বনের জায়গায় হাছান মাহমুদের ভাই গড়ে তোলেন পুকুর, খামার, বাগান ও পর্যটনকেন্দ্র
কেবল এক উপজেলাতেই দখল করা হয় বন বিভাগের ২১২ একর জায়গা। দখলের পর এসব জায়গার কোথাও গড়ে তোলা হয় গরু-গয়ালের খামার, কোথাও রেস্তোরাঁ ও পর্যটনকেন্দ্র, কোথাও আবার মাল্টা আর কাজুবাদামের বাগান। অনেকগুলো পুকুর খনন করে করা হয় মাছ চাষ। গড়ে তোলা হয় বাংলোবাড়িও।
বন বিভাগের জায়গা দখল করে এসব অবৈধ স্থাপনা যিনি করেছেন, তাঁর নাম এরশাদ মাহমুদ। তিনি সদ্য বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের ছোট ভাই। বন বিভাগের দখল করা জায়গার সব কটিই চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়, যেই নির্বাচনী এলাকা থেকে হাছান মাহমুদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে দখল করা এসব জায়গার ২০০ একর উদ্ধার করেছে বন বিভাগ।
হাছান মাহমুদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে থাকার আগে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্যানুযায়ী, তিনি ২০০৯ সালের ৩১ জুলাই থেকে ২০১১ সালের ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পরে ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন হাছান মাহমুদ।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বন বিভাগ বেদখলে থাকা এসব জমি উদ্ধারে নামে। বনের জায়গা দখলের বিষয়ে জানতে এরশাদ মাহমুদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। তবে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বন বিভাগ জানায়, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এর আগের চার দিনে অভিযান চালিয়ে এরশাদ মাহমুদের দখলে থাকা ২০০ একর জমি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা জায়গায় থাকা ১২টি পুকুরের পাড় কেটে পানি অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রেস্তোরাঁ, গরু ও গয়াল রাখার ঘর, বাংলো বাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা। মাল্টা ও কাজুবাদামের যেসব গাছ লাগানো হয়েছিল, তা–ও কেটে ফেলা হয়েছে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এরই মধ্যে পরিচালিত অভিযানে ১২টি পুকুরের পাড় কেটে পানি অপসারণ করা হয়েছে। এসব পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা হয়েছিল। এখনো বেদখলে থাকা ১২ একর জায়গায় কয়েকটি পুকুর ছাড়া তেমন কোনো স্থাপনা নেই। অভিযান চালিয়ে এসব পুকুরেরও পাড় কেটে পানি অপসারণ করা হবে। দখলে থাকা জায়গাগুলো বন বিভাগের খুরুশিয়া রেঞ্জের খুরুশিয়া, পদুয়া, সুখবিলাস ও দুধপুকুরিয়া বন বিটের অধীনে বলেও জানান বন কর্মকর্তারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বনের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা খামারে ১২০টি গয়াল ও ৩০টি গরু ছিল। ৫ আগস্টের পর এসব গরু-গয়াল সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর এরশাদ মাহমুদের দখলে থাকা জায়গায় স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ১০টি টিনের ঘর নির্মাণ করে পুনরায় দখলের চেষ্টা করেন। বন বিভাগের অভিযানে এসব ঘরও উচ্ছেদ করা হয়েছে।
বন বিভাগের খুরুশিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বেদখলে থাকা যেসব জায়গা এখনো উদ্ধার করা হয়নি, সেখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। উদ্ধার করা জায়গায় বনায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর আগে খুরুশিয়া রেঞ্জের ২১২ একর জমি উদ্ধারের জন্য ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছিল বলেও দাবি করেন এই বন কর্মকর্তা।