বৈষম্য নিরসনের দাবিতে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের এক ঘণ্টার ‘কলমবিরতি’

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনের সামনে বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার কর্মকর্তাদের কলমবিরতি। আজ মঙ্গলবারছবি: আরিফুর রহমান

উপসচিব পুলে কোটাপদ্ধতি বাতিল, নিজ নিজ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সচিব পদে দায়িত্ব দেওয়া এবং সব ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমান অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে এক ঘণ্টার ‘কলমবিরতি’ পালন করেছে ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’।

২৫টি ক্যাডারের সমন্বয়ে গঠিত পরিষদের কর্মকর্তারা আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নিজ নিজ দপ্তরের সামনে ‘কলমবিরতি’ কর্মসূচি পালন করেন। দাবি আদায় না হলে আগামী ৪ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিষদের সমন্বয়ক মফিজুর রহমান।

পদোন্নতি, পদায়নসহ বেশ কিছু দাবিতে গত ১ সেপ্টেম্বর ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ নামে একটি জোট গঠন করেন ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বাদ দেওয়া হয়। জোট গঠনের পর থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন কর্মকর্তারা। এর ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার ‘কলমবিরতি’ কর্মসূচি পালন করা হলো।

বৈষম্য নিরসন পরিষদের দাবি চারটি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এক. উপসচিব পুলে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা। বর্তমানে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নিয়োগ দেওয়া হয়। অবশ্য গত সপ্তাহে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ ও অন্যান্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ নিয়োগের সুপারিশ করে। এ প্রস্তাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

দ্বিতীয়ত, নিজ নিজ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ওই বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ দিতে হবে। এসব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত, বিসিএসে সব ক্যাডার কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে ন্যায্যতা ও সমতা নিশ্চিত করতে হবে। চতুর্থত, বিসিএসে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার হিসেবেই বহাল রাখতে হবে।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বিসিএসে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারভুক্ত না রেখে আলাদা করার সুপারিশ করেছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বেতার ভবনের সামনে বিসিএস (তথ্য) প্রকৌশল ও সাধারণ বেতার ক্যাডার কর্মকর্তাদের কলমবিরতি। আজ মঙ্গলবার
ছবি: প্রথম আলো

আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনের সামনে দেখা যায়, বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডারের কর্মকর্তারা ভবনের সামনে ‘কলমবিরতি’ পালন করছেন। এ সময় কর্মকর্তারা তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

পরিসংখ্যান ক্যাডারের কর্মকর্তা আবদুল কাদির মিয়া বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে। অথচ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বৈষম্য জিইয়ে রেখেছেন। তাঁরা প্রজাতন্ত্রের পদকে নিজেদের পদ মনে করেন।

আবদুল কাদির অভিযোগ করেন, ২০১৪-১৮ ও ২০২৪ সালের পাতানো নির্বাচনের রূপকার ছিলেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। বৈষম্যের রূপকার তাঁরা। নিজেদের রাজা ভেবে অন্যদের চাকর ভাবা থেকে তাঁদের বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বিসিএস পরিসংখ্যান ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা গাড়ি-সুবিধা পান। গাড়ি সংরক্ষণে মাসে ৫০ হাজার টাকা করে পান। অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা এসব সুবিধা পান না। কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা সমান করতে হবে।

বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বেতার ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিসিএস (তথ্য) প্রকৌশল বেতার কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি, বিসিএস (তথ্য) সাধারণ বেতার কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির ব্যানারে কর্মবিরতি পালন করছেন। তাঁদেরও দাবি, উপসচিব পদে কোনো কোটা থাকবে না।

আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ আজ মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কয়েক দিন আগে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ ও অন্যান্য ২৫টি ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস থেকে আলাদা করার সুপারিশ দিয়েছে। আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা ছাড়া এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পরিষদ ‘কলমবিরতি’ কর্মসূচি পালন করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সব অফিসে স্ব স্ব কর্মস্থলের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। আগামী ৪ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশের আয়োজন করা হবে। সেখান থেকে বড় কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।