হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন
বাংলাদেশ যখন জ্বলছিল ঢাকেশ্বরী মন্দির পাহারায় ছিলেন মুসলিমরা, নিত্যভোগও হয়েছে, পুরোহিত কী বললেন
বাংলাদেশে কিছুদিন আগেও চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় কেমন ছিল ঢাকেশ্বরী মন্দির?
পুরান ঢাকার প্রাচীন ঢাকেশ্বরী মন্দির বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সাম্প্রদায়িক ঐক্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
১৫ বছর ধরে মন্দিরের সেবা করা ৫৩ বছর বয়সী পুরোহিত অসীম মৈত্র জানান, ৫ আগস্ট সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চরমে পৌঁছালে হিন্দু, মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ মন্দিরটি রক্ষায় একত্র হন।
‘আমি নিজের জন্য ভয় পাচ্ছিলাম না, আমি শুধু আমাদের পুরোনো মন্দির ও দেবদেবীর মূর্তির সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। মন্দির কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন এবং আমরা দরজা ও প্রধান ফটক বন্ধ করে দিয়েছি।’ অসীম মৈত্রকে উদ্ধৃত করে বলেছে পিটিআই।
অশান্তির চরম সময়েও মন্দিরের দৈনন্দিন আচার-অনুষ্ঠান অব্যাহত ছিল নিরবচ্ছিন্নভাবে। মাগরিবের নামাজের ঠিক ৩০ মিনিট পর সন্ধ্যা ৭টায় যথারীতি আরতি অনুষ্ঠিত হয় বলে জানান পুরোহিত। তিনি মন্দির কমিটির ঐতিহ্য মেনে প্রতিদিন ‘ভোগ’ দেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন।
শেখ হাসিনা যখন দেশ ছেড়েছিলেন, তখন ‘এখানে কোনো দর্শনার্থী ছিল না’ উল্লেখ করে পুরোহিত অসীম বলেন, ‘রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে সবকিছু বিশৃঙ্খল অবস্থায় থাকায় পুলিশ বাহিনীও ছিল না। স্থানীয় মানুষ সে সময় সাহায্য করেছেন। মুসলিম, হিন্দু এবং অন্যান্য সম্প্রদায় মন্দিরের বাইরে পাহারা দিতে এসেছিল, যাতে মন্দিরের কোনো ক্ষতি না হয়।’
অসীম আরও বলেন, ‘সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত এখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
অশান্তির চরম সময়েও মন্দিরের দৈনন্দিন আচার-অনুষ্ঠান অব্যাহত ছিল নিরবচ্ছিন্নভাবে। মাগরিবের নামাজের ঠিক ৩০ মিনিট পর সন্ধ্যা ৭টায় যথারীতি আরতি অনুষ্ঠিত হয় বলে জানান পুরোহিত। তিনি মন্দির কমিটির ঐতিহ্য মেনে প্রতিদিন ‘ভোগ’ দেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর পরপরই অধ্যাপক ইউনূস ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যান এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
‘হ্যাঁ, উনি যখন মন্দিরে গিয়েছিলেন, তখন আমি সেখানে ছিলাম। তাঁরা তাঁকে (ড. ইউনূস) ঢাক বাজিয়ে স্বাগত জানালেন এবং আমি ও অন্য পুরোহিতরা তাঁকে দেবতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নিয়ে এলাম। তিনি এখানে প্রায় ২০-২৫ মিনিট কাটিয়েছেন’, পিটিআইকে বলেছেন পুরোহিত।
রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছে মন্দিরের অবস্থা। পুরোহিত বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর মন্দির চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং এখন তাদের সংখ্যা বেড়েছে।’
তবে বিশৃঙ্খলার সময় বেশ কয়েকটি হিন্দু মন্দির, বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করা হয়েছে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্তত দুজন হিন্দু নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকার কমিউনিটি নেতারা।