পাকিস্তানের সঙ্গে জাহাজ চালুর নেপথ্যে

কনটেইনার জাহাজ
ছবি ফিডারলাইনস গ্রুপের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া।

পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে এত দিন সরাসরি কোনো কনটেইনার জাহাজসেবা ছিল না। দুই দেশের বাণিজ্যও বিলিয়ন ডলারের কম। তবে সরকারের পটপরিবর্তনের পর হঠাৎ করেই গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের করাচি বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার জাহাজ পরিষেবা চালু নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

এ আগ্রহের সূত্রপাত ঢাকায় পাকিস্তান দূতাবাস বিষয়টি এক ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরার পর। বুধবার এক পোস্টে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ আহমেদ মারুফের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, সরাসরি জাহাজ পরিষেবা পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর একটি বড় পদক্ষেপ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বাণিজ্য রয়েছে, তাতে সরাসরি কনটেইনার জাহাজসেবা চালুর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বিষয়টি বোঝার জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের চিত্র তুলে ধরা যাক।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানাচ্ছে, গত অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে আমদানি হয়েছে ৭৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের পণ্য। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল সুতা-কাপড় ও প্রস্তুত চামড়া ছিল ৭৯ শতাংশ বা ৫৯ কোটি ডলার। এ ছাড়া সিমেন্টশিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার, ফল, শুঁটকি ও মেয়েদের থ্রি–পিস আমদানি হয়েছে। আবার একই সময়ে পাকিস্তানে রপ্তানি হয় ৬ কোটি ২৪ লাখ ডলারের পণ্য। রপ্তানির তালিকায় রয়েছে কাঁচা পাট, ওষুধ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, চা ও তৈরি পোশাক।

গত অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে মোট আমদানি পণ্যের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ টন, এর মধ্যে কনটেইনারে আনা হয়, এমন পণ্যের পরিমাণ ছিল তিন লাখ টনের কম। শিপিং ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাকিস্তান থেকে মাসে সর্বোচ্চ এক-দেড় হাজারের বেশি কনটেইনারে পণ্য আমদানি হয় না, যা দিয়ে একটি জাহাজসেবা চালু করা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, আমদানি ব্যয়ের দিক থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে। সে সময় পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি ব্যয় ছিল ৮০ কোটি ডলার।

এখন বাণিজ্য কমলেও কেন সরাসরি জাহাজসেবা চালু হলো? এ প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা জানান, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে। আগে দেশটির পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর পর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হতো। গত ২৯ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনে এনবিআর তা তুলে নিয়েছে। তাতে সামনে আমদানি বাড়তে পারে, এমন আশায় নতুন এই সেবা চালু হয়েছে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য খুব বেশি নয়। আমদানিতে কড়াকড়ি শিথিল করায় হয়তো সামনে বাড়তে পারে, এ জন্যই এই সেবা চালু হতে পারে। কনটেইনার জাহাজের সেবা প্রথমবার হলেও  দুই দেশের বন্দরগুলোর সঙ্গে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ অনিয়মিতভাবে চলাচল করছে।’

কারা চালু করল

শিপিং সূত্র জানায়, দুবাইভিত্তিক কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ফিডার লাইনস ডিএমসিসি’ একটি কনটেইনার জাহাজ দিয়ে নতুন এই সেবা চালু করেছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গ্রুপটির পাকিস্তানের করাচির সঙ্গে ব্যবসা রয়েছে।

বাংলাদেশে কর্ণফুলী লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে রিজেনসি লাইনস লিমিটেড এই সংস্থার বাংলাদেশে স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান।

বিষয়টি নিয়ে জানতে গ্রুপটির নির্বাহী পরিচালক আনিস উদ দৌলার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন না ধরায় তাঁর মতামত জানা যায়নি।

তবে গ্রুপটির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, নতুন এই কনটেইনার জাহাজের পরিষেবা শুধু পাকিস্তান-বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আরও চারটি দেশ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দর থেকেও পণ্য আনা-নেওয়া করবে। এই ছয় দেশে পুরো একবার যাত্রা শেষ করতে সময় লাগবে ৩৮ দিন। অর্থাৎ পণ্য আনা-নেওয়া মিলে পুরো যাত্রা শেষ করতে সময় লাগবে ৭৬ দিন। এখন পর্যন্ত ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ নামে একটি জাহাজ দিয়ে এই সেবা দেওয়া হচ্ছে।

বন্দরসচিব মো. ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ জাহাজটিতে করে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি হয়েছে ৩৭০ একক কনটেইনার। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নেওয়া হয়েছে ২৮৯ একক কনটেইনার। এর মধ্যে পণ্যবাহী কনটেইনার ছিল একটি। বাকিগুলো সব খালি কনটেইনার।

তবে পাকিস্তান থেকে কী পণ্য এসেছে, তার বিস্তারিত জানা যায়নি।

বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, ছয় দেশের এই জাহাজসেবার প্রথম যাত্রায় পণ্য আমদানি হয়েছে মূলত পাকিস্তান থেকে। পণ্য রপ্তানি হয়েছে মাত্র একটি কনটেইনারে, তা–ও গন্তব্য ছিল মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং।