গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রাখবে সরকার
বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রেখে তাদের আন্দোলন দুর্বল করতে চায় সরকার। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কর্মসূচি রেখে রাজপথের নিয়ন্ত্রণও ধরে রাখতে চায়। এর অংশ হিসেবে বিরোধী দলের ডাকা আগামী সপ্তাহের দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচিতেও আওয়ামী লীগ সারা দেশে ‘সতর্ক পাহারায়’ থাকবে।
সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁরা বলছেন, অবরোধের মতো কর্মসূচিতে সহিংসতার আশঙ্কা থাকে, সেই কর্মসূচি বিএনপি অব্যাহত রাখছে। সে জন্য সরকার আরও কঠোর হওয়ার পরিকল্পনা করছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, অবরোধের মতো কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে বিএনপি পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে গেছে বা সমাধানের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এমন পটভূমিতে সহিংসতার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। আর আওয়ামী লীগ মোকাবিলা করবে রাজনৈতিকভাবে।
সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলছেন অবরোধের মতো কর্মসূচিতে সহিংসতার আশঙ্কা থাকে, সেই কর্মসূচি বিএনপি অব্যাহত রাখছে। সে জন্য সরকার আরও কঠোর হওয়ার পরিকল্পনা করছে।
মন্ত্রীরা এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যেকোনো মূল্যে যথাসময়ে নির্বাচন করার কথা বলে আসছেন। সে জন্য বিরোধী দলের এক দফা আন্দোলনের বিরুদ্ধে তাঁরা কঠোর অবস্থান নেন। ক্ষমতাসীনেরা বিরোধী দলের আন্দোলন দুর্বল করার সুযোগও খুঁজছিলেন। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষ ও পুলিশের এক সদস্যের নিহত হওয়ার ঘটনা সেই সুযোগ করে দিয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন।
যদিও ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতার জন্য বিরোধী দল ও ক্ষমতাসীন দল একে অপরকে দায়ী করছে। কিন্তু সেদিনের ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৬৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি জেলা-উপজেলার অনেক নেতাকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকদের অনেকে মনে করছেন, মির্জা ফখরুলসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের গ্রেপ্তারের ফলে বিএনপির আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে এই গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত থাকলে বিরোধী দলের আন্দোলন দুর্বল করা সহজ হবে।
মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পরদিন গত ২৯ অক্টোবর বিএনপি হরতাল ডেকেছিল। সেদিনই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে। ঢাকাসহ সারা দেশেই এই গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান ও বাসায় বাসায় তল্লাশির মুখে বিএনপির নেতারা আত্মগোপনে গেছেন। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকদের অনেকে মনে করছেন, মির্জা ফখরুলসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের গ্রেপ্তারের ফলে বিএনপির আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে এই গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত থাকলে বিরোধী দলের আন্দোলন দুর্বল করা সহজ হবে।
ক্ষমতাসীন দলের একজন নীতিনির্ধারক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তাঁরা পেয়েছেন। ফলে ওই দিনের ঘটনায় মামলাগুলোতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কোনো ছাড় সরকার দেবে না। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা থাকবে। এরপর টানা তিন দিনের অবরোধেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতা হয়েছে। সেগুলোর ব্যাপারেও মামলার সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
একাধিক মন্ত্রী জানিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক কর্মসূচি নেবে এবং মাঠে ‘সতর্ক পাহারা’ অব্যাহত রাখবে।
বিএনপির অবরোধ কর্মসূচির তৃতীয় দিনেও গতকাল আগের দুই দিনের মতো আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা ঢাকায় মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছিলেন। কোথাও কোথাও তাঁরা অবরোধের বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশ করেছেন। ঢাকার বাইরে সারা দেশের জেলা-উপজেলা থেকেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একই ধরনের তৎপরতার খবর পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রথম আলোকে বলেন, আগামী সপ্তাহেও বিএনপির অবরোধ কর্মসূচিতে তাঁরা আগের মতো সতর্ক পাহারায় থাকার কর্মসূচি নিয়েছেন।
এ ছাড়া ঢাকায় মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে ৪ নভেম্বর ঢাকার আরামবাগে আওয়ামী লীগের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেবেন। সেই সমাবেশেও বড় জমায়েত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় নির্বাচনীমুখী কয়েকটি সমাবেশ করার পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ।