সীমান্ত হত্যার বিচারে যাওয়া উচিত আন্তর্জাতিক আদালতে

জাতীয় নাগরিক কমিটি ‘সীমান্ত হত্যা ও ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে’ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে
ছবি: সাজিদ হোসেন

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে কিশোরী ফেলানী খাতুনসহ বাংলাদেশের বহু মানুষ নিহত হলেও বিচার হচ্ছে না। বছরের পর বছর সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত হত্যার বিচারে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সোচ্চার হতে বলেছেন তাঁরা।

‘সীমান্ত হত্যা ও ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে’ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

কিশোরী ফেলানীকে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর-দিনহাটা সীমান্তে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। এর পর থেকে ৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন।

শাহবাগের সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, দিল্লির ‘সেবাদাস’ আর কোনো সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে পারবে না। অতএব ভারতকে নীতি পাল্টাতে হবে। ন্যায্যতার সম্পর্ক গড়ে না তুললে ভবিষ্যতে ভারতকে পস্তাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশের সীমান্তে, নদীতে, রাজনীতিতে, পররাষ্ট্রনীতিতে—প্রতিটা জায়গায় ভারত আগ্রাসী মনোভাব দেখাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আর কোনো শক্তি যদি ভারতের দালালি করার জন্য হাসিনার রিপ্লেসমেন্ট (বদলি) হিসেবে বাংলাদেশে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা করে, ওই শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ, ছাত্র–জনতা জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যুদ্ধ করে যাবে।’

আখতার হোসেন বলেন, সীমান্তে বছরের পর বছর নির্বিচার গুলি করে বাংলাদেশের মানুষ হত্যা করেছে ভারত। সীমান্তের সংকট সার্বভৌমত্বের প্রশ্নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি বলেন, গুলি করে তিন–চার ঘণ্টা ফেলানীকে জীবিত অবস্থায় কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি ভারতের রাজনীতিবিদ ও বিএসএফের ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে গুলি করার পর ফেলানীকে অন্তত চিকিৎসার ব্যবস্থা করত। ভারত বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীন সত্তা হিসেবে স্বীকার করতে চায় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এমন প্রত্যাশার কথা জানান আখতার হোসেন।

শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের জন্য ভারত হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে সমাবেশে অভিযোগ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভারত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করে ফ্যাসিস্টদের পাশে থেকেছে। ভারতের এই পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের আহ্বান জানান তিনি।

ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অন্যায্য সম্পর্কের উদাহরণ বলে উল্লেখ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক সাগুফতা বুশরা।

সীমান্তে যত হত্যাকাণ্ড হয়েছে, প্রতিটির বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য এস এম সুজা। তিনি বলেন, সীমান্তে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তা নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সব সভ্য রাষ্ট্রের কথা বলা উচিত।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য তাজনূভা জাবীন বলেন, বিএসএফের গুলিতে বছরের পর বছর মানুষ মারা গেলেও হাসিনা সরকার চুপ ছিল। এসবের দিন শেষ।

সমাবেশে সঞ্চালক ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক মশিউর রহমান। আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সাইফ মোস্তাফিজ, সদস্য জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।