিন্ট চা, লেবু মরিচ চা বেশি পান করে লোকে। এ ছাড়া তন্দুরি মালাই, দুধ হরলিকস, ঘটি (মাটির পাত্র) চা, চকলেট চা–ও আছে। এগুলোর দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে।
চট্টগ্রাম
বেড়ানোর নতুন স্থান: নগরের কর্ণফুলী নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা নতুন সড়ক। এখনো নামকরণ হয়নি, কাজও শেষ হয়নি। তবে সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে আশপাশের। এক পাশে নদীর, অন্য পাশে চট্টগ্রাম নগরের কল্পলোক আবাসিক এলাকা। পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে হিম বাতাসে কাটিয়ে আসতে পারেন সুন্দর একটি বিকেল।
যেভাবে যাবেন: নগরের নিউমার্কেট থেকে টেম্পো বা রিকশায় শাহ আমানত সেতু। সেখান থেকে আবারও টেম্পোতে কল্পলোক আবাসিক এলাকা। নগরের বহদ্দারহাট থেকে বাস বা টেম্পোতে করে কল্পলোক আবাসিক এলাকা। অথবা অটোরিকশায় করে সরাসরি কল্পলোক আবাসিক এলাকায় যাওয়া যাবে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে আবাসিকের পেছনের অংশে নতুন সড়ক।
কী খাবেন: আবাসিক এলাকার ভেতরে বিভিন্ন খাবারের দোকান রয়েছে। এ ছাড়া চায়ের সঙ্গে বিকেলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে কিছু ভাসমান চায়ের দোকানও রয়েছে।
[তথ্য দিয়েছেন আসিফ হাওলাদার, ঢাকা শফিকুল ইসলাম, রাজশাহী; মানাউবী সিংহ, সিলেট ও ফাহিম আল সামাদ, চট্টগ্রাম]