জরায়ুমুখ ক্যানসার–প্রতিরোধী টিকা পেল ৯৩% কিশোরী
জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে দেশের ৫৬ লাখ কিশোরীকে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের মধ্যে এইচপিভি টিকা পেল ৯৩ শতাংশ কিশোরী। আগামী বছর থেকে এই টিকা নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হবে।
বাংলাদেশ সরকার, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমুনাইজেশন (গ্যাভি), জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সহযোগিতায় বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সিলেট ও রংপুর বিভাগে স্কুলপড়ুয়া এবং স্কুল থেকে ঝরে পড়া প্রান্তিক কিশোরীদের বিনা মূল্যে এক ডোজ এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচও এবং গ্যাভির যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। সংস্থাগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশব্যাপী এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রমের সফল সমাপ্তির জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ঢাকা বিভাগে গত বছরের ১৫ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ লাখ ৮ হাজার ১৮৩ জনকে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশে পাঁচ হাজারের বেশি নারী প্রতিবছর জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তবে এ রোগ প্রতিরোধযোগ্য। প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হলো, কিশোরী বয়সে এইচপিভি টিকা দেওয়া নিশ্চিত করা। গবেষণায় দেখা গেছে, এই টিকা গ্রহণকারী নারীদের মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার প্রায় ৯০ শতাংশ কম। ফলে ভবিষ্যতে চিকিৎসা ব্যয় কমে, পরিবারের দুঃখ-দুর্দশাও কমে। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো, নিয়মিত স্ক্রিনিং করা। কারণ, প্রাথমিক পর্যায়ে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) নেতৃত্বে ৯৩ শতাংশ কিশোরীকে সফলভাবে টিকা দেওয়া গেছে। এই সাফল্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের একসঙ্গে কাজ করার সক্ষমতা এবং টিকা বিতরণে চিকিৎসকদের উৎসাহ-উদ্দীপনার প্রতিফলন। এই উদ্যোগ কমিউনিটি, ধর্মীয় নেতা ও অভিভাবকদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগের গুরুত্বও প্রমাণ করেছে। আগামী বছর থেকে এটিকে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূলে একটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হলো।
ইউরো এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান স্যাম মুলার বলেন, এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রমের মাধ্যমে ৫৬ লাখ কিশোরীর জীবন সুরক্ষিত করার পাশাপাশি একটি প্রজন্মকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হলো।
এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রমের সফলতা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় নেতা ও স্বেচ্ছাসেবকদের একসঙ্গে কাজ করার শক্তির কথাই তুলে ধরছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশে ডব্লিউএইচওর প্রতিনিধি আহমেদ জামশেদ মোহাম্মদ। তিনি বলেন, শুরুতে টিকা নিয়ে কিছু গুজব ছড়ানো এবং টিকা নিয়ে দ্বিধা থাকার পরও মানুষের মনে আস্থা তৈরি করায় ৯৩% কিশোরীকে টিকার আওতায় আনা গেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, টিকাদান কার্যক্রমের প্রচার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে টিকা কার্যক্রমে সরকারি স্কুল, কওমি মাদ্রাসা, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলসহ আনুষ্ঠানিক–অনানুষ্ঠানিক অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা হবে।